'দ্য আনলফুল অ্যাক্টিভিটিজ প্রিভেনশন অ্যামেন্ডমেন্ট বিল' (ইউএপিএ) আদতে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে কাউকে 'সন্ত্রাসবাদী' ঘোষণা করার প্রক্রিয়া সম্বলিত একটি সন্ত্রাস-বিরোধী সংশোধনী প্রস্তাব। গত ২৪ জুলাই লোকসভায় এই সংশোধনী বিলটি পাশ হয়েছে। এই বিল বিরুদ্ধ মতের দমনে এবং নাগরিক স্বাধীনতা হরণে অপব্যবহৃত হতে পারে বলে সমালোচনায় সরব হয়েছিলেন বিরোধীরা। বিলটি রাজ্যসভাতেও পাশ হয়ে যায় ২ অগাস্ট। এবং পরিণত হয় আইনে।
ইউএপিএ বিল অনুযায়ী কাকে বলা হবে 'সন্ত্রাসবাদী'?
বিলে 'সন্ত্রাস' বা 'সন্ত্রাসবাদী'-র কোন সংজ্ঞা দেওয়া হয়নি। তবে বিলের ১৫ নম্বর ধারায় ব্যাখ্যা করা হয়েছে 'সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ'-কে। বিল অনুযায়ী, ভারতের একতা, অখণ্ডতা, সার্বভৌমত্ত্ব, সাধারণ নিরাপত্তা বা আর্থিক নিরাপত্তাকে সঙ্কটে ফেলার উদ্দেশ্য নিয়ে কোন কাজ, বা ভারতের বা বিদেশের যে কোন অংশের মানুষের মধ্যে আতঙ্ক এবং সন্ত্রাস ছড়ানোর উদ্দেশ্য নিয়ে করা কোন কাজ 'সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ' হিসেবে গণ্য হবে।
বিলটিতে উপরোক্ত কাজগুলিতে জড়িত কোন ব্যক্তিকে 'সন্ত্রাসবাদী' ঘোষণা করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারকে। বর্তমান আইনের ৪ এবং ৬ নম্বর ধারায় কোনো সংগঠনকে 'সন্ত্রাসবাদী' ঘোষণা করার প্রক্রিয়া নথিবদ্ধ রয়েছে। প্রস্তাবিত বিলটিতে এর পরিসর বাড়িয়ে ব্যক্তিবিশেষকেও এই ঘোষণার আওতায় আনা হয়েছে। বিলটি নিয়ে লোকসভায় বিতর্ক চলাকালীন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ এই পরিসর বাড়ানোর উপর গুরুত্ব দিয়ে বলেন, দেশ থেকে সন্ত্রাস নির্মূল করতে 'ব্যক্তি'-কেও ইউএপিএ আইনের আওতায় আনা জরুরি।
কাউকে 'সন্ত্রাসবাদী' ঘোষণা করার প্রক্রিয়াটা কী?
সরকারি বিজ্ঞপ্তি জারি করে কাউকে 'সন্ত্রাসবাদী' ঘোষণা করতে পারে সরকার এবং তালিকাভুক্ত করতে পারে বিলের সংশ্লিষ্ট অংশ বা 'শিডিউল'-এ। ঘোষণার আগে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে আত্মপক্ষ সমর্থনের কোনো সুযোগ দিতে বাধ্য থাকবে না সরকার।
আইনের প্রচলিত তত্ত্ব হল, দোষী সাব্যস্ত না হওয়া পর্যন্ত ধরে নিতে হবে, অভিযুক্ত নিরপরাধ। এই তত্ত্বেরই অনুসরণে বর্তমানে সন্ত্রাসের মামলায় অভিযুক্ত দোষী সাব্যস্ত হলে তবেই কাউকে 'সন্ত্রাসবাদী' তকমা দেওয়া হয়। দোষী প্রমাণিত হওয়ার আগে পর্যন্ত সন্দেহভাজনদের বলা হয় 'সন্ত্রাস-অভিযুক্ত'। প্রস্তাবিত বিলে কাউকে 'সন্ত্রাসবাদী' ঘোষণা করার বা 'সন্ত্রাস-অভিযুক্ত' তকমা দেওয়ার প্রামাণ্য মানদণ্ডের বিষয়টি স্পষ্ট নয়।
কোনো ব্যক্তিকে 'সন্ত্রাসবাদী' বলে ঘোষণা করার তাৎপর্য কী?
রাষ্ট্রপুঞ্জ যখন কাউকে 'আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী' বলে ঘোষণা করে, তখন তার সঙ্গে জড়িয়ে থাকে সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত হওয়া, নির্দিষ্ট জায়গায় ভ্রমণের উপর নিষেধাজ্ঞা জারির মতো বিষয়। ইউএপিএ-র প্রস্তাবিত সংশোধনী বিলে এই বিষয়গুলি নিয়ে কিছু বলা হয়নি। বলা হয়নি 'সন্ত্রাসবাদী' ঘোষণা করার সঙ্গে সঙ্গেই মামলা রুজু করে গ্রেফতার করার কথাও। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের আধিকারিকদের বক্তব্য, সংশোধনীটি পাশ হওয়ার পরেই বিলে অন্তর্ভুক্ত করা হবে এই প্রসঙ্গে প্রয়োজনীয় নির্দেশিকাগুলি।
প্রস্তাবিত বিলে সরকার কর্তৃক 'সন্ত্রাসবাদী' ঘোষিত কোন ব্যক্তি সরকারের সিদ্ধান্তের পুনর্বিবেচনার আবেদন জানাতে পারবেন। আবেদন জানানোর পদ্ধতি হবে সরকার-নির্ধারিত।
‘সন্ত্রাসবাদী' তালিকা থেকে নিজের নাম বাদ দেওয়ার আবেদন সরকার খারিজ করে দিলে সেই ব্যক্তি একমাসের মধ্যে নিজের আর্জি ফের পুনর্বিবেচনার দাবি জানাতে পারেন প্রস্তাবিত বিল অনুযায়ী।
এই পুনর্বিবেচনার জন্য হাইকোর্টের কোনও কর্মরত বা অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির নেতৃত্বে চার সদস্যের 'রিভিউ কমিটি' গঠনের কথা বলা হয়েছে বিলে। এই কমিটির উপর ক্ষমতা ন্যস্ত থাকবে প্রয়োজনে সরকারকে নির্দেশ দিয়ে আবেদনকারীর নাম 'সন্ত্রাসবাদী'-র তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার।
উপরোক্ত উপায়গুলি ছাড়াও 'সন্ত্রাসবাদী' তালিকাভুক্ত কোন ব্যক্তি সরকারের নির্দেশ চ্যালেঞ্জ করে আদালতেরও দ্বারস্থ হতে পারেন।
প্রস্তাবিত বিলটিতে আর কী কী গুরুত্বপূর্ণ বদলের কথা বলা হয়েছে?
বর্তমান ইউএপিএ আইন অনুযায়ী তদন্তকারি অফিসারকে এই মামলায় কোথাও তল্লাশি চালানো বা কিছু বাজেয়াপ্ত করার আগে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের পুলিশের ডিরেক্টর জেনারেলের অনুমতি নিতে হতো। প্রস্তাবিত সংশোধনী বিল অনুযায়ী, তদন্তকারি যদি এনআইএ-র অফিসার হন, তাহলে এই অনুমতি এনআইএ-র ডিরেক্টর জেনারেলের থেকে নিলেই হবে।
সংবিধান অনুযায়ী যেহেতু আইন-শৃঙ্খলা রাজ্যের বিষয়, তাই সিবিআই-এর মতো কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলিকে এই আইনে রুজু হওয়া মামলায় তদন্ত করতে রাজ্যের থেকে আগাম অনুমতি নিতে হবে।
বর্তমান ইউএপিএ আইন অনুযায়ী শুধুমাত্র এনআইএ-র ডেপুটি সুপারিটেন্ডেন্ট বা অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার পদমর্যাদার অফিসাররাই এই আইনে রুজু হওয়া মামলার তদন্ত করতে পারেন। প্রস্তাবিত বিলে এনআইএ-র ইন্সপেক্টর পদমর্যাদার অফিসারদেরও তদন্তের ক্ষমতা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।