ইরান এবং ভারত। সম্পর্কে 'বন্ধু' দুই দেশ। কিন্তু সম্প্রতি বেশ কয়েকটি ঘটনায় দিল্লি-তেহরানের সুদীর্ঘ সম্পর্কে যেন আঁধার নেমে এসেছে। বরং ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের বাঁধন শক্ত হয়েছে ইরানের পড়শি দেশ সৌদি আরবের। সিঙ্গাপুরের ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সাউথ এশিয়ান স্টাডিজের ডিরেক্টর সি রাজা মোহন সম্প্রতি দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে প্রকাশিত কলামে এমনটাই ব্যাখ্যা করেছেন।
লেখক জানান যে ভারতের সঙ্গে ইরানের যে সম্পর্ক ছিল তা কেবল বিশ্ব রাজনৈতিক কিংবা কূটনৈতিক ক্ষেত্রের নয়। ইরানের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক 'এক্সট্রা স্পেশাল'। আর সেই বন্ধুত্বর 'বিশেষত্বে' বেশ কিছু কারণও রয়েছে। তা ইতিহাস হোক কিংবা শক্তি সরবরাহের ক্ষেত্র বা সুরক্ষা। রাজনীতির আঙিনা ছাড়িয়ে তাই ইরান অনেক 'ভালো বন্ধু' ছিল ভারতের জন্য এমনটাই মনে করেন সি রাজা মোহন।
তবে প্রশ্ন উঠতে পারে সেই সুদীর্ঘ সম্পর্কে ইতি টানার প্রয়োজন কোথায়?
তবে লেখকের মতে বর্তমানে ভারতের কাছে আরব-আমিরশাহী অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ, ইরান নয়। তা সে আমদানি-রফতানি হোক, ব্যবসা, শক্তি ক্ষেত্র, অর্থনীতি কিংবা সুরক্ষা। কৌশলগত সম্পর্কের বিচারে আরব অনেক কাছের। প্রসঙ্গত, ২০১০ সালের রিয়াধ ঘোষণাই ভারত ও সৌদি আরবকে কৌশলগত সম্পর্কে অনেকটা আবদ্ধ করেছে।
রাজা মোহনের কথায়, "এখন কয়েক লক্ষ ভারতীয়রা আরবে কাজ করছেন। তাঁদের থেকে 'হার্ড কারেন্সি' ও পাওয়া সম্ভব হচ্ছে ভারতের। তার থেকেও বড় বিষয় হল ব্যাণিজ্যিক ক্ষেত্রে ইরানের থেকেও আরব সঙ্গে সম্পর্ক এখন অনেক বেশি দৃঢ়। শুধু তাই নয়, কয়েক বছর ধরেই আরব এবং সংযুক্ত আমিরশাহী ভারতকে জঙ্গি হামলার বিরুদ্ধে সমর্থন জানিয়ে আসছে। মুসলিমপ্রধান দেশগুলিতে ভারতের স্থান অক্ষুণ রাখারও চেষ্টা করে চলেছে।"
এদিকে, ইরানের সঙ্গে সম্পর্কের তীক্ততার শুরু একটি বড় রেল প্রকল্পের চুক্তি থেকে ভারতকে সরিয়ে দেওয়া। তাও আবার মার্কিনী ভ্রুকুটির কারণে। ইরানের চাবাহার সমুদ্রবন্দর থেকে আফগানিস্তান সীমান্ত লাগোয়া ইরানি শহর জাহেদান পর্যন্ত ৬২৮ কিলোমিটার দীর্ঘ রেললাইন নির্মাণের জন্য ভারত, ইরান ও আফগানিস্তানের মধ্যে একটি ত্রিদেশীয় চুক্তি হয়। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ সেই প্রকল্প থেকে ভারতকে বাদ দেওয়ার ঘটনায় তেহরান ও নয়াদিল্লির মধ্যকার দীর্ঘদিনের সম্পর্কতে এসেছে অম্ল-মধুরতা।
এরপরও যে বিষয়টি ইরান-ভারত সম্পর্কের ফাঁস জটিল করেছে তা হল এই রেল প্রকল্পে চিনের অন্তর্ভুক্তি। যা নিয়ে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিল বিরোধী কংগ্রেস শিবির। সব মিলিয়ে অভ্যন্তরীণ এবং ব্যাহিক যে সমস্যা তৈরি হয়েছে সেখানে ভারতের সঙ্গে ইরানের ব্যবসায়িক যোগাযোগ রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
ভারতের তাহলে কী করা উচিত?
লেখকের মতে, ইরানের সঙ্গে এখন সম্পর্ক রাখা ভারতের জন্য বেশ কঠিন। তিনি বলেন, "দিল্লিকে অনেক বেশি কৌশলী হতে হবে। এটা দুর্ভাগ্যজনক ঠিকই। কিন্তু এটাই বাস্তব।"
Read the story in English
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন