কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক বাচ্চাদের জন্য কোভিডের গাইডলাইন্সের বদল করেছে। এর আগের গাইডলাইন্স তারা প্রকাশ করেছিল গত বছরের জুনে। ১৮ বছরের নীচে সকলের জন্য় এটি প্রযোজ্য়। নতুন এই গাইডলাইন্সে প্রবল সংক্রমণ না হলে, মোনোক্লোনাল অ্যান্টিবায়োটিক্স দিতে বারণ করা হয়েছে। এবং যাদের বয়স পাঁচের নীচে তাঁদের মাস্ক পরানো নিষেধ। আসুন সেই পরিবর্তিত গাইডলাইন্সের দিকে বিস্তারিত নজর দেওয়া যাক। শিশুদের জ্বর ঠান্ডা-লাগা নিয়ে বাবা-মায়েদের অনেকেই এখন বিভ্রান্ত। কোভিড হয়নি তো? চিন্তায় জেরবার তাঁরা। ফলে গাইডলাইন্সের গাইডেন্স অত্যন্ত জরুরি তাঁদের।
কী দেবেন, কী দেবেন না
কোভিড ভাইরাসের কাজ, সাধারণ ভাবে অ্যান্টিমাইক্রোবায়ালের কোনও ভূমিকা প্রাথমিক ভাবে নেই এর প্রতিরোধে। যদি না পরিস্থিতি অন্য রকম কিছু হয়। অ্যান্টিভাইরালেও লাগাম কষে বাঁধা হয়েছে গাইডলাইন্সে। ওষুধ নিয়ে বলা হয়েছে, রেমডেসিভির, মোলনুপিভির, ফ্যাভিপিরাভির, ফ্লুভোক্সামাইন এবং মোনোক্লোনাল অ্যান্টিবায়োটিক্স ১৮ বছরের নীচে কাউকে করোনা সংক্রমণে খাওয়ানোর দরকার নেই। তা হলে জ্বল এলে কী করবেন, প্রশ্ন আসতেই পারে। যা করা হয়ে থাকে, ডাক্তারের পরামর্শ মতো প্যারাসিটামল খাওয়াতে হবে তখন। সাধারণ ভাবে জ্বর একশো না ছুঁলে প্যারাসিটামল দেওয়া হয় না। সামান্য গা-রকম হলেই এই ওষুধটি খাইয়ে দেওয়া কোনও কাজের কথা নয়, এটা মনে রাখতে হবে। গলায় সংক্রমণ হলে কী করা উচিত, গাইডলাইন্স বলছে, একটু বড় বাচ্চাদের ক্ষেত্রে উষ্ণ গরম জলে গার্গল করতে হবে। জ্বরজারি হলে জল এবং তরল জাতীয় খাবারদাবার বেশি খাওয়াতে হবে। যাতে জলাভাব শরীরে না হয়, তাই এই সহজ পরামর্শ। খাওয়াতে হবে পুষ্টিকর খাবারদাবারও।
শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. উমেশ বৈদ্য বলছেন, মূল উপসর্গগুলি হল-- সর্দিকাশি, ঠান্ডা-লাগা, জ্বর, গলায় সংক্রমণ। কোনও শিশু যদি এমন কিছু নিয়ে আসেন চিকিৎসকের কাছে, তা হলে জেনে নিতে হবে বাড়ির কারওর কোভিড হয়েছে কি না। যদি হয়েও থাকে, তাও মৃদু উপসর্গে আরটি-পিসিআর টেস্ট করানোর দরকার নেই। যদি পরিস্থিতিতে ঘোরাল হয়, তখন ওই পরীক্ষার দরকার এবং প্রয়োজনে হাসপাতালেও ভর্তি করা দরকার।
মাস্ক
যে সব শিশুর বয়স পাঁচ বছরের নীচে, তাদের মাস্কের প্রয়োজন নেই। বিশেষজ্ঞরা বলছেন এমনই। কারণ, তাদের ঠিক মতো মাস্ক পরানো যায় না এবং সেটি পরলে শ্বাসপ্রশ্বাসের সমস্যাও হতে পারে। অনেক বাবামা একেবারে ছোটদেরও মাস্ক পরানোর জন্য ব্যস্ত হয়ে ওঠেন। সেই ব্যস্ততা এবং বাড়াবাড়ির কোনও প্রয়োজন নেই, মত বিশেষজ্ঞদের। ৬ থেকে ১১ বছর পর্যন্ত শিশুদেরও এ ব্যাপারে নিদারুণ চাপাচাপি করার দরকার নেই। দেখতে হবে, ঠিক মতো মাস্ক ওই শিশুটি পরতে পারছে কি না, তা ছাড়া মাস্ক পরানোয় প্রয়োজন বড়দের প্রত্যক্ষ নজরদারি। সেই কাজে হাত পরিস্কার করে ধুয়ে নিতে হবে, না হলে অ্যালকোহলে তৈরি স্যানিটাইজার দিয়ে জীবাণু-মুক্ত করতে হবে হাত দুটিকে।
এমআইএস-সি
মাল্টি সিস্টেম ইনফ্ল্যামেটরি সিন্ড্রোম বা এমআইএস-সি (Multi System Inflammatory Syndrome in Children= MIS-C)। নতুন ধরনের সমস্যা ছোটদের মধ্যে দেখা যাচ্ছে এখন। দেখা যাচ্ছে, জ্বর কমছে না। যার সঙ্গে সার্ভ-কোভ-টু-র সম্পর্কের কথা বলা হচ্ছে। যদি এমন উপসর্গ দেখা যায়, এবং ডাক্তার এমআইএস-সি বলেন, তা হলে সতর্ক হতে হবে।
আরও পড়ুন কোভিড-কালে ব্যাক্টেরিয়ার থেকেও সাবধান, সামান্য ফুসকুড়ি কাড়তে পারে প্রাণ, কী ভাবে?
কোভিড পরবর্তী দেখভাল
যে সব শিশুর মূদু উপসর্গ কিংবা যারা অ্যাসিমটোম্যাটিক বা উপসর্গহীন, তাদের নিয়ে বিশেষ কোনও চিন্তা নেই। কিন্তু যাদের মাঝারি এবং গুরুতর সংক্রমণ হয়েছিল, সেরে উঠলে বা হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাবার আগে অভিভাবকদের জেনে নিতে হবে কী করতে হবে। শিশুটির দেখভালের সুতো থেকে সাতকাহন বুঝে নিতে হবে চিকিৎসকের কাছ থেকে, নিখুঁত ভাবে। এ ব্যাপারে কোনও শিথিলতা বাঞ্ছনীয় নয়।
রক্ত জমাট প্রতিরোধী ওষুধ ও স্টেরয়েডস
রক্ত জমাটের প্রতিরোধকারী ওষুধ যদি দিতে হয়, তা হলে নতুন গাইডলাইন্সে সেটির প্রয়োগপদ্ধতি বদল করা হয়েছে। স্টেরয়েডস ব্যবহারে ১০ থেকে ১৪ দিনে ধীরে ধীরে তা কমানোর কথা বলা হয়েছে নির্দেশিকায়। তবে শারীরিক অবস্থা উন্নতির নিরিখে এটা করতে হবে। স্টেরয়েডস তখনই দেওয়ার যাবে, পরিস্থিতি যখন গুরুতর এবং অবশ্যই হাসপাতালে ভর্তি সেই শিশু। উপসর্গের পর তিন থেকে পাঁচ দিনের মধ্যে স্টেরয়েডস দেওয়ার কথা বলা হয়েছে নির্দেশিকায়।