Advertisment

ভারত-বাংলাদেশ তিস্তা চুক্তিতে চিনা প্রবেশ! সমস্যা বৃদ্ধির ইঙ্গিত

একাধিকবার রাজনৈতিক পর্যায়ে গোটা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হলেও সমস্যার সমাধান সূত্র তিস্তার জলেই বয়ে গিয়েছে। কিন্তু এবার মোড় ঘোরালো অন্য রাজনীতি।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

বেশ কয়েক বছর ধরেই ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কে টানাপোড়েন তৈরি করেছে যে ইস্যু তা হল তিস্তা জলবন্টন চুক্তি। একাধিকবার রাজনৈতিক পর্যায়ে গোটা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হলেও সমস্যার সমাধান সূত্র তিস্তার জলেই বয়ে গিয়েছে। কিন্তু এবার মোড় ঘোরালো অন্য রাজনীতি।

Advertisment

তিস্তার বাঁধ পুনর্নির্মাণ, জলবন্টন, নাব্যতার মতো গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলি নিজেদের মতো করে গঠন করতে চিনের থেকে ১ কোটি ডলার অর্থ সাহায্য নিল বাংলাদেশ। বর্ষাতে বন্যা আটকাতে এবং গরমে জলপ্রবাহ বৃদ্ধি করতে বাঁধ দেওয়ার প্রকল্পেও এই অর্থব্যয় করতে ইচ্ছুক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু এই সিদ্ধান্ত ভারতের জন্য সমস্যা বৃদ্ধি করছে কোথায়? এই মুহুর্তে ভারত-চিনের কী সমস্যা তা বিশ্ব জানে। লাদাখ সীমান্তে অশান্ত আবহ, গালওয়ানে সেনা সংঘাত, ভারতে চিনা পণ্যে ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা-এ সব ইস্যু নিয়ে উত্তপ্ত রয়েছে এই দুই দেশ। এরই মাঝে বাংলাদেশের এই চিনা সাহায্য নেওয়াই ভাবিয়ে তুলছে ভারতকে।

তিস্তা জলবন্টন চুক্তির কী অবস্থা?

২০১১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে এই চুক্তি সম্পন্ন হয় ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে। সেই সময় প্রধানমন্ত্রী ছিলেন মনমোহন সিং। বাংলাদেশ সফরে এই তিস্তা জলবন্টন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। কিন্তু এই চুক্তি নিয়ে প্রবল বিরোধিতা জানায় তৃণমূল সুপ্রিমো তথা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অতএব, কার্যকর হয়নি এই চুক্তি। পরবর্তীতে ২০১৪ সালে প্রথমবারের জন্য মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০১৫ সালে বাংলাদেশ সফরে যান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সঙ্গে ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সময় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে তিনি আশ্বস্ত করেন যে সমাধান সূত্র খুঁজে এই সমস্যা মেটাবে কেন্দ্র এবং রাজ্য। মাঝে পেরিয়ে গিয়েছে ৫ বছর। কিন্তু তিস্তা জলবন্টন চুক্তি রয়ে গিয়েছে সেই তিমিরেই।

publive-image

দুই দেশের সম্পর্ক আসলে কেমন?

ভারত-বাংলাদেশের যে সম্পর্ক তা অত্যন্ত যত্ন সহকারেই গড়ে তোলা হয়েছিল। শেখ হাসিনা বাংলাদেশে ক্ষমতায় আসার পর ২০০৮ সাল থেকে সম্পর্কে অবনতি হয়নি। কারণ দুই দেশই কোথাও কোথাও একে অপরের পরিপূরক হিসেবে থেকেছে। ভারতের ক্ষেত্রে যেমন সুরক্ষার দিকে অনেকটা সাহায্য করেছে বাংলাদেশ। ভারতের পূর্ব এবং উত্তর পূর্ব এলাকায় ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে কোনও সমস্যা নেই। সেখানে সর্বদাই শান্ত অবস্থা বিরাজমান। ফলে এই প্রান্ত নিয়ে ভারতকে কোনওদিনই আলাদা করে সেনা মোতায়েন বা যুদ্ধকালীন চিন্তাভাবনা করতে হয়নি।

