গত ২৯ ডিসেম্বর ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে একটি খবর প্রকাশিত হয়। সেখানে দেখা যায়, মহারাষ্ট্রের মালেগাঁও, কলকাতা, গুজরাটের সুরাট ও মোদাসায় বার্থ সার্টিফিকেটের জন্য আবেদনের সংখ্যা বহুল পরিমাণে বেড়ে গিয়েছে।
এ বছর অগাস্টে মালেগাঁও মিউনিসিপ্যালিটিতে ২০০০ বার্থ সার্টিফিকেটের জন্য আবেদনপত্র জমা পড়েছিল। সেপ্টেম্বর মাসে, সে সংখ্যা বেড়ে হয় ১২ হাজার, অক্টোবরে, ১২, ৫০০, নভেম্বরে ১২৮০০। ডিসেম্বর মাসে ২৬ তারিখ পর্যন্ত সেখানে মোট আবেদনপত্র জমা পড়েছে ১৩ হাজার।
আসামের এনআরসি-তে ১৯ লক্ষের নাম বাদ পড়বার পর এই সংখ্যা বৃদ্ধি ঘটেছে।
ভারতে জন্ম ও মৃত্যুর নিবন্ধীকরণ
১৮৮৬ সালে ব্রিটিশ শান কালে জন্ম, মৃত্যু ও বিবাহ পঞ্জীকরণ আইন চালু হয়। এই আইনের আওতায় নিবন্ধীকরণের বিষয়টি ছিল স্বেচ্ছাধীন। স্বাধীনতার পর, ভারতের সিভিল রেজিস্ট্রেশন ব্যবস্থার আওতায় জন্ম ও মৃত্যুর পঞ্জীকরণ বাধ্যতামূলক করা হয়। ১৯৬৯ সালের জন্ম ও মৃত্যু পঞ্জীকরণ আইনের আওতায় সামগ্রিকতা বজায় রাখার উদ্দেশ্যে তা লাগু করা হয়।
ভারতে বার্থ সার্টিফিকেট পেতে গেলে কী করতে হয়?
১৯৬৯ সালের জন্ম ও মৃত্যু পঞ্জীকরণ আইন অনুসারে, একজন শিশুর জন্মের ২১ দিনের মধ্যে আবেদন করাই সাধারণ সময়সীমা বলে ধার্য। সংশ্লিষ্ট স্থানীয় কর্তৃপক্ষ এই জন্ম পঞ্জীকরণ করবার পর বার্থ সার্টিফিকেট দেওয়া হয়।
যেমন দিল্লিতে, স্থানীয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ হল দিল্লি মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন, নর্থ দিল্লি মিউনিসিপ্যাল কর্পোর্শন অথবা দিল্লি ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড। আসামে এই কর্তৃপক্ষ হল যে কোনও জেলার হেলথ সার্ভিসের জয়েন্ট ডিরেক্টর।
এই আইনের ১৩ নং ধারায় বিলম্বিত পঞ্জীকরণের নিয়মের আওতায় নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে যাবার পরেও জন্মের নিবন্ধীকরণ করা যেতে পারে। ২১ দিন সময়কালের মধ্যে পঞ্জীকরণ হলে কোনও চার্জ লাগে না। কিন্তু ২১ দিনের পর, এক মাসের মধ্যে নিবন্ধীকরণের জন্য লেট ফি দিতে হয়।
৩০ দিন থেকে এক বছরের মধ্যে জন্মের পঞ্জীকরণ করতে গেলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের লিখিত অনুমতি এবং ফি লাগে। এর সঙ্গে কোনও নোটারি বা রাজ্য সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসারের হলফনামাও পেশ করতে হয়।
এক বছর পেরিয়ে গেলে, জন্মের পঞ্জীকরণ করতে গেলে ফার্স্ট ক্লাস ম্যাজিস্ট্রেট বা প্রেসিডেন্সি ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশের প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে জন্মের সঠিকতে নিরূপণের পরই ওই নির্দেশ দেওয়া হয়।
শিশুর নাম ছাড়াও বার্থ সার্টিফিকেট দেওয়া হয়, সে ক্ষেত্রে ১২ মাসের মধ্যে বিনা খরচে সার্টিফিকেটে নাম ঢোকানো যায়। ১৫ বছর পর্যন্ত সময়কালে লেট ফি দিয়ে নাম ঢোকানো যায় সার্টিফিকেটে।
ভারতের বাইরে যেসব শিশু জন্মায়, ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইন ও ১৯৫৬ সালের নাগরিকত্ব (ভরতীয় দূতাবাসে নিবন্ধীকরণ) আইনের আওতায়, ভারতীয় দূতাবাসে তাদের জন্মের নিবন্ধীকরণ করা যায়। তবে কোনও শিশুর বাবা মা যদি ভারতে ফিরে বসবাস করবেন বলে মনস্থ করেন. তাগলে শিশুর ভারতে আসার ৬০ দিনের মধ্যে ওই জন্মের পঞ্জীকরণ সম্ভব। এর পর পঞ্জীকরণ করাতে গেলে বিলম্বিত নিবন্ধীকরণের নিয়ম প্রযোজ্য হবে।
কী কী নথি প্রয়োজন?
বার্থ সার্টিফিকেট পেতে গেলে যেসব নথি লাগে, তার মধ্যে রয়েছে সাদা কাগজে আবেদন, যার বার্থ সার্টিফিকেটের জন্য আবেদন করা হচ্ছে, তার জন্মের প্রমাণ, নাম, স্থান ও জন্মের সময় সম্বলিত একটি হলফনামা, রেশন কার্ড বা স্কুল ছাড়ার সার্টিফিকেট- যাতে জন্মতারিখের উল্লেখ রয়েছে। স্কুল ছাড়ার সার্টিফিকেট না থাকলে, পুলিশ ভেরিফিকেশন প্রয়োজন।