ভারত বায়োটেকের রিকম্বিন্যান্ট নাকের করোনা টিকা স্বাস্থ্য মন্ত্রক অনুমোদন করেছে। মন্ত্রকের সেন্ট্রাল ড্রাগস স্ট্যান্ডার্ড কন্ট্রোল অর্গানাইজেশন তাতে ছাড়পত্র দিয়েছে। ১৮ বছর বা তার বেশি বয়সিরা জরুরি পরিস্থিতিতে এই টিকা নিতে পারবেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় একথা জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী মনসুখ মান্ডাভিয়া। এর অর্থ হল, নতুন করোনা ভাইরাস থেকে আক্রান্তদের রক্ষা করার পদ্ধতি বাড়ল।
নাকের করোনা টিকা কী?
ভ্যাকসিন নানাভাবে দেওয়া হয়। সাধারণ পদ্ধতি হল ইনজেকশনের যোগ্য শটগুলো পেশীতে (ইন্ট্রামাসকুলার) বা ত্বক এবং পেশীগুলির মধ্যে (সাবকুটেনিয়াস) টিস্যুতে দেওয়া হয়। এছাড়াও অন্যান্য পথ রয়েছে। বিশেষ করে শিশুদের জন্য কিছু ভ্যাকসিনে, যাতে ইনজেকশনের পরিবর্তে তরল দ্রবণ মুখে দেওয়া হয়। এছাড়াও ইন্ট্রানাসাল রুটে, ভ্যাকসিনটি নাসারন্ধ্রে স্প্রে করা হয় এবং শ্বাস নেওয়ার মাধ্যমে তা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে।
করোনভাইরাস সহ বিভিন্ন ভাইরাস, মিউকোসার মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে। নাক, মুখ, ফুসফুস এবং পরিপাকতন্ত্রের ভেজা, স্কুইশি টিস্যুগুলি — সেখানে কোষ এবং অণুগুলির ঢুকে ইমিউনিটিকে নষ্ট করে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, একটি ইন্ট্রানাসাল ভ্যাকসিন শরীরের ইমিউনিটি নষ্টের চেষ্টার সময় ভাইরাসের বিরুদ্ধে কাজ করতে পারে। ইন্ট্রামাসকুলার ভ্যাকসিনগুলো সাধারণত এই মিউকোসাল প্রতিরোধ করতে পারে না। কারণ, তারা সংক্রমণের জায়গায় ঝাঁকে ঝাঁকে শরীরের অন্য জায়গা থেকে সংহত হওয়া প্রতিরোধী কোষগুলোর ওপর নির্ভর করে।
নাকের করোনা টিকা কীভাবে কাজ করে?
উভয় ডেলিভারি রুটের ক্ষেত্রে, ভ্যাকসিন রক্তে একটি প্রতিক্রিয়া তৈরি করে। উদাহরণস্বরূপ, বি কোষগুলো ভাইরাসের সন্ধানে শরীরে ঘোরাঘুরি করে। আইজিজি নামে বিশেষভাবে শক্তিশালী রোগের বিরুদ্ধে যোদ্ধা কোষগুলো শরীরে অ্যান্টিবডিগুলোকে খুঁজে বের করবে। টি কোষগুলো হয় বি কোষগুলিকে অ্যান্টিবডি তৈরি করতে সাহায্য করবে। অথবা সংক্রামিত কোষগুলো খুঁজে বের করে তা ধ্বংস করে দেবে।
কিন্তু নাক বা মুখের মাধ্যমে ইনজেকশন দেওয়া ভ্যাকসিনগুলো মিউকোসাল টিস্যুগুলোর চারপাশে ঝুলে থাকা ইমিউন কোষগুলোকে সাহায্য করে। সেখানে থাকা বি কোষগুলি আইজিএ নামের আরেকটি অ্যান্টিবডি তৈরি করতে পারে। যা শ্বাসনালীর রোগজীবাণু ধ্বংস করতে মুখ্য ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও আশপাশে থাকা টি কোষগুলি এর মুখোমুখি হওয়া প্যাথোজেনগুলিকে মনে রাখে। যেখানে প্রথম মুখোমুখি হয়েছিল, সেখানেই সেগুলোকে খুঁজে বের করে।
আরও পড়ুন- ‘বিজেপির ধর্মান্ধতায় খণ্ডিত’ ভারত, জাতীয় পতাকার অন্তর্নিহিত অর্থ বোঝাতে পদযাত্রায় রাহুল অ্যান্ড কোং
নাক অথবা মুখের মাধ্যমে সরবরাহ করা ভ্যাকসিনের গুরুত্ব
এই ভ্যাকসিনগুলোর লক্ষ্য হল গণটিকা দেওয়ার সম্ভাব্য অসুবিধাগুলো কাটিয়ে ওঠা এবং সূচ এবং সিরিঞ্জের প্রয়োজনীয়তা দূর করার মাধ্যমে খরচ কমানো। বিশেষজ্ঞদের মতে, ইন্ট্রানাসাল ভ্যাকসিন টিকাব্যবস্থা পরিচালনার জন্য বিভিন্ন প্রশিক্ষিত কর্মীদের ওপর নির্ভরতা হ্রাস করবে।
হিলেম্যান ল্যাবরেটরিজের প্রাক্তন সিইও ডা. ডেভিন্ডার গিল এর আগে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেছিলেন, "ইন্ট্রানাসাল ভ্যাকসিনের প্রতি আকর্ষণের প্রধান কারণ হল, এটি ব্যবহার করা খুব সহজ। আপনি যদি এটি আপনার নাকে ছিটিয়ে দিন, তবেই এটা কার্যকর হয়ে যাবে। এর ফলে মহামারী বা প্রাদুর্ভাবের মধ্যে এই ভ্যাকসিন নিজেরাই নিতে পারবেন আক্রান্ত।"
তবে, ড. গগনদীপ কাঙের মত ভ্যাকসিন বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করেন যে একটি নাসিকা ভ্যাকসিনের নিরাপত্তা আরও বাড়ানো উচিত। যে কেউ, যখন তখন যাতে এই ভ্যাকসিন ব্যবহার করতে না-পারে, তা নিশ্চিত করা উচিত। বিশেষজ্ঞদের একাংশের আবার মত, এই ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা নিয়ে এখনও অনেকের সন্দেহ রয়েছে। তাই, এই ভ্যাকসিন ব্যাপকহারে ব্যবহারের চেষ্টা এখনও পর্যন্ত সফল হয়নি।
Read full story in English