Hundreds of Muslims embarking on Hajj: গত সপ্তাহে মক্কায় তাপমাত্রা ছিল ৫১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যার জেরে সৌদি আরবের সেই ভয়ংকর গরমে শত শত হজযাত্রীর মৃত্যু হয়েছে।
হজ কী?
হজের আক্ষরিক অর্থ, 'একটি স্থানের উদ্দেশ্যে যাত্রা করা।' হজ হল ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের একটি। প্রত্যেক মুসলমানের জীবনে অন্তত একবার তীর্থযাত্রা করার কথা ইসলামে বলা আছে। কোরান অনুসারে, হজ প্রায় ৪,০০০ বছর আগে হযরত ইব্রাহিমের (জুডিও-খ্রিস্টান ধর্মগ্রন্থে আব্রাহাম) সময় থেকে শুরু হয়েছিল। এই তীর্থযাত্রার মধ্যে রয়েছে মক্কা এবং তার আশেপাশে পাঁচ বা ছয় দিনের একটি ধারাবাহিক অনুষ্ঠান। যার মধ্যে রয়েছে কাবার একাধিক প্রদক্ষিণ। সাফা এবং মারওয়া পাহাড়ের মধ্যবর্তী অঞ্চলে আচার-অনুষ্ঠান। আরাফাত পর্বতে ওঠা এবং প্রার্থনা করা। কারণ, সেখানে নবি মুহম্মদ তাঁর চূড়ান্ত খুতবা প্রদান করেছিলেন। এর পাশাপাশি রয়েছে, মিনা উপত্যকায় শয়তানের উদ্দেশ্যে প্রতীকী পাথর নিক্ষেপ। এই তীর্থযাত্রা ইসলামিক ক্যালেন্ডারের শেষ মাস ধু আল-হিজ্জাহ এর ৮ থেকে ১৩ তারিখের মধ্যে হয়। যেহেতু ইসলামিক ক্যালেন্ডারের চান্দ্র বছর। তা সৌর গ্রেগরিয়ান বছরের চেয়ে ১১ দিন ছোট। তাই, প্রতিটি গ্রেগরিয়ান বছরে হজ আগের বছরের তুলনায় ১০ বা ১১ দিন আগে শুরু হয়। এবছর ১৪ থেকে ১৯ জুন হজ অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
হজ সংখ্যা কী?
সৌদি আরবের হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয় হজযাত্রার সুবিধার দায়িত্বে রয়েছে। বছরের পর বছর ধরে, হজযাত্রীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায়, সৌদি কর্তৃপক্ষ পরিকাঠামো উন্নত করতে বিলিয়নের পর বিলিয়ন ডলার ব্যয় করছে। তা সত্ত্বেও, অল্প সময়ের মধ্যে এক জায়গায় অসংখ্য তীর্থযাত্রীকে জায়গা দেওয়া দুঃসাধ্য হয়ে উঠছে। এই কারণেই প্রতিবছর, সৌদি সরকার দেশভিত্তিক হজযাত্রীর সংখ্যা ঠিক করে দিচ্ছে। যাতে, তীর্থযাত্রীদের মোট সংখ্যা ঠিক করা যায়। এই সংখ্যাটা কোনও একটি দেশে মোট মুসলমান কতজন আছেন, তার ওপর ভিত্তি করে ঠিক হয়। দেশগুলো এমনিতে চায় যাতে সংখ্যাটা বেশি রাখা হয়। কিন্তু, সেটা সৌদি আরবের ওপর নির্ভর করে। এবছরই যেমন সৌদি আরব ১.৭৫ লক্ষ ভারতীয়কে তীর্থযাত্রা করার অনুমতি দিয়েছে। এর মধ্যে ১.৪ লক্ষ ভারতীয় সরকারি হজ কমিটির মাধ্যমে তীর্থযাত্রায় গেছে। বাকিরা গেছেন ব্যয়বহুল বেসরকারি উদ্যোক্তাদের মাধ্যমে। হজ কমিটি অফ ইন্ডিয়া (HCoI) তাদের নথিবদ্ধ মুসলিম জনসংখ্যার ভিত্তিতে বিভিন্ন রাজ্যকে হজযাত্রার সুযোগ দেয়। সব মিলিয়ে বিশ্বব্যাপী সৌদিরা মোট ১৮ কোটি হজযাত্রীকে অংশগ্রহণের সুযোগ দিয়েছে।
এ বছর কতজন হজযাত্রী মারা গেছেন?
