বছরভর প্রতিটি মানুষ বিপুল পরিমাণ শারীরিক বর্জ্য উত্পাদন করে। প্রায় ৫০০ কিলোগ্রাম (১,১১০ পাউন্ডের বেশি) প্রস্রাব এবং ৫০ কিলোগ্রাম মলত্যাগ করে। আর, ৮০০ কোটি মানুষের এই গড়ে মল ও মূত্রত্যাগের ফলে একটা মলের পাহাড় তৈরি হতে পারে। এমনকী, গড়ে উঠতে পারে মূত্রের নদী। কিন্তু, বাস্তবে সেসব হয় না। বরং, বাস্তবে সেই বিপুল মল ও মূত্র অদৃশ্য হয়ে যায়। বিশ্বজুড়ে নানা প্রকল্পের মাধ্যমে বর্তমানে এই মল ও মূত্র ব্যবহার করে পরিবর্তন আনার চেষ্টা চলছে।
এমনই একটি প্রকল্প তৈরি হয়েছে ফ্রান্সের রাজধানী শহর প্যারিসের ঠিক বাইরে। যেখানে ল্যাবরেটর ইও এনভায়রনমেন্ট এট সিস্টেমেস আরবেইনস (লিসু) সংস্থার গবেষকরা গম ফসলে প্রস্রাব-ভিত্তিক সার পরীক্ষার ইতিবাচক ফলাফল খুঁজে পেয়েছেন। এই কৃত্রিম সার ব্যবহারে ভালো ফসল উৎপাদিত হচ্ছে। পাশাপাশি, তা মাটিকেও উর্বর করছে। সার হিসেবে মল বা মূত্রের ব্যবহার কিন্তু নতুন কিছু না। পুরনো যুগের মানুষ সেসব জানত। প্রাচীন সভ্যতাগুলো সেই সব কারণেই শারীরিক বর্জ্য ব্যবহারে জোরও দিয়েছিল। প্রাচীন সভ্যতার মানুষজন বুঝতে পেরেছিলেন যে, আমাদের মলমূত্র- নাইট্রোজেন, ফসফরাস এবং পটাসিয়াম সরবরাহ করে উদ্ভিদের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
আরও পড়ুন- কর্ণাটকে কংগ্রেস জয়ী, আর কোন রাজ্য আছে হাতের হাতে?
তাঁর বই, 'দ্য আদার ডার্ক ম্যাটার'-এ বিজ্ঞান সাংবাদিক লিনা জেলডোভিচ ১,৬০০-১,৮০০ খ্রিস্টাব্দে জাপানের জীবন সম্পর্কে লিখেছেন। তিনি দাবি করেছেন, সেই সময়ে জাপানে শিমোগো বা 'রাতের মাটি'র ব্যবসা করত। যা কম উর্বর পাথুরে ভূখণ্ডে ছড়িয়ে সার তৈরি করা হত। চিনেও ধনী ব্যক্তিরা জমিতে বর্জ্য ব্যবহার করে উন্নত ফসল উৎপাদন করত। আবার মেসোআমেরিকায় অ্যাজটেক যুগের ভাসমান চিনাম্পা বাগানগুলোয় সার হিসেবে মল ব্যবহৃত হত। ১৯ শতক থেকে এই ব্যাপারে পরিবর্তন আসতে শুরু করে। লিনা জানিয়েছেন, সেই সময় আধুনিক নর্দমা এবং সিন্থেটিক সারের ব্যবহার এই মল ও মূত্রকে সার হিসেবে ব্যবহার ক্রমশ বন্ধ করেছে।