Advertisment

Explained: আমেরিকা-চিনের হাতে হাত, সন্ধি! ভারতের তাতে কতটা ক্ষতি, কী লাভ?

আমেরিকাকে বিরাট আশ্বাস দিয়েছে চিন।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
President Joe Biden and China's President President Xi Jinping walk in the gardens at the Filoli Estate in Woodside, Calif., Wednesday, Nov, 15, 2023, on the sidelines of the Asia-Pacific Economic Cooperative conference.

আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এশিয়া-প্যাসিফিক অর্থনৈতিক সম্মেলনের ফাঁকে (বুধবার, ১৫ নভেম্বর, ২০২৩) ক্যালিফোর্নিয়ার উডসাইডের ফিলোলি এস্টেটের বাগানে হাঁটছেন। (এপি)

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আর চিনের নেতারা বর্তমানে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের পতন রোখার চেষ্টা করছেন। সেই কারণে ভারতের উদ্বেগ কমতে চলেছে। কারণ, বিশ্বের দুই সেরা শক্তি হাতে হাত মিলিয়েছে। বর্তমান বিশ্বে মার্কিন-চিন সম্পর্কের বৈচিত্র্যই সমস্ত প্রধান শক্তি এবং অঞ্চলকে প্রভাবিত করে। সেই কারণে সান ফ্রান্সিসকোতে এশিয়ান অর্থনৈতিক শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং চিনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের মধ্যে শীর্ষ সম্মেলন নিয়ে বিশ্বব্যাপী ব্যাপক আগ্রহ। এমনিতে এশিয়ায় 'জি-টু' বা চিন-আমেরিকা সহযোগিতা নিয়ে ভারত সর্বদা উদ্বেগে থাকে। সান ফ্রান্সিসকো শীর্ষ সম্মেলন সেই উদ্বেগ কিছুটা হলেও কমাল। আন্তর্জাতিক দুই প্রধান শক্তির কৌশলগত অংশীদারিত্ব থেকে সংঘাতের বিরতি ভারতেরও আর্থিক ক্ষেত্রে অগ্রগতি ঘটাবে। এমনটাই মনে করছে নয়াদিল্লি।

Advertisment

বাড়বে চিনের বাণিজ্য
পাশাপাশি, নয়াদিল্লিকে মার্কিন-চিন সম্পর্কের কিছু নতুন ক্ষেত্র- যেমন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ন্ত্রণের মত ব্যাপারে গভীর মনোযোগ দিতে হবে। বুধবার এনিয়েই বাইডেন এবং জিনপিং আলোচনা করেছেন। সম্ভাব্য মার্কিন-চিন বোঝাপড়া দীর্ঘমেয়াদে, এআই-এর বিশ্বব্যাপী নিয়মগুলোর ওপর বড় প্রভাব ফেলবে। বর্তমানে ভারত এবং চিন, উভয় দেশই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে শিল্প আনতে তৎপর। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের অগ্রগতি, চিনের সেই আকাঙ্ক্ষাকে কিছুটা হলেও পূরণ করবে। পাশাপাশি, পশ্চিমী দুনিয়ার অন্য দেশগুলোর সঙ্গেও চিনের ব্যবসায়িক সম্পর্ককে দৃঢ় করবে।

ভারতের হতাশার কারণ নেই
সেক্ষেত্রে ভারতেরও হতাশার বিশেষ কারণ নেই। কারণ, ভারতীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে আঞ্চলিক নিরাপত্তা, মধ্যপ্রাচ্যের বর্তমান সংকট এবং ইউরোপে ইউক্রেন যুদ্ধের ব্যাপারে দুই নেতার মধ্যে কথোপকথনে বড় অগ্রগতির লক্ষণ দেখা যায়নি। বিশেষ করে তাইওয়ানের ব্যাপারে তো দেখা যায়নিই। যে তাইওয়ানকে চিন তার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের 'সবচেয়ে স্পর্শকাতর সমস্যা' হিসেবে দেখে! শি জিনপিং চান যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, 'তাইওয়ানের স্বাধীনতা'র পক্ষে সোচ্চার হওয়া বন্ধ করুক। অন্যদিকে ওয়াশিংটন চায়, বেইজিং চিনের সঙ্গে তাইওয়ানকে জু়ড়ে দেওয়ার জন্য শক্তি প্রয়োগ বন্ধ রাখুক।

চিন-মার্কিন সম্পর্কে গতি
দুই পক্ষের মধ্যে উচ্চ-স্তরের রাজনৈতিক ও সামরিক যোগাযোগ নবীকরণের সিদ্ধান্ত, তর্কাতীতভাবে, চিন-মার্কিন সম্পর্কে নতুন গতি। নিরাপত্তার ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও সেক্ষেত্রে অনেক বেশি নিরাপদ থাকবে। গত কয়েক বছর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিরলস অর্থনৈতিক ও সামরিক চাপ আর আর্থিক মন্দা, নতুন সম্পর্কের হাত ধরেই চিন কাটিয়ে উঠতে চায়। চিনা নেতারা এখন জোর দিয়ে বলছেন যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং চিন, দুই দেশের একে অপরের থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার সামর্থ্য নেই।

