India Coronavirus (Covid-19) Cases: শুক্রবার খবর পাওয়া যায় বেশ কিছু খুচরো করোনাভাইরাস মাইলফলকের। দেশে মোট আক্রান্তের সংখ্যা তিন লক্ষ ছাড়িয়ে যায়, মহারাষ্ট্র ছুঁয়ে ফেলে এক লক্ষ সংক্রমণের মাত্রা, এই প্রথমবার দিল্লিতে নতুন সংক্রমণের দৈনিক সংখ্যা ২,০০০ ছাড়ায়, এবং উত্তরপ্রদেশে প্রথমবার নতুন করে সংক্রমিত হন দিনে ৫০০ জনের বেশি। ওদিকে বিহারে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৬,০০০ ছাড়িয়ে যায়।
তবে সবচেয়ে উদ্বেগজনক খবর কিন্তু এসেছে সিকিম এবং লাদাখ থেকে, যা হয়তো অনেকেরই চোখে পড়বে না। এই দুই অঞ্চলে এযাবতকাল সংক্রমণের সংখ্যা ছিল নগণ্য। সেখানে শুক্রবার জানা গেল, লাদাখে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ১০৪ জন, সিকিমে ৫০ জন। দুটি সংখ্যাই এই দুই অঞ্চলের নিরিখে অস্বাভাবিক রকমের বেশি। শুক্রবারের আগে পর্যন্ত লাদাখে মোট সংক্রমিতের সংখ্যা ছিল ১৩৫, এবং সিকিমে - যেখানে দেশের সব রাজ্যের মধ্যে সবচেয়ে দেরীতে পৌঁছয় ভাইরাস - এই সংখ্যাটা ছিল স্রেফ ১৩।
কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল লাদাখে প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়ে ৮ মার্চ, যখন মহারাষ্ট্রে বা কর্ণাটকে পর্যন্ত কেউ সংক্রমিত হন নি। প্রথম ধাক্কায় ধরা পড়ে ১১ জনের সংক্রমণ, যা পরে দাঁড়ায় ১৮ জনে, এবং তারও পরে ৪৩ জনে। এই ৪৩ জন সুস্থ হয়ে ওঠার পর কিছুদিন করোনা-মুক্ত থাকে লাদাখ। কিন্তু মে মাসের শেষ সপ্তাহে আসে সংক্রমণের দ্বিতীয় প্রবাহ, এবং তারপর থেকে প্রায় রোজই মিলেছে নতুন সংক্রমণের খবর। সুতরাং শুক্রবারের বোঝা সামলানো কঠিন হবে লাদাখের স্বাস্থ্যব্যবস্থার পক্ষে।
আরও পড়ুন: দিল্লিতে কোভিড মৃত্যুর হিসেবে গরমিলের কারণ কী?
সংবাদ সংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, শুক্রবার লাদাখ স্বশাসিত পর্বত উন্নয়ন কাউন্সিলের বৈঠক ডাকেন কাউন্সিলের চিফ এক্সিকিউটিভ কাউন্সিলর, এবং সেই বৈঠকে আলোচিত হয় কোভিড-১৯ সংক্রমণের ক্ষেত্রে সম্ভাব্য "সাম্প্রতিক বিচ্যুতির" প্রসঙ্গটি।
ওদিকে ২৩ মে পর্যন্ত করোনা-মুক্ত ছিল সিকিম, যেদিন রাজ্যে ধরা পড়ে প্রথম পজিটিভ কেস। তার ১০ দিন পরে আসে দ্বিতীয় কেস। শেষতম ব্যাচে ৫০ জন আক্রান্তের মধ্যে রয়েছেন ভারী মাত্রায় করোনা-কবলিত এলাকা থেকে ফেরত আসা বাসিন্দারা। এঁদের মধ্যে মহারাষ্ট্র থেকে ফিরেছেন অন্তত ১২ জন, পশ্চিমবঙ্গ থেকে দু'জন। এঁরা সকলেই ছিলেন কন্টেনমেন্ট সেন্টারে।
সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে, মোটের ওপর করোনাভাইরাস-মুক্ত ছিল যেসব অঞ্চল, সেখানে আচমকাই তীব্রগতিতে বাড়ছে সংক্রমণের মাত্রা। লাদাখ এবং সিকিম, দুইই এই নতুন 'ট্রেন্ড'-এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ। যেমন উত্তর-পূর্বাঞ্চলে দু'সপ্তাহ আগে পর্যন্ত করোনার থাবা বসেছিল স্রেফ আসাম এবং ত্রিপুরায়। ত্রিপুরার ক্ষেত্রে সংক্রমণ সীমিত ছিল মূলত ধলাই জেলার বিএসএফ ছাউনির মধ্যে। কিন্তু তারপর থেকে শুধু যে আসাম এবং ত্রিপুরায় দ্রুতগতিতে সংক্রমণ বৃদ্ধি পেয়েছে তাই নয়, অন্যান্য রাজ্যেও উল্লেখযোগ্য ভাবে মাথা তুলেছে করোনা। মণিপুরে এখন কেসের সংখ্যা ৩৮৫, নাগাল্যান্ড এবং মিজোরাম দুই রাজ্যেই ১০০-র বেশি। মেঘালয় এবং অরুণাচল প্রদেশে আক্রান্তের সংখ্যা যথাক্রমে ৪৪ এবং ৮৩।
এই সব রাজ্যে আক্রান্তদের সিংহভাগই দেশের অন্যান্য রাজ্য থেকে বাড়ি ফিরেছেন। শনিবার ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গত তিন সপ্তাহে দেশের যে সমস্ত জেলায় প্রথম করোনা সংক্রমণ ধরা পড়েছে, সেগুলির ৮০ শতাংশই উত্তর-পূর্বাঞ্চলে।
শুক্রবার প্রথমবার ১১ হাজার দৈনিক নতুন সংক্রমণের গণ্ডি পেরোয় ভারত। বর্তমানে দেশে সংক্রমিতের সংখ্যা ৩ লক্ষ ৯ হাজার।
মহারাষ্ট্রে প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়ে ৯ মার্চ, সেখানে সংক্রমিতের সংখ্যা বর্তমানে ১ লক্ষ ছাড়িয়েছে। মোট ৯৫ দিনে এই মাইলফলকে পৌঁছেছে রাজ্য। পৃথিবীর অন্যান্য বহু অঞ্চলে এই সফরে সময় লেগেছে আরও অনেক কম। উদাহরণস্বরূপ, নিউ ইয়র্কে স্রেফ ২২ দিনের মধ্যে সংক্রমিতের সংখ্যা ৩৪৮ থেকে বেড়ে হয়ে যায় ১ লক্ষ ৫ হাজার। ব্রিটেনে ১ লক্ষ সংক্রমণ ঘটতে লাগে ৬০ দিন, যেখানে ইতালি এবং স্পেন ৬৩ দিনে এই সংখ্যায় পৌঁছয়। এই তথ্য জানিয়েছে ডেটা সংগ্রহকারী ওয়েবসাইট Worldometer।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন