ভারতের অপরিশোধিত তেলের উৎপাদন ২০১৯ সালের মে মাসের তুলনায় ২০২০ সালে কমেছে ৭.১ শতাংশ। তার কারণ কোভিড-১৯ অতিমারীর কারণে চাহিদা হ্রাস। তবে ২০১২ সালের অর্থবর্ষ থেকেই অপরিশোধিত তেলের জাতীয় উৎপাদন প্রতি বছর কমতে থেকেছে।
জাতীয় স্তরে অপরিশোধিত তেলের উৎপাদন যৌগিক হিসেবে ২০১২ সালে থেকে বার্ষিক ২.১ শতাংশ হারে কমেছে। ২০১২ অর্থবর্ষে তা ছিল ৩৮,০৮৯.৭ হাজার মেট্রিক টন, ২০২০ অর্থবর্ষে তার পরিমাণ ৩২,১৬৯.৩ হাজার মেট্রিক টন।
উৎপাদন কমছে কেন?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন ভারতের অপরিশোধিত তেল উৎপাদিত হয় মূলত পুরনো হয়ে যাওয়া কূপ থেকে, যে কূপগুলিতে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে উৎপাদন কমে আসে।
এর দুটো কারণ। নতুন তেল আবিষ্কারে ভারতের ঘাটতি এবং যেসব কূপ আবিষ্কৃত হয়েছে সেখানে উৎপাদনে দেরি। এর জেরে ভারত ক্রমশ তেল আমদানির উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। পুরনো কুয়োগুলি থেকে তেলের উৎপাদনহ্রাস দ্রুতগতিতে কমছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। দেশীয় যে সব সংস্থা তেলের খোঁজ করে, তারা বর্তমান কূপগুলি যাতে আরও বেশিদিন ক্রিয়াশীল থাকে তার খোঁজ করছেন।
ভারতে অপরিশোধিত তেল উৎপাদনের সিংহভাগ করে থাকে দুটি বড় রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা- ওএনজিসি ও অয়েল ইন্ডিয়া। অপরিশোধিত তেলের ব্লকের নিলামে এরাই মূল বিডার এবং ভারতে যত ব্লতের নিলাম হয়ে থাকে, শেষ পর্যন্ত এরাই তার সিংহভাগের দায়িত্ব পেয়ে থাকে বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
আরও বেশি বেসরকারি সংস্থা নেই কেন?
কেয়ার্ন ইন্ডিয়া, হিন্দুস্তান অয়েল এক্সপ্লোরেশন কোম্পানির মত বেসরকারি সংস্থা, বিশেষত যারা বিদেশি কোম্পানি, তাদের ভারতে তেল খোঁজা ও উৎপাদনে অনীহা রয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে এর কারণ একটি অয়েল ব্লক বরাদ্দ হয়ে যাওয়ার পর সেখানে কাজ শুরুর অনুমোদন পেতে দীর্ঘ বিলম্ব। উৎপাদন শুরুর জন্য বেশ কিছু জরুরি অনুমোদন প্রয়োজন, এর মধ্যে রয়েছে পরিবেশ সংক্রান্ত ছাড়পত্র এবং ডিরেক্টর জেনার অফ হাইড্রোকার্বনসের অনুমোদন। তার আগে বরাদ্দপ্রাপ্ত সংস্থাকে ভূকম্পন জনিত সমীক্ষা সম্পন্ন করতে হয় ও একটি ফিল্ড ডেভেলপমেন্ট পরিকল্পনা করতে হয়।
এক বিশেষজ্ঞের কথায়, বরাদ্দ হওয়ার পর উৎপাদন শুরু করতে অন্তত ৫-৭ বছর সময় লেগে যায়, সরকারি সংস্থাগুলির ক্ষেত্রে এই দেরির পরিমাণ আরও বেশি।
নীতির কী ধরনের পরিবর্তন হলে ভাল হয়?
বর্তমান সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা তেল উৎপাদনের জন্য লেভি কমাতে বলেছে, যার মধ্যে রয়েছে তেলের সেস, রয়্যালটি, এবং প্রফিট পেট্রোলিয়াম, বিশেষ করে অপরিশোধিত তেলের জাম যখন ব্যারেল পিছু ৪৫ ডলারের নিচে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন অপরিশোধিত তেলের দাম যখন কম তখন সরকারকে রয়্যালটি দেওয়ার বাধ্যবাধকতা এই সংস্থাগুলিকে তেল খোঁজা ও উৎপাদন প্রক্রিয়া থেকে মুখ ফিরিয়ে রাখতে বাধ্য করছে।
২০১৯ সালে সরকার ওপেন অ্যাক্রেজ লাইসেন্সিং প্রোগ্রাম (OALP) শুরু করে যাতে সংস্থাগুলি তাদের আগ্রহের ব্লকগুলিতে কম রয়্যালটি ও বিনা সেসে কাজ শুরু করতে পারে। তবে বর্তমান সংস্থাগুলি চাইছে পুরনো পলিসিতে যেসব ব্লক বরাদ্দ করা হয়েছে, সেখানে রয়্যালটি ও অয়েল সেস থেকে ছাড়। একজন বিশেষজ্ঞ বললেন চিন সরকার তেল উৎপাদনকারী সংস্থাগুলিকে ফ্লোর প্রাইস অফার করেছে, যাতে আন্তর্জাতিক অপরিশোধিত দামের ব্যাপক হ্রাসে তারা ক্ষতির মুখে না পড়ে।
এক বিশেষজ্ঞের কথায় এ ধরনের সরকারি ইনসেটিভ তেল খোঁজা ও উৎপাদনে আরও বেশি লগ্নি আনতে পারবে।