কোনও যুদ্ধই এমনি এমনি শুরু হয় না। বৃষ্টির আগে যেমন একটি নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মেঘ ঘনিয়ে ওঠে, ঠিক তেমনই হয় যুদ্ধেও। কিন্তু, আলোচনা অনেক সময় যুদ্ধ থামিয়ে রাখে, আবার আলোচনা যুদ্ধ বেধে যাওয়ার পরও তা থামায়। যারা যুদ্ধ বাধায়, তাদের সে সম্পর্কে অনেক যুক্তি থাকে, কিন্তু ইতিহাস তাদের ক্ষমা করে না। কালো অক্ষরে তাঁদের নাম লেখা হয়ে যায় ইতিহাসের পাতায়। যেমন ইটলারের নাম লেখা রয়েছে, যেমন মুসোলিনির নাম, সেই তালিকায় কি ভ্লাদিমির পুতিন থাকবে?
স্ট্যালিনের যাবতীয় রক্তপাত, ইতিহাসের সরণিতে যার একটাই ক্ষমা-- স্ট্যালিনের হাতে হিটলারের পরাজয়। কিন্তু স্ট্যালিনের দেশ রাশিয়া কি নতুন একটা বিশ্বযুদ্ধের দায় নিয়ে বেড়াবে? আপাতত, দুই দেশ আলোচনায় মোটামুটি রাজি, এটা স্বস্তির। রাশিয়া বলেছে, ইউক্রেন অস্ত্র নামিয়ে রাখলে তারা আলোচনা করবে। ইউক্রেন বলেছে, রাশিয়াকে আলোচনার রাস্তা খুলতে হবে। জানা যাচ্ছে, দুই দেশ আলোচনার স্থান-কাল নিয়ে কথা চালাচালি করছে। তাতেই রুপোলি রেখাটা দেখা যাচ্ছে। দু'দেশের যুদ্ধে যে তুমুল অস্থিরতা বাজারে, এই খবরে সামান্য হলেও সুগন্ধি হাওয়া সেখানে।
শুক্রবার ওয়াল স্ট্রিটে দেখা গিয়েছে বৃদ্ধির সূচক। ডাও জোন্স ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যাভারেজ বেড়েছে ৫৩.৩৯ পয়েন্ট। অর্থ্যাৎ ০.১৬ শতাংশ। এস অ্যান্ড পি বেড়েছে ৯.৬৮ পয়েন্ট (০.২৩ শতাংশ), ন্যাসডাক কম্পোজিট বেড়েছে ১১.৬৭ পয়েন্ট (০.০৯ শতাংশ)। আমাদের সেনসেক্স ও নিফটিতেও ভাল পরিস্থিতি যেন। দু'দিনের নিম্নগতির পর, শুক্রবার দু'টি সূচকই দুই শতাংশ করে বেড়েছে। কিন্তু এই অগ্রগতি বজায় থাকবে, নাকি মাথা নোয়ানোর পথেই ফিরে যাবে শেয়ার বাজার, সেটা এখন যুদ্ধের গতিপ্রকৃতির ওপর নির্ভর করছে অনেকটা। সেই সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে রয়েছে তেলের দামের হালচাল।
ভারতের বাজারের পরিস্থিতিটা কী?
সেনসেক্স ২.৪ শতাংশ বেড়েছে শুক্রবার, পয়েন্টের হিসেবে ১,৩২৮.৬১। পৌঁছেছে ৫৫,৮৫৮.৫২ পয়েন্টে। নিফটি বেড়েছে ৪১০.৪০ পয়েন্ট, পৌঁছেছে ১৬,৬৫৮.৪০-য়। নিফটিতে কোল ইন্ডিয়া, টাটা মোটর্স, টাটা স্টিল, আদানি পোর্ট এবং ইন্দাসইন্দ ব্যাংক সবচেয়ে বেশি বেড়েছে। সবচেয়ে ধাক্কা খেয়েছে ব্রিটানিয়া ইন্ডাস্ট্রি, নেসলে ইন্ডিয়া এবং হিন্দুস্তান লিভার। সেনসেক্সে টাটা স্টিল টপ গেনার। তার পর এসেছে ইন্দাসইন্দ ব্যাংক, বাজাজ অ্যালায়েন্স, এনটিপিসি, টেক মহীন্দ্রা, কোটাক মহীন্দ্রা ব্যাংক, অ্যাক্সিস ব্যাংক, টাটা কনসালটেন্সি সার্ভিসেস এবং বাজাজ ফিনসার্ভ। উলটো দিকে নেসলে ইন্ডিয়া এবং হিন্দুস্তান ইউনিলিভারের শেয়ার ধাক্কা খেয়েছে সবচেয়ে বেশি।
বিনিয়োগকারীদের কী করণীয়?
বাজারে কখন কী ঘটে যায়, তা নিয়ে চরম অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। বিনিয়োগকারীরা কী করবেন, সেই প্রশ্ন উঠছে। দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্পগুলিতে বিনিয়োগে কোনও সমস্যা নেই বলেই মনে করছেন ফান্ড ম্যানেজারদের অনেকে। সেখানে এসআইপি চালিয়ে যেতেই পারেন, কোনও ছেদ নিষ্প্রয়োজন। ফান্ড ম্যানেজারদের অনেকের বক্তব্য, বিনিয়োগকারীদের উচিত পরিস্থিতির দিকে নজর রেখে চলা। সেই কোম্পানিতেই বিনিয়োগ করা উচিত, যার শেয়ারের মূল্য যথাযথ রয়েছে, মোটামুটি স্টেডি, এবং লাভের সম্ভাবনা ভাল। অনেকে মনে করতেই পারেন যে, নেমে যাওয়াই ভাল। কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করা উচিত। তবে, পা বাড়াতে হবে ভেবেচিন্তে।
আশঙ্কায় নজরদারি
যদি রাশিয়ার সঙ্গে ইউক্রেনের দ্বন্দ্ব বেড়ে যায়, তা হলে তেলের দাম বাড়বে। রাশিয়া বৃহৎ তেল উৎপাদনকারী দেশ। প্রাকৃতিক গ্যাস রফতানিতে এক নম্বর তারা। ভূগর্ভস্থ কয়লার নিরিখে তারা দ্বিতীয়। ফলে যুদ্ধ বাড়লে এই সব ঘেঁটে যাবে। সাপ্লাই লাইনের দফারফা হবে। এনার্জি ক্ষেত্রেও দাম আরও বাড়বে। পড়বে শেয়ারের দাম। তার ওপর আসতে চলেছে মার্চে আমেরিকার ফেডেরাল রিজার্ভের সম্ভাব্য সুদ বৃদ্ধির ধাক্কা। কোভিড কাটিয়ে অর্থনীতিতে যখন সুন্দর সুর বেজে উঠবে বলে আশায় ছিলাম আমরা, তখন এসব কোনও ভাবেই কাম্য ছিল না। কিন্তু মানুষ ভাবে এক, আর হয় আরেক। অর্থনীতির ঈশ্বর যেন উপর থেকে মুচকি হাসছেন।
Read story in English