India-Maldives relation: ভারতীয়দের বিরুদ্ধে মালদ্বীপের মন্ত্রীদের মন্তব্যে ক্ষোভ বাড়ছে। অনেকেই মালদ্বীপে পর্যটন বয়কট করার আহ্বান জানিয়েছেন। পাশাপাশি, এই সম্পর্ক মেরামতির চেষ্টাও শুরু হয়েছে। কিন্তু, এখনও দুই দেশের সম্পর্ক আগের জায়গায় আসেনি। তারই মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের প্রকৃতি নিয়ে তিনটি মূল প্রশ্ন উঠে এসেছে।
Modi-Muizzu: মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মহম্মদ মুইজ্জুর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। (ছবি সৌজন্যে- পিএমও)
India-Maldives: গত কিছুদিন ধরেই নানা কারণে সংবাদ শিরোনামে মালদ্বীপ। প্রেসিডেন্ট মহম্মদ মুইজ্জুর নেতৃত্বাধীন নতুন সরকার ভারতকে সেনা প্রত্যাহার করতে বলেছে। মুইজ্জু তাঁর প্রথম বিদেশ সফরের জন্য চিনকে বেছে নিয়েছেন। তারপরে জলসীমার সমীক্ষা সংক্রান্ত একটি চুক্তি বাতিল হয়েছে।
Advertisment
১৯৬৫ সালে ব্রিটিশরা মালদ্বীপের নিয়ন্ত্রণ ছাড়লে ভারত কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে।
১৯৭৮ পর্যন্ত কলম্বোতে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনই মালদ্বীপের দায়িত্বে ছিল।
১৯৮০ সাল থেকে, মালদ্বীপে ভারত রাষ্ট্রদূত নিয়োগ করেছে।
সম্পর্কের অবনতি দুই দেশের সম্পর্কের খারাপ দিকগুলোর সর্বশেষ উদাহরণ হল- মুইজ্জুরের মন্ত্রীরা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং ভারতীয়দের বিরুদ্ধে অপমানজনক শব্দ ব্যবহার করেছেন। যাঁরা ওই অপমানজনক মন্তব্য করেছেন, এমন তিন প্রথমসারির নেতাকে মন্ত্রিসভা থেকে সরিয়ে দেওয়া হলেও সমস্যা মেটেনি। ভারতের অনেকেই পর্যটনের গন্তব্য হিসেবে মালদ্বীপকে বয়কট করার আহ্বান জানিয়েছেন। যার জেরে গত ছয় দশক ধরে গড়ে তোলা দুই দেশের কূটনৈতিক এবং রাজনৈতিক সম্পর্ক তলানিতে ঠেকেছে।
Southern India-Maldives: মালদ্বীপ, লাক্ষাদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা এবং দক্ষিণ ভারত। (গুগল মানচিত্র)
Advertisment
কীভাবে গড়ে উঠেছিল সম্পর্ক ১৯৬৫ সালে ব্রিটিশরা মালদ্বীপের দ্বীপগুলোর নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দেওয়ার পরে, ভারত কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করেছিল মালদ্বীপের সঙ্গে। ১৯৭৮ পর্যন্ত কলম্বোতে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনই মালদ্বীপের দায়িত্বে ছিল। মালদ্বীপের রাজধানী মালেতে কোনও কূটনৈতিক মিশন ছিল না। ১৯৮০ সাল থেকে, মালদ্বীপে ভারত রাষ্ট্রদূত নিয়োগ করেছে। ২০০৮ সালে মালদ্বীপ গণতান্ত্রিক দেশ হয়। সরকার পরিবর্তন হয়। তারপরও কিন্তু মালদ্বীপের রাজনৈতিক, সামরিক, ব্যবসায়িক এবং নাগরিক সমাজের সঙ্গে ভারতের গভীর যোগাযোগের কোনও পরিবর্তন হয়নি। পাশাপাশি, শিক্ষা এবং চিকিৎসার জন্য বেশিরভাগ মালদ্বীপবাসী প্রথম পছন্দ হিসেবে বেছে নেয় ভারতকে। আর, এই সম্পর্ক গড়ে ওঠে বছরের পর বছর ধরে।
