দক্ষিণ আফ্রিকার গুহায় আমাদের পূর্বজদের যে ফসিল মিলেছিল, তাতে নয়া পদ্ধতির পরীক্ষায় এসেছে নয়া মোড়। বানর থেকে মানুষ হয়ে ওঠার কাহিনিতে একটা অধ্যায় এর ফলে বেড়ে গেল। আমাদের পূর্বজদের প্রজাতিটি হেঁটে হেঁটে আরও পিছনে পৌঁছে গিয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকায় মানুষের উৎপত্তি-কথায় এবার যেতে হবে আরও ১০ লক্ষ বছর পিছিয়ে। নতুন এই গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে প্রসেডিংস অফ দ্য ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সেস জার্নালের ২৭ জুনের ইস্যুতে।
এই গবেষণাপত্রের মূল লেখক ড্যারিল গ্র্যাঞ্জার। যিনি ইন্ডিয়ানার পারডু বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ অফ সায়েন্সেসের অধ্যাপক। কিন্তু যে ভাবে নতুন টেকনিকের এই গবেষণায় পিছিয়ে যাচ্ছে আমাদের পূর্বজদের পদচারণার তারিখ, তাতে গোটা এই অগ্রগতিতে কাহিনিটা কী দাঁড়িয়েছে? এ নিয়ে একটু বিস্তারিত না বললে বোঝা যাবে না।
পিছিয়ে গেল পূর্বজরা
দক্ষিণ আফ্রিকার স্টার্কফন্টেইনের গুহায় অস্ট্রালোপিথেকাসের ফসিল পাওয়া গিয়েছিল, তাতেই নতুন ভাবে গবেষণার আলো ফেলা হয়েছে। মানে নতুন পদ্ধতির প্রয়োগ করা হয়েছে। অস্ট্রালোপিথেকাস মানে হল southern ape বা দক্ষিণের বানর। এরা হল হোমিনিন গোত্রের, আধুনিক মানুষের একেবারে শুরুর দিকের এরা, যারা এখন বিলুপ্ত।
তাদের এই পৃথিবীজীবন ছিল মোটামুটি ৪.৪ মিলিয়ন থেকে ১.৪ বছরের মধ্যে। আমাদের বর্তমান মানুষের চেয়েও যে সময়পরিধি বড়। এই জাতীয়দের ফসিল পাওয়া গিয়েছে পূর্ব, উত্তর, মধ্য এবং দক্ষিণ আফ্রিকায়। এদের উচ্চতা ৩ ফুট ৯ ইঞ্চি থেকে ৪ ফুট ১১ ইঞ্চি। ওজন ৩০ থেকে ৫০ কিলোগ্রাম। এদের পুরুষের ওজন মেয়েদের চেয়ে ছিল দ্বিগুণ।
আরও পড়ুন- একের পর এক নয়া প্রজাতির সন্ধান, আরও একটা ঢেউয়ের আশঙ্কা বাড়ছে?
স্টার্কফন্টেইনের গুহাটা কী?
ক্রেডেল অফ হিউম্যানকাইন্ড। যা ৪৭ হাজার হেক্টর জমিতে বিস্তৃত। ইউনেসকোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট। জোহানেসবার্গ থেকে ৪০ কিলোমিটার উত্তরপূর্বে। চুনাপাথরের গুহা পর পর। হোমিনিনসের বহু জীবাশ্ম এখানে পাওয়া গিয়েছে। এই অঞ্চলে রয়েছে স্টার্কফন্টেইন গুহা। অস্ট্রালোপিথেকাস ফসিলের একগুচ্ছ মিলেছে এখানেও। যার মধ্যে একটির নাম দেওয়া হয়েছে, মিসেস প্লেস। এর খুলিটি অনেকটাই সম্পূর্ণ। পাওয়া গিয়েছিল ১৯৪৭ সালে।
নতুন পদ্ধতিতে গবেষণা চালিয়ে দেখা যাচ্ছে এই মিসেস প্লেসের (যাকে লিটল ফুটও বলা হয়) পৃথিবীতে হাঁটার সময়টা ৩.৬৭ মিলিয়ন বছর আগে। আগে বিজ্ঞানীদের সিদ্ধান্ত ছিল এই সব জীবাশ্ম মোটামুটি ২ থেকে ২.৫ মিলিয়ন বছর পুরনো। এতে করে এটা হচ্ছে যে, স্টার্কফন্টেইন গুহা আমাদের নিয়ে যাচ্ছে ৩.৪ থেকে ৩.৭ মিলিয়ন বছর আগে, মানে অস্ট্রালোপিথেকাস যুগের শুরুর কাছাকাছি, আগে জীবশ্মের বয়স অনুযায়ী তা ছিল ওই যুগের শেষের কাছাকাছি।
লুসিকেও ছাড়িয়ে গিয়েছে
পূর্ব আফ্রিকার ইথিওপিয়ার লুসির কথা অনেকেই হয়তো শুনেছেন। যাকে দিনকিনিশও (Dinkinesh) বলা হয়। হোমিনিনের প্রথম দিকে এর আবির্ভাব ঘটেছিল ধরা হয়। ৩.২ মিলিয়ন বছর পুরনো সে। নয়া অগ্রগতি থেকে দেখা যাচ্ছে, মিসেস প্লেস লুসিকেও পিছনে ফেলে দিয়েছে বেশ খানিকটা। আর এর ফলে, দক্ষিণ আফ্রিকার অস্ট্রালোপিথেকাস পূর্ব আফ্রিকার হোমিনিনদের বংশধর মোটেই নয় আর, তারা দুই সমানবয়সী, কিংবা স্টার্কফন্টেইনের গুহার পূর্বজদের বয়স বেশিরই দিকে।
Read full story in English