এবারের হজে শত শত হজযাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। শনিবার থেকে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুসারে নিহতদের বেশিরভাগই, ৫৩০ জন মিশর থেকে এসেছেন। সেখান থেকে প্রচুর সংখ্যক তীর্থযাত্রী পর্যটক ভিসায় হজের জন্য এবার সৌদি আরবে গিয়েছেন। সৌদি সরকার অবশ্য এভাবে হজ করতে যাওয়াকে অবৈধ বলেই মনে করে। কারণ, এতে তাদের হজের জন্য ব্যবস্থাপনা ধাক্কা খায়। হজযাত্রা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে। হজযাত্রীরা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত তাঁবুর মত সরকারিভাবে হজযাত্রার সুবিধা পান না। জেড্ডায় একজন ভারতীয় আধিকারিক এই প্রসঙ্গে বলেছেন, যাঁরা মারা গিয়েছেন, তাঁদের বেশিরভাগই পর্যটক ভিসায় সৌদি আরবে এসেছিলেন। তাঁদের সঙ্গে কেবল একটি মাদুর এবং একটি ছাতা ছিল। তিনি বলেন, 'তাঁরা তাঁবু ছাড়া রাস্তায় ঘুমোতে বাধ্য হয়েছিলেন। সেই কারণেই তাঁদের মৃত্যুর সম্ভাবনা বেড়ে যায়।'
এবছর হজযাত্রায় কতজন ভারতীয় মারা গেছেন?
বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়ালের মতে, এবছর হজযাত্রার সময় ৯৮ জন ভারতীয় মারা যান। জয়সওয়াল বলেছিলেন, 'স্বাভাবিক অসুস্থতা, প্রাকৃতিক কারণ, দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতা এবং বার্ধক্যের কারণে এই সব মৃত্যু হয়েছে। গত বছর, হজে মারা যাওয়া ভারতীয়র সংখ্যা ছিল ১৮৭ জন। আমরা শুনেছি যে এবার খুব গরম ছিল। আরাফাতের দিনে যে হাজিরা সেখানে গিয়েছিলেন, তাঁরা তাপপ্রবাহে ক্ষতিগ্রস্থ হন। ভারত বাদে অন্য দেশের মানুষজন বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। আমাদের দেশ থেকে আরাফাতের দিন মাত্র ছয় জন মারা গেছেন।' জয়সওয়াল ছয় জন বললেও জেড্ডায় একজন ভারতীয় আধিকারিক দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেছেন, প্রচণ্ড গরমের জন্য দুই থেকে তিনজন ভারতীয় মারা গেছেন।
ভারত সরকার হজযাত্রীদের কী সাহায্য করছে?
জেড্ডায় ভারত সরকারের একটি হজ মিশন আছে। সেখানে একটি মেডিকেল টিম, হাসপাতাল, অ্যাম্বুল্যান্স এবং ভারতীয় নাগরিকদের জন্য চিকিৎসার ব্যবস্থা করছে। গোটাটাই ভারতীয় আধিকারিকদের তত্ত্বাবধানে চলছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, এবছর ভারত থেকে ৬০ বছরের বেশি বয়সি প্রায় ৪০ হাজার মানুষ হজ করেছেন। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য সচিব অপূর্ব চন্দ্র বলেছেন যে এবছর 'কঠিন আবহাওয়া'র জন্য হজযাত্রা যাত্রীদের কাছে আরও প্রতিকূল হয়ে উঠেছে। এই পরিস্থিতিতে ২৪ ঘণ্টা পরিষেবার প্রয়োজন হবে। এই পরিস্থিতিতে একটি লাইভ পোর্টাল তৈরি করা হয়েছে। সেখানে চিকিৎসা সেবা চাওয়া তীর্থযাত্রীদের রিয়েল টাইম ডেটা দেখানো হচ্ছে। তাঁরা কী সেবা চাইছেন, কেন চাইছেন কী সেবা দেওয়া হচ্ছে, তা বিস্তারিত জানানো হচ্ছে।
আরও পড়ুন- ‘যোগভূমি কাশ্মীর!’ কীভাবে ভূস্বর্গের সঙ্গে ভারতীয় ঐতিহ্য ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে?
হজের সময় মৃতদেহের কী হয়?
হজের সময় কেউ মারা গেলে, সেই দেশের প্রতিনিধিকে সৌদি আরবের স্থানীয় হাসপাতাল বা মর্গ খবর দেয়। তারপর, যে দেশের বাসিন্দা, সেই দেশের দূতাবাস ওই ব্যক্তির পরিচয় নিশ্চিত করে। সৌদি আরবে মৃতের দেহ কবর দেওয়ার জন্য মৃতের পরিবারের কাছ থেকে একটি অনুমতিপত্র (এনওসি) চাওয়া হয়। বেশিরভাগ পরিবার সৌদি আরবে কবর দেওয়ার অনুমতি দেয়। মৃতদের জন্য সঠিকভাবে জায়গা চিহ্নিত করে দেহ কবর দেওয়া হয়।