অন্যদিকে, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক এবং উন্নয়নের ক্ষেত্রে ভারতের থেকে লাভবান হয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলির মধ্যে বাংলাদেশ ভারতের জন্য বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গত দশকে দ্বিপাক্ষিক ব্যবসা বাণিজ্য অনেকটাই বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৮-১৯ সালে ভারত বাংলাদেশে রফতানি করেছে মোট ৯.২১ বিলিয়ন ডলার আর আমদানি করেছে ১.০৪ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু বর্তমানে সেই সম্পর্কে ছেদ দেখা দিয়েছে।

দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের টানাপোড়েন তৈরি হল কবে থেকে?

দ্বিতীয়বারের জন্য মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পর নাগরিকপঞ্জি তৈরির মাধ্যমে নাগরিকত্ব দেওয়ার যে নয়া নীতি চালু করে গত বছর ডিসেম্বর মাসে, তখন থেকেই দুই দেশের সম্পর্কে ফাটল দেখা যায়। এনআরসির বিষয়ে নিজেদের বিরোধ অবস্থান স্পষ্ট করতে ভারতে সফর বাতিল করেন বাংলাদেশের একাধিক মন্ত্রী। শেখ হাসিনা সেই সময় জানিয়েছিলেন এনআরসি ভারতের 'অভ্যন্তরীণ বিষয়' হলেও নাগরিকত্ব আইন আনার প্রয়োজনীয়তা ছিল না।

এই টানাপোড়েন, তিস্তা চুক্তিতে চিনা প্রবেশের মাঝেই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করতে দু'দিনের সফরে ঢাকা যান বিদেশ সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা। জানা গিয়েছে এই বৈঠকে সীমান্ত সুরক্ষার বিষয়েও কথা হয়েছে।

চিনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক কতটা গভীর?

নিউ দিল্লির একটি রিসার্চ ফাউন্ডেশনের সিনিয়র ফেলো জয়িতা ভট্টাচার্য বলেন, "বাংলাদেশের ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে চিন অনেকটা জায়গা জুড়ে রয়েছে। চিনা পণ্যের আমদানি সেখানে সবচেয়ে বেশি হয়। ট্রেড ভ্যালু প্রায় ১৮ বিলিয়ন ডলার। ভারত-বাংলাদেশ ট্রেড ভ্যালুর যা প্রায় দ্বিগুণ।" সম্প্রতি বাংলাদেশ থেকে পণ্যে আমদানির ক্ষেত্রে চিন 'জিরো ডিউটি ফ্রি' ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশ এই চিনা নীতিকে সাদরে গ্রহণ করেছে। কারণ এর ফলে বাংলাদেশের পণ্যের রফতানি অনেকটাই বৃদ্ধি পাবে চিনে।

তবে শুধু পণ্যের ক্ষেত্রেই নয়। সেনা সরঞ্জাম, অস্ত্রশস্ত্রের ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ অনেকটাই চিনের উপর নির্ভরশীল। চিনই একমাত্র 'আর্মস সাপ্লায়ার্স' সে দেশে। সম্প্রতি দুটি মিং ক্লাস সাবমেরিনও চিনের থেকে কিনেছে শেখ হাসিনার বাংলাদেশ।

যেখানে লাদাখ নিয়ে ভারত, চিন উভয়ে দেশের সম্পর্কে উত্তাপ ছড়িয়েছে, সেখানে তিস্তা জলবন্টন চুক্তির মধ্যে এমন চিনা প্রবেশ চিন্তা বাড়িয়েছে ভারতের।

Read the full story in English

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন

Sheikh Hasina india china standoff Bangladesh
Advertisment