Advertisment

ভারত-চিন প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় নয়া বাস্তবতা মাথায় রাখতেই হবে সেনাবাহিনীকে

ভারতীয় সেনা প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার বর্তমান পরিস্থিতিকে দীর্ঘমেয়াদি বলে ধরে নিচ্ছে, এবং এপ্রিল পূর্ববর্তী স্থিতাবস্থা একটি দূরতম লক্ষ্য বলেই মনে হচ্ছে।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
India China Military LAC

সেনাবাহিনীর সাবধানী পদক্ষেপের আরেকটা কারণ প্যাংগং সো এলাকা

সোমবার প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় ভারত ও চিনের সেনা সরানোর ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হয়েছে বটে, তবে তাতে সেনাবাহিনীর  সতর্ক থাকা বা লাদাখের মত পার্বত্য এলাকায় সেনা মোতায়েন করার ব্যাপারে প্রস্তুতি কোনওটাই কমছে না। বিতর্কিত এই সীমান্তে পাঁচ দশক পর যে রক্তপাত ঘটেছে সেটাই এখন নয়া বাস্তবতা।

Advertisment

গত ৯ সপ্তাহ ধরে বেশ কিছু ঘটনায় দু পক্ষের সেনার মধ্যে একাধিক ঘটনার জেরে দু তরফের সেনা মধ্যে অবিশ্বাসের বাতাবরণ তৈরি হয়েছে। কর্পস কম্যান্ডার পর্যায়ে প্রথম দফা আলোচনার পর দুই সেনা গালওয়ান সেক্টর থেকে সেনা সরাতে শুরু করে, কিন্তু চিনাদের একটি নজরদারি পোস্ট নিয়ে গত ১৫ জুন দু পক্ষের মধ্যে হিংসাত্মক সংঘাত বাধে।

আরও পড়ুন, উইন্টার ডিজেল কী, লাদাখে ভারতীয় সেনাকে তা কীভাবে সাহায্য করতে পারে?

এই সংঘাতে ২০ জন ভারতীয় সেনা মারা যান, কত চিনা সৈন্য মারা যান তা জানা যায়নি। এর জেরে দু পক্ষের মধ্যেই তাজা ক্ষত তৈরি হয়েছে যা শুকোতে সময় লাগবে। দু পক্ষই সেনা সরাতে শুরু করলেও ভারত অতিরিক্ত সাবধানী। প্রতিটি পদক্ষেপ যাচাই করে নিয়ে, পরের পা ফেলতে চায় তারা।

এর অর্থ এই গোটা প্রক্রিয়াটিই হবে সুচিন্তিত, সময় সাপেক্ষ, গুরুভার। এক বরিষ্ঠ সেনা আধিকারিকের মতে, সংঘাত স্থলে প্রথম পদক্ষেপ গ্রহণ করতেই দু থেকে তিন সপ্তাহ সময় লাগবে, তার পর দু পক্ষের মিলিটারি কম্যান্ডারদের মধ্যে আলোচনার পর পরবর্তী পদক্ষেপ হবে। এ থেকেই বোঝা যাচ্ছে এই পুরো প্রক্রিয়ায় কয়েক মাস যদি না-ও হয়, কয়েক সপ্তাহ সময় লাগবে। এ ক্ষেত্রে পুরো প্রক্রিয়া চলাকালীন কোনও সমস্যা হবে না ধরে নেওয়া হচ্ছে।

এই প্রক্রিয়া চিনা সেনা যতদিন প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখার কাছাকাছি রয়েছে, ততদিন  প্রাথমিক পদক্ষেপ নিয়ে সেনাবাহিনীর উদ্বেগ থাকছে যে তারা গোটা প্রক্রিয়ার বিপরীত মুখে চলে যেতে পারে। অর্থাৎ ভারত কোনও সময়েই নিজেদের পাহারা কমাতে পারবে না, বা দীর্ঘকালীন এই প্রক্রিয়ায় সেনার সংখ্যা কমানোর কথা ভাবতে পারবে না।

এমনকী এখান থেকে সেনা সরানোর প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর, পশ্চাৎবর্তী এলাকা থেকে সেনা সরানোর প্রক্রিয়াটিও একইরকমের জটিল হবে। সেনা ও ভারী শস্ত্র সরানো হবে কিন্তু তা হবে পর্যায়ক্রমে এবং দু পক্ষের সংখ্যার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণভাবে। এলাকায় যে পরিমাণ সেনা ও অস্ত্রশস্ত্র মজুত করা হয়েছে, তার প্রেক্ষিতে এ প্রক্রিয়ায় দীর্ঘ সময় লাগবে।

সেনাবাহিনীর সাবধানী পদক্ষেপের আরেকটা কারণ প্যাংগং সো এলাকা, লবণাক্ত জলের হ্রদের উত্তর দিক। আজ পর্যন্ত সমস্ত বৈঠকে চিনারা প্যাংগং নিয়ে তাদের অবস্থান বদলায় নি, এখানে তারা ভারী পরিকাঠামো তৈরি করেছে এবং প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় ভারতের দিকে আট কিলোমিচার পর্যন্ত ব্যাপক সেনা মোতায়েন করেছে।

আরও পড়ুন, চিনকে বাদ দিয়ে কি টিকে থাকতে পারবে ভারতের ওষুধ শিল্প?

গত সেপ্টেম্বর থেকে ঘটনাপ্রবাহের উপর নির্ভর করে নিরাপত্তাবাহিনীর আশঙ্কা চিনারা ভারতকে বর্তমান স্থিতাবস্থা মেনে নেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করতে পারে। তেমন ঘটলে ভারত ফিঙ্গার ৮ পর্যন্ত টহলদারির অধিকার হারাবে। এতদিন পর্যন্ত ভারত এখানে টহলদারি করতে, চিনাদের সেক্ষেক্রে প্রকৃত নিয়ন্ত্ররেখার পশ্চিমে সরে যেতে হবে।

jammu kashmir ladakh map জম্মু কাশ্মীর লাদাখের মানচিত্র

তেমনটা যদি ঘটে, এবং তেমনটা ঘটতে চলেছে বলেই মনে হচ্ছে- তা ভারতের পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব নয়, এবং তাতে দু পক্ষের সেনার মধ্যে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি জিইয়ে থাকবে। যা যে কোনও সময়ে ফেটে পড়তে পারে এবং  মে মাসের মত পুরো প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা জুড়ে অশান্তি তৈরি করতে পারে। ৫-৬ মে-র রাতে ভারত ও চিনের সেনাদের মধ্যে হ্রদের ধারে সংঘর্ষ বাধে যার জেরে দু পক্ষেই একাধিক সেনা আহত হন, এবং অশান্তি কেবল প্যাংগং এলাকাতেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। এরকম ঘটনার আশঙ্কায় সেনাবাহিনীকে শক্তি ও সতর্কতা দুইই বজায় রাখতে হবে।

তৃতীয় বিষয় হল এই সেনা সরানোর প্রক্রিয়াকালীন ডি ফ্যাক্টো বাফার জোন তৈরি, যদিও তা অস্থায়ী বলেই মনে করা হচ্ছে। এই বাফার জোনগুলি নো ম্যানস ল্যান্ডে হবে যার জেরে ভারতীয় বাহিনী প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার বিভিন্ন অংশে যেতে পারবে না, যার মধ্যে রয়েছে পিপি১৪, পিপি১৫ ও পিপি ১৭এ। উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন চায়না স্টাডি গ্রুপের মতে একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সেনাবাহিনীকে টহল দিতেই হবে।

স্থানীয় সংহতি বজায় রাখার স্বার্থে সেনবাহিনী এই পিপিগুলিতে তাদের পূর্ণ অধিকার ফিরে পেতে চাইবেই। ভারতীয় সেনার টহলদারির সময়ে চিন যদি হিংসাত্মক হয়ে ওঠে তাহলে ব্যাপকতর সামরিক বাহিনীর প্রয়োজন হবে, যা রুটিন পদ্ধতিতে প্রয়োজন হয় না।

এই সব কারণের জন্যই ভারতীয় সেনা প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার বর্তমান পরিস্থিতিকে দীর্ঘমেয়াদি বলে ধরে নিচ্ছে, এবং এপ্রিল পূর্ববর্তী স্থিতাবস্থা একটি দূরতম লক্ষ্য বলেই মনে হচ্ছে। বিবদমান সীমান্তের নয়া বাস্তবতার সঙ্গে সেনাকে খাপ খাওয়াতে হবে এবং তার অর্থ হল ব্যাপক সতর্কতা, ভিন্ন প্রস্তুতি এবং নতুন লক্ষ্য। সোমবার গালওয়ানে দু পক্ষ সেনা সরানোর ব্যাপারে সম্মত হওয়ায় এই নতুন বাস্তবতা বদলাবে না।

india china standoff
Advertisment