মালদ্বীপকে ভারতের কেন প্রয়োজন? দ্বীপরাষ্ট্র মালদ্বীপের অবস্থান তাকে ভারতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে। ভারতের পশ্চিম উপকূলে মালদ্বীপের কাছাকাছি (মিনিকয় থেকে মালদ্বীপের দূরত্ব মাত্র ৭০ নটিক্যাল মাইল। ভারতের পশ্চিম উপকূল থেকে মালদ্বীপের দূরত্ব ৩০০ নটিক্যাল মাইল)। ভারত মহাসাগর দিয়ে বাণিজ্যের জন্যও মালদ্বীপের সাহায্য ভারতের প্রয়োজন। ভারত মহাসাগরে ভারতের পরিধির নিরাপত্তা দেখভাল করার জন্যও মালদ্বীপের বন্ধুত্ব ভারতের দরকার। সেই কারণেই ভারত তার প্রতিরক্ষা বাহিনীকে প্রশিক্ষণ দিয়ে মালদ্বীপের নিরাপত্তায় নিযুক্ত করেছে। পরিসংখ্যান বলছে, মালদ্বীপের প্রতিরক্ষা প্রশিক্ষণের প্রায় ৭০ শতাংশ ভারতের মাধ্যমে হয়েছে। হয় সেটা মালদ্বীপের মাটিতে হয়েছে। নতুবা ভারতের সেরা সামরিক একাডেমিগুলোতে হয়েছে।
ভারত-মালদ্বীপ সামরিক যোগাযোগ ভারত গত ১০ বছরে মালদ্বীপের জাতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনী (MNDF)-র ১,৫০০ কর্মীকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে। ভারতীয় নৌবাহিনী মালদ্বীপের প্রতিরক্ষা বাহিনীকে বিমান ও হেলিকপ্টার দিয়েছে আকাশ পর্যবেক্ষণের জন্য। তাদের কর্মীদের কীভাবে দ্বীপে আকাশপথ থেকে অবতরণ করতে হয়, সেই প্রশিক্ষণ দিয়েছে। পাশাপাশি, ভারত মহাসাগরের কার্যকলাপের ওপর নজর রাখার জন্য ভারত মালদ্বীপে একটি উপকূলীয় রাডার সিস্টেম স্থাপন করতে চায়।
চিনের সঙ্গে মালদ্বীপের সম্পর্ক চিন গত ১৫ বছর ধরে মালদ্বীপের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলার চেষ্টা চালাচ্ছে। ২০০৯ সালে মালদ্বীপ চিনে তাদের দূতাবাস খোলে। আর, চিন ২০১১ সালে মালদ্বীপে তার দূতাবাস খোলে। এরপর বিভিন্ন প্রকল্পে বিনিয়োগের সঙ্গেই, বিশেষ করে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং চিনে ক্ষমতায় আসার পর থেকে, বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভকে এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা শুরু করেছেন। যার জেরে মালদ্বীপের রাজনৈতিক এবং বিভিন্ন জগৎ সক্রিয়ভাবে চিনাদের দ্বারা প্রভাবিত হতে শুরু করে। যা নিয়ে ভারত রীতিমতো উদ্বিগ্ন। মালদ্বীপের হয়ে প্রেসিডেন্ট মহম্মদ নাশিদ প্রথমে চিনের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানোর চেষ্টা শুরু করেছিলেন। প্রেসিডেন্ট আবদুল্লাহ ইয়ামিনের জমানায় (২০১৩-২০১৮) চিন-মালদ্বীপ সম্পর্ক আরও বৃদ্ধি পায়। মালদ্বীপের বর্তমান প্রেসিডেন্ট মহম্মদ মুইজ্জু, সেই ইয়ামিনের সরকারেরই মন্ত্রী ছিলেন। তিনি ইয়ামিনের নীতিতেই এগিয়ে চলছেন।