/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2020/10/oxygen1.jpg)
সেপ্টেম্বরে সংক্রমণের শীর্ষে পৌঁছেছে করোনা ভাইরাস। এক মাসেই আক্রান্ত হয়েছে ২৬ লক্ষ। ভ্যাকসিন উপলব্ধ না হওয়ায় কোয়ারেন্টাইন এবং সাধারণ কিছু চিকিৎসা দিয়েই এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করা হচ্ছে। তবে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত যারা তাঁদের ক্ষেত্রে অক্সিজেন উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করছে। পরিসংখ্যান বলছে ৫০ হাজারের কিছু বেশি রোগীদের ক্ষেত্রে ফুসফুসের কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় বাইরে থেকে অক্সিজেন দেওয়ার প্রয়োজন হয়ে পড়ছে। মার্চ মাস থেকেই অক্সিজেনের চাহিদা বেড়েছে প্রায় ২ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন। আর সেই কারণে এই বিপুল চাহিদা মেটাতে গিয়ে জীবনদায়ী গ্যাসের অভাবে হাঁপিয়ে উঠছে হাসপাতালগুলি।
সরবরাহ কীভাবে হচ্ছে?
সাধারণভাবে উৎপাদন ঘর থেকে রোগীর কাছে অক্সিজেন পৌঁছে দিয়ে সময় লাগে তিন থেকে পাঁচ দিন। অনেকসময় ডিলাররাও দেরী করে। আবার বেশ কিছু ক্ষেত্রে সিলিন্ডারে অক্সিজেন ভরা থেকে হাসপাতালে সরবরাহ করার কাজের মাঝে কোথাও ভুলত্রুটি হলেও সেখানে অনেকটা সময় ব্যয় হয়। ভারতের যেসব অক্সিজেন প্রস্তুতকারী শীর্ষ সংস্থারা রয়েছে ক্রায়োজেনিক ডিসটিলেশন পদ্ধতি ব্যবহার করে লিক্যুইড অক্সিজেন প্রস্তুত করে। যেটা ৯৯.৫ শতাংশ শুদ্ধ। এই পদ্ধতিতে সময় লাগে প্রায় আড়াই দিন। এরপর এই লিক্যুইড অক্সিজেনকে ক্রায়োজেনিক ট্রান্সপোর্ট ট্যাঙ্কারের মাধ্যমে -১৮০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডে ছোটো ছোটো প্লান্ট-এ পাঠানো হয়। সেখানে লিক্যুইড অক্সিজেনকে গ্যাসে পরিণত করে তা সিলিন্ডারে ভর্তি করে হাসপাতালগুলিতে পাঠান হয়।
ভারতের যা পরিকাঠামো সেখানে দৈনিক ৬ হাজার ৯০০ মেট্রিক টন লিক্যুইড অক্সিজেন তৈরি করা সম্ভব। এর মধ্যে ব আড়াই হাজার টন যায় হাসপাতালগুলিতে আর প্রায় ২৩০০ মেট্রিক টন লিক্যুইড অক্সিজেন যায় ইন্ডাস্ট্রিগুলিতে। এখন এখানেই প্রশ্ন উঠছে।
ভারতে তো যথেষ্ট পরিমাণে অক্সিজেন উৎপাদন হচ্ছে তাহলে সমস্যা কোথায় তৈরি হচ্ছে?
* গত ছ'মাসে চিকিৎসাক্ষেত্রে অক্সিজেনের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে পাল্লা দিয়ে। সমস্যা হচ্ছে ট্রান্সপোর্টের ক্ষেত্রে। ভারতে অক্সিজেন ট্যাঙ্কার রয়েছে ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৫০০। চাহিদা বাড়লেও এই সংখ্যক ট্যাঙ্কার দিয়ে সে চাহিদা পূরণ করা যাচ্ছে না। বর্তমানে বেশ কয়েকটি নাইট্রোজেন ট্যাঙ্কার ব্যবহার করে অক্সিজেন সরবরাহের কাজ শুরু করেছে সংস্থাগুলি।
* এরপর যে সমস্যা দেখা দিয়েছে তা হল স্টোরেজের। বেশিরভাগ হাসপাতালের নিজস্ব অক্সিজেন ট্যাঙ্কার নেই। এক মিনিটে কোভিড আক্রান্ত রোগীর ৩০ থেকে ৬০ লিটার অক্সিজেনের প্রয়োজন পড়ছে। একটি সিলিন্ডারে এক ঘন্টা অবধি সাপোর্ট দেওয়া যাচ্ছে। অনেক রাজ্য যেমন ট্যাঙ্কারের পরিবর্তে বড়ো আয়তনের অক্সিজেনের সিলিন্ডার বসানোর পরিকল্পনা নিয়েছে।
*অনেক রাজ্য অক্সিজেন উৎপাদন প্লান্ট তৈরি করেছে। কিন্তু সেক্ষেত্রে শুদ্ধতার মাত্রা কমে তা ৯৩.৫ শতাংশ হচ্ছে। আর প্লান্ট তৈরি করা সময় সাপেক্ষও। অল ইন্ডিয়া ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্যাসেস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে দেশে ৫০০টিরও বেশি প্লান্ট তৈরির কাজ চলছে এখন।
দাম বৃদ্ধি
চাহিদা বাড়তেই দামও বেড়েছে পাল্লা দিয়ে। অক্সিজেন সিলিন্ডারের দাম যেখানে ছিল ১০০ টাকা থেকে ১৫০ টাকা। কোভিড আবহে সেই দাম বেড়ে হয়েছে ৫০০ টাকা থেকে ৭০০ টাকা। দাম বৃদ্ধির আরেকটি কারণ হল হাসপাতালে যদি বেড না পাওয়া যায় এই আশংকা থেকে অনেকেই বাড়িতে অক্সিজেন সিলিন্ডার কিনে কিনে রাখছেন। বেসরকারি নার্সিংহোমে রোগীকে দৈনিক অক্সিজেনের দাম বাবদ ১ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ৩ হাজার টাকা দিতে হচ্ছে। আইএএস অফিসার ইন চার্জ ডা: সুধাকর সিন্ডে বলেন, "আমরা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে দেখেছে দৈনিক অক্সিজেনের মূল্য কখনই ৪০০ টাকার বেশি হতে পারে না।"
এদিকে সমস্যায় পড়েছে শিল্পক্ষেত্রগুলিও। লকডাউনের সময় অসুবিধা না হলেও আনলক পর্যায়ে খুলেছে কলকারখানা। কিন্তু সাপ্লাই লিমিটেড।
সরকার কী করছে?
অক্সিজেনের অপচয়ও হয়। সরকার বর্তমানে সেই দিকেই নজর দিয়েছে। যাদের প্রয়োজন হচ্ছে না তাদের অক্সিজেন দেওয়ার দরকার নেই, কখনও কখনও অক্সিজেন পাইপলাইন থেকে লিক হওয়ার খবর পাওয়া যায় সেইদিকে লক্ষ্য রাখতে বলা হচ্ছে। বেঁধে দেওয়া হচ্ছে হাসপাতালের অক্সিজেন চাহিদাকে। প্রতিটি ওয়ার্ডে কীভাবে অক্সিজেন দেওয়া হবে তাও বলে দেওয়া হচ্ছে।
Read the full story in English
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন