Advertisment

Explained: কী এই তোষাখানা মামলা, যাতে ইমরানের ৩ বছর কারাদণ্ড হল?

ইমরানের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসে মদত দেওয়ার অভিযোগও দায়ের হয়েছে।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Imran Khan

পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান।

পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে শনিবার (৫ আগস্ট) বিকেলে লাহোরে তাঁর জামান পার্কের বাসভবন থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ইসলামাবাদের এক আদালত তাঁকে তোষাখানা মামলায় 'দুর্নীতি'তে দোষী সাব্যস্ত করার পরেই ঘটনাটি ঘটেছে। পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, তোষাখানা উপহারের বিবরণ গোপন করার জন্য আদালত ইমরানকে তিন বছরের কারাদণ্ড এবং একলক্ষ পাকিস্তানি অর্থ জরিমানা করেছে। অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ হুমায়ুন দিলাওয়ার বলেছেন, 'ইমরান খান ইচ্ছাকৃতভাবে ইসিপিতে ( তোষাখানা উপহারের) জাল বিবরণ জমা দিয়েছেন। তাই, দুর্নীতির জন্য দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন।'

Advertisment

পাকিস্তানের নির্বাচনী আইনের ১৭৪ ধারায় প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে সাজা দেওয়া হয়েছে। এই মামলায় বিচারক ইমরানকে সর্বোচ্চ শাস্তি দিয়েছেন। তাঁর দোষী সাব্যস্ত হওয়ার ফলে নভেম্বরে অনুষ্ঠিত হতে চলা পাকিস্তানের আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে ইমরান খানের অংশগ্রহণের সম্ভাবনা প্রায় শেষ হয়ে গেছে। এই পরিস্থিতিতে এক বিবৃতিতে খানের রাজনৈতিক দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) জানিয়েছে যে তারা ইতিমধ্যেই জেলা আদালতের মামলা রায়ের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেছে।

তোষাখানা মামলা কী?

তোষাখানা বিতর্কটি ২০২২ সালের আগস্টে সামনে এসেছিল। সেই সময় জোট সরকার পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন)-এর নেতৃত্বে ইমরানের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেছিল। পিএমএল-এন অভিযোগ করেছিল যে ইমরান তোষাখানাকে দেওয়া উপহারের তথ্য প্রকাশ করেননি। কিছু উপহার 'অবৈধ'ভাবে বিক্রয় করে তিনি আয় করেছেন।

১৯৭৪ সালে প্রতিষ্ঠিত তোষাখানা হল পাকিস্তানের মন্ত্রীপরিষদ বিভাগের প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণের অধীনস্ত একটি বিভাগ। যা সরকারি কর্তাদের দ্বারা প্রাপ্ত উপহার এবং অন্যান্য দামি জিনিসপত্র সংরক্ষণ করে। এর নিয়ম অনুসারে, আধিকারিকদের প্রাপ্ত উপহার এবং এই জাতীয় অন্যান্য সামগ্রীর সম্পর্কে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে জানানো বাধ্যতামূলক।

যাইহোক, ইমরান যখন ২০১৮ সালে পাকিস্তানের ক্ষমতায় আসেন, তখন তিনি তাঁর অফিসে থাকাকালীন সময়ে প্রাপ্ত অনেক উপহারের বিবরণ প্রকাশ করতে বাধা দিয়েছিলেন। সেই সময় ইমরান বলেছিলেন যে এটি অন্যান্য দেশের সঙ্গে পাকিস্তান ও তাঁর সম্পর্ককে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করবে।

পরবর্তীকালে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশনকে (ইসিপি) একটি চিঠি লিখেছিলেন এবং কমপক্ষে চারটি এই জাতীয় উপহার বিক্রি করার কথা স্বীকার করেছিলেন। তবে সঙ্গে তিনি এও বলেছিলেন যে তিনি ওই সব জিনিসের মূল্যের শতাংশ দিয়ে সরকারেরর থেকে সেগুলো কিনেছিলেন। এর মধ্যে রয়েছে সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্সের উপহার দেওয়া একটি গ্রাফ ঘড়ি, রোলেক্স ঘড়ি, দামি কাফলিঙ্ক, একটি মূল্যবান কলম এবং একটি আংটি।

মামলার বিষয়ে ইসিপি কী বলল?

ইমরানের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের প্রায় দুই মাস পরে, পাকিস্তান নির্বাচন কমিশন জানায় যে ইমরানের ওই বিক্রি অবৈধ ছিল না, তিনি ওই আইটেমগুলোর জন্য অর্থ দিয়েছিলেন, এসব মিথ্যা দাবি। মূল কথা হল ইমরান খান অনৈতিক আচরণ করেছেন। তিনি মিথ্যা দাবি করে সকলকে বিভ্রান্ত করেছিলেন। ফলস্বরূপ, পাকিস্তানের শীর্ষ নির্বাচন সংস্থা ইমরানকে পাঁচ বছরের জন্য সরকারি পদে থাকতে বাধা দেয়।

তার রায়ে ইসিপি জানায়, 'আমরা মনে করছি যে উত্তরদাতা নির্বাচন আইন ২০১৭-এর ১৩৭, ১৬৭ এবং ১৭৩ ধারা-সহ পাকিস্তানের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৬৩(১)(পি)-এর অধীনে পাকিস্তানের প্রতিনিধি পদে থাকার ক্ষেত্রে অযোগ্য হয়ে পড়েছেন। ফলে তিনি পাকিস্তানের ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির সদস্য হওয়ার যোগ্যতা হারিয়েছেন। আর, সেই অনুযায়ী তাঁর আসনটিও খালি হয়ে গিয়েছে।'

আরও পড়ুন- লক্ষ্য লোকসভায় ৩৫ আসন, সাংগঠনিক জেলার সভাপতিদের বদলাল রাজ্য বিজেপি

ইমরানকে অযোগ্য ঘোষণার পর কী হল?

ইসিপির সিদ্ধান্ত ঘোষণার পরপরই পিটিআই কর্মীদের নেতৃত্বে দেশব্যাপী নির্বাচনী সংস্থার কার্যালয়ের সামনে বিশাল বিক্ষোভ শুরু হয়। এই বিক্ষোভ চলাকালীন ভাঙচুরের একাধিক ঘটনা ঘটেছে এবং পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ হয়েছে। তখন ইমরানের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদের একটি মামলা নথিভুক্ত করা হয়। ইসিপির তরফে অভিযোগ জানানো হয় যে তোষাখানা মামলায় পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীকে অযোগ্য ঘোষণা করার পর পিটিআই নেতৃত্ব হিংসাত্মক বিক্ষোভকে উৎসাহিত করেছিলেন।

Court Order pakistan imran khan
Advertisment