চিনের আশ্বাস
তারই মধ্যে আবার জিনপিং আশ্বস্ত করে বাইডেনকে জানিয়েছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ছাপিয়ে যাওয়ার কোনও ইচ্ছাই চিনের নেই। বিনিময়ে চিন চায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধুত্ব। পাশাপাশি, গত তিন বছর বাইডেন প্রশাসনও চিনের সঙ্গে সম্পর্ক মধুর করতে উৎসাহী হয়ে উঠেছিল। দুই রাষ্ট্রই পারস্পরিক প্রতিযোগিতাকে সংলাপের মধ্যে আনতে চেয়েছিল। সম্পর্ক স্থিতিশীল করতে ওয়াশিংটন 'গার্ড্রেল' নিয়ে আলোচনার জন্য চাপ দিচ্ছিল। আর, বেজিং দাবি করেছে যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকেও চিনের ওপর আরোপ করা অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতা সংক্রান্ত নিষেধাজ্ঞাগুলো তুলে নিতে হবে।

বিভিন্ন জোটে আছে আমেরিকা
আপাতত, চিনের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞাগুলি বহাল আছে। বাইডেন-জিনপিং শীর্ষ সম্মেলনের লক্ষ্য ছিল, পরস্পরের ওপর আস্থা তৈরি। বাইডেন প্রশাসন গত তিন বছরে এশিয়ায় বড় ধরনের ভূ-রাজনৈতিক লাভ করেছে। যার মধ্যে রয়েছে জাপান, কোরিয়া এবং অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে শক্তিশালী দ্বিপাক্ষিক জোট। টোকিও এবং সিওলের সঙ্গে একটি ত্রিপাক্ষিক কৌশলগত কাঠামো তৈরি করা। ফিলিপাইনসের সঙ্গে একটি জোট পুনরুজ্জীবিত করা। পাশাপাশি, ভারত এবং ভিয়েতনামের সঙ্গে নতুন কৌশলগত অংশীদারিত্ব। এরই সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, ভারত এবং জাপানের মধ্যে তৈরি চতুর্ভুজ মঞ্চ শীর্ষ পর্যায়ের মঞ্চে উন্নীত হয়েছে। অস্ট্রেলিয়া ও ব্রিটেনের সঙ্গে AUKUS নামে একটি নতুন ফোরাম তৈরি করেছে আমেরিকা। তবুও, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপে বড় সংকটের মুখোমুখি। কারণ, সেখানে পশ্চিমী বাহিনী ইউক্রেনে এবং মধ্যপ্রাচ্যে রাশিয়ার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। গাজার যুদ্ধ আবার আঞ্চলিক শৃঙ্খলাকে বদলে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছে।

আরও পড়ুন- গোপনীয়তা আর ট্যাক্সের চিন্তা নেই, ইউরোপের এই ছোট্ট দেশই এখন ভারতীয় ধনকুবেরদের লক্ষ্য

বিশেষ বদলাবে না
এই পরিস্থিতিতে চিনের সঙ্গে সম্পর্ককে স্থিতিশীল রাখা আগামী দিনগুলিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রধান উদ্দেশ্য। যদিও তাদেরকেও চিনের সঙ্গে সম্পর্ক ক্রমাগতভাবে মূল্যায়ন করতে হবে। আবার, ভারতকেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চিন এবং রাশিয়ার মধ্যে সম্পর্কের মূল্যায়নের ওপর জোর দিতে হবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক জোরদার করার জন্য সর্বতোভাবে চেষ্টা চালাতে হবে নয়াদিল্লিকে। রাশিয়ার সাথে তার দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ক বজায় রাখা এবং চিনের সঙ্গে জটিল সম্পর্ক চালিয়ে যাওয়া ভারতের ভবিষ্যৎ। সঙ্গে, আন্তর্জাতিক দুনিয়ায় ভারতের অগ্রগতি অব্যাহত রাখার চেষ্টাও চালাতে হবে। ভারতকে মাথায় রাখতে হবে, সান ফ্রান্সিসকো থেকে মার্কিন-চিন সম্পর্কের নাটকীয় পরিবর্তন ঘটবে, এমন সম্ভাবনা কম।

সি. রাজা মোহন এশিয়া সোসাইটি পলিসি ইনস্টিটিউটের একজন সিনিয়র ফেলো এবং দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক।

India china russia USA Joe Biden Xi Jinping Meeting
Advertisment