একটি সমীক্ষার প্রাথমিক খতিয়ানে দেখা যাচ্ছে যে ভারতের ১২টি রাজ্যের যাঁরা ফসল কেটেছিলেন তাঁদের ৬০ শতাংশ লোকসানের মুখে পড়েছেন এবং তাঁদের দশজনের মধ্যে একজন গত মাসে ফসল কাটতে পারেননি। কৃষকদের ৫৬ শতাংশ জানিয়েছেন লকডাউনের ফলে তাঁদের পরবর্তী চাষের বীজ রোপণের প্রস্তুতিতে সমস্যা হয়েছে।
এই সার্ভেতে দেখা গিয়েছে কৃষিজমির পরিমাণের সঙ্গে খাদ্যের নিরাপত্তাহীনতার ব্যাপক সম্পর্ক রয়েছে এবং গত মাসে বড় কৃষকদের তুলনায় ভূমিহীন কৃষকরা ১০ গুণ বেশিবার খাবারহীন থেকেছেন।
যাঁদের নিয়ে সমীক্ষা করা হয়েছে, তাঁদের অর্ধেকে বলেছেন চাঁরা এর পর বীজ ও সারের খরচ নিয়ে উদ্বিগ্ন, এক তৃতীয়াংশ (৩৮ শতাংশ) বলেছেন, তাঁদের উদ্বেগ শ্রমিক না-পাওয়া নিয়ে।
এক চতুর্থাংশ বলেছেন, লকডাউনের জন্যে ফসল না বিক্রি করে মজুত করছেন। এই সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষিরা তাঁদের ফসল বিক্রির ব্যাপারে বড় কৃষকদের চেয়ে পিছিয়ে রয়েছেন।
আরও পড়ুন: ২৫ মে বিমান চলাচল, তিন দিনে কী করে বদলে গেল সরকারি সিদ্ধান্ত?
পাবলিক হেলথ কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া (PHFI), হারবার্ড টি এইচ চান স্কুল অফ পাবলিক হেলথ, এবং হায়দরাবাদের সেন্টার ফর সাসটেনেবেল এগ্রিকালচার সম্প্রতি ২০০ জেলার ১৪২৯টি কৃষক পরিবারের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলে এই সমীক্ষা করেছে।
৩ মে থেকে ১৫ মে-র মধ্যে এই সমীক্ষা করা হয়েছে এবং এই একই পরিবারগুলিতে এক মাস পরে ও তারপর দু মাস পরে ফের সমীক্ষা করা হবে।
এই সমীক্ষা দলে ছিলেন হারভার্ড টি এইচ চান স্কুল অফ পাবলিক হেলথের সহকারী অধ্যাপক ডক্টর লিন্ডসে জ্যাকস। তিনি বলেন, “প্রাথমিক রিপোর্ট উদ্বেগজনক হলেও এ সবের মাঝে একটা আশার আলো রয়েছে, তাহল সকলে মিলে কৃষক ও কৃষিক্ষেত্রে যুক্ত কর্মীদের সুবিধার জন্য পলিসি নির্ধারণে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন। এ মাসেই যেহেতু বীজ রোপণের কাল, ফলে সময়ের উপরেই সব নির্ভর করছে।”
ডক্টর জ্যাকস আরও বলেন, “অ্যাকাডেমিক গবেষণা প্রায়শই লাগু হতে দেরি হয় এবং পলিসিনির্মাতাদের হাতেও দেরিতে পৌঁছয়, যেসব এনজিও এংদের জীবনযাত্রার উন্নতি ঘটাতে সক্ষম, আমরা তাঁদের সাহায্য নিয়েছি।
কোভিড ১৯ অতিমারী দেখিয়ে দিয়েছে মানুষ দায়বদ্ধতার সঙ্গে একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যের জন্য দল হিসেবে দূর থেকেও কাজ করতে পারে, ভিন্ন টাইম জোন থেকেও কাজ করতে পারে। কোভিড ১৯ আমাদের একজোট হওয়ার শিক্ষা দিয়ে গিয়েছে।”
মূল যে বিষয়গুলি উঠে এসেছে
# গত মাসে ১০ শতাংশ কৃষক চাষ করতে পারেননি এবং যাঁরা ফসল কেটেছিলেন তাঁদের ৬০ শতাংশের ক্ষতি হয়েছে। অনেকেই জানিয়েছেন, এর কারণ লকডাউনের সঙ্গে জড়িত, যেমন বাজারে দাম কমে যাওয়া এবং যাতায়াতে নিষেধাজ্ঞার জন্য মাঠে না-যেতে পারা। বেশ কয়েকজন কৃষক জানিয়েছেন, সেচের অভাবে জলের সমস্যা ও আবহাওয়ার কারণেও কৃষিক্ষেত্র ক্রমাগত চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে এবং অতিমারীর মধ্যে দাবদাহের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হওয়া প্রয়োজন।
# প্রতি চারজনে একজন কৃষক জানিয়েছেন তাঁরা ফসল বিক্রির বদলে লকডাউনের সময়ে তা মজুত করে রাখছেন এবং ১২ শতাংশ কৃষক জানিয়েছেন, এর মধ্যেও তাঁরা ফসল বিক্রির চেষ্টা করছেন। ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষিরা বড় চাষিদের তুলনায় অনেক কম ফসল বিক্রি করতে পেরেছেন।
# ৫৬ শতাংশ কৃষক জানিয়েছেন লকডাউনের জেরে তাঁরা আসন্ন মরশুমে বীজ বপন করতে পারবেন কিনা তা নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে। সুনির্দিষ্টভাবে, এঁদের ৫০ শতাংশ জানিয়েছেন, তাঁরা বীজ ও সার কেনার ব্যাপারে অনিশ্চিত এবং ৩৮ শতাংশ জানিয়েছেন তাঁরা কৃষিশ্রমিকদের অভাব নিয়ে উদ্বিগ্ন।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন