ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা। আন্তর্জাতিক বাজারে কয়লা গনগনে। কয়লার দাম বেড়েছে এ দেশেও। তাতেই বিদ্যুতের দাম বিরাট বাড়ার অশনি সংকেত। মধ্যবিত্তের পকেটে যুদ্ধ যে নানা রকমের ধাক্কা দিচ্ছে, তার মধ্যে এটি অতি গুরুত্বপূর্ণ অবশ্যই।
কয়লা দামবৃদ্ধি ও বিদ্যুতের দামের ঊর্ধ্বগতি
ভারতীয় বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থাগুলি আন্তর্জাতিক দাম বৃদ্ধির দাপট সহ্য করছে বেশ কিছু দিন হল। কোভিড কালে বিদ্যুতের চাহিদা অনেক কমে গিয়েছিল, তার পর যখন সেই চাহিদা বাড়তে শুরু করল, তখন কয়লার সঙ্কট দেখা দিল। মানে, চাহিদার তুলনায় জোগানের কমতির ফলে দাম বেড়ে গেল। কয়লার মজুত তলানিতে পৌঁছানোয় আতঙ্কের আবহও তৈরি হল। বেশ কয়েকটি রাজ্য গত বছরের অক্টোবরে বিদ্যুৎ বিচ্ছেদের মধ্য দিয়ে গেল। এবার সেই পরিস্থিতির সঙ্গে লড়তে লড়তে যখন তিরে এসে তরি ভেড়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হল, তখন যুদ্ধের ধাক্কা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গত ছ’ মাসে কয়লার জোগানের অভাব থাকায় কয়লা আমদানির উপর নির্ভরশীলতা বাড়ছে আমাদের। ফলে যুদ্ধের প্রভাবে আন্তর্জাতিক বাজারে কয়লার দামবৃদ্ধির প্রভাব দেশে পড়ছে ভাল মাত্রায়। ইন্ডিয়া এনার্জি এক্সচেঞ্জ মার্কেটে এক ইউনিটের (কিলোওয়াট/ঘণ্টা) গড় দাম (অ্যাভারেজ ক্লিয়ারিং প্রাইজ) মার্চের শুরুতে ছিল ৩ টাকা ৮৬ পয়সা, তা এখন বেড়ে হয়েছে ১৩ টাকা। বলা হচ্ছে, কয়লার দাম বৃদ্ধির ফলে ২০২৩ সালে বিদ্যুতের দাম ৪ শতাংশ বাড়বে।
দাম বৃদ্ধির ব্যাখ্যা
যুদ্ধ। কারণটা সবাই জানে, আমরাও বলেছি শুরুতেই। কিন্তু যুদ্ধের ফলে কেন কয়লার দাম বেড়েছে বা আরও বাড়ার কথা বলা হচ্ছে? আসলে রাশিয়া থেকে যে কয়লা আসছিল, তা সমস্যায় পড়েছে। যা অন্য নানা পথে কয়লার জোগানের মাধ্যমে পুরোপুরি উৎরোয়নি। রেটিং সংস্থা আইসিআরএ বলছে, আমদানিকৃত কয়লার দাম ২০২৩ অর্থবর্ষের প্রথম ত্রৈমাসিকে ৪৫ থেকে ৫৫ শতাংশ বাড়বে। আইসিআরএ সেই সঙ্গে বলেছে, ঘাটতি মেটাতে আগামী অর্থবর্ষে কোল ইন্ডিয়াকে কয়লা উৎপাদন বাড়িয়ে ৭০০ মেট্রিকটন করতে হবে, যা ২০২১ অর্থবর্ষে ছিল ৬০১ মেট্রিকটন।
অস্ট্রেলীয় কয়লার দাম মার্চে সর্বকালীন দামে পৌঁছয়। যা ভারতের বাজারের জন্য খুবই খারাপ খবর। কারণ, অস্ট্রেলিয়া এবং ইন্দোনেশিয়া আমাদের কয়লা আমদানির ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শুধু যে আমদানিকৃত কয়লার দামের চাপ রয়েছে তা-ই নয়, দেশের কয়লার দামও বেড়েছে। কোল ইন্ডিয়ার ই-অকশনে যে ছবিটা দেখা গিয়েছে। কোল ইন্ডিয়ার স্থির করে দেওয়া বেসলাইন প্রাইজ সর্বকালীন রেকর্ড ভেঙেছে এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে। বেসলাইন প্রাইজ ২৭০ শতাংশ বেশি হয়ে যায়। যা আরও বাড়তে থাকে, এবং মার্চে হয়েছে ৩০০ শতাংশ বেশি।
Read story in English