ভারতের প্রথম গোলাপি বলে দিন রাতের টেস্ট ম্যাচ শুরু হয়ে গিয়েছে। বাংলাদেশের সঙ্গে এই ম্যাচ আয়োজনের ক্ষেত্রে অন্যতম ভূমিকা পালন করেছেন বিসিসিআইয়ের সভাপতি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। ক্ষমতায় আসার দ্বিতীয় দিনেই এই বৈপ্লবিক সিদ্ধান্ত নেবার পথে তিনি পাশে পেয়ে গিয়েছিলেন ভারতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক বিরাট কোহলিকেও। সৌরভ জানিয়েছেন বিরাট তাঁকে সম্মতি দিতে সময় নিয়েছিলেন মাত্র আধ মিনিট।
গোলাপি বলের টেস্ট- সব তথ্য এক নজরে
বেলা সাড়ে বারোটায় টস হবার পর খেলা শুরু হয় বেলা একটায়। মধ্যাহ্নভোজের বিরতি হবে বেলা তিনটেয়, চলবে ৩টে ৪০ মিনিট পর্যন্ত। চা পানের বিরতি বিকেল ৫টা ৪০-এ, চলবে সন্ধে ৬টা পর্যন্ত। শেষ সেশনের খেলা হবে সন্ধে ৬টা থেকে রাত ৮টা অবধি।
ভারতীয় তারকা ক্রিকেটার শচীন তেণ্ডুলকর, সুনীল গাভাসকর ও কপিলদেব ছাড়া ব্যাডমিন্টন তারকা পিভি সিন্ধু, দাবার বিশ্বজয়ী বিশ্বনাথন আনন্দ এবং টেনিস তারকা সানিয়া মির্জাও এই টেস্ট উপলক্ষে মাঠে হাজির থাকছেন।
বাংলাদেশের প্রধামন্ত্রী শেথ হাসিনা ইডেনে ঘণ্টা বাজিয়ে ম্যাচের উদ্বোধন করছেন। থাকছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও।
গোলাপি বলের টেস্টের জন্য কতটা তৈরি কলকাতার পিচ?
গোলাপি বলের ঔজ্জ্বল্য বজায় রাখবার জন্য পিচে বেশি ঘাস থাকা জরুরি। ইএসপিএন ক্রিকইনফোতে ইডেন গার্ডেন্সের মুখ্য গ্রাউন্ডসম্যান সুজন মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন গোলাপি বলের পালিশ বজায় রাখার জন্য ৬ মিলিমিটার ঘাস রাখা হচ্ছে।
গোলাপি বলের ক্রিকেটের মূল বিষয় হচ্ছে বল দেখতে পাওয়া। গ্রাউন্ডস্টাফদের ফলে নিশ্চিত করতেই হবে যাতে বল ধূসর বা ময়লা না হয়ে যায়। ফলে পিচ ছাড়া আউটফিল্ডেও পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘাস রাখা হচ্ছে।
শেষ সেশনের খেলা যেহেতু সন্ধেয় হবে, তখন শিশির কতটা ফ্যাক্টর হবে?
শীত পড়ছে, ফলে শিশির একটা বড় ভূমিকা পালন করবে বলেই মনে করা হচ্ছে। শিশির কতটা প্রভাব ফেলবে তা সন্ধের আগে খুব একটা বোঝা যাবে না। মাঠে জল দেওয়া কয়েকদিন আগেই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বেশি শিশির পড়লে বলের গ্রিপ একটা সমস্যার ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে, বিশেষ করে স্পিনারদের ক্ষেত্রে। এর আগে প্লেয়াররা বলেছেন বেশি শিশির পড়লে বল সাবানের মত হয়ে দাঁড়ায়।
ইডেন গার্ডেনের পিচ কিউরেটর বলেছেন শিশিরের বিষয়টি ম্যানেজ করা সম্ভব হবে। তিনি জানিয়েছেন সপ্তাহের শুরু থেকে মাঠে শিশির-নিরোধী স্প্রে করা শুরু হয়ে গিয়েছে।
গোলাপি বলের ম্যাচ প্রথম কোথায় খেলা হয়?
প্রথম গোলাপি বলের ম্যাচ খেলা হয়েছিল ২০০৯ সালে। প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার মহিলা ক্রিকেট দল। ২০১০-১১ সালে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড তাদের প্রথম শ্রেণির প্রতিযোগিতা কয়েদ-এ আজম ট্রফির ফাইনাল খেলেছিল কমলা রঙের বলে। ২০১৪ সালে শেফিল্ড শিল্ডের ম্যাচে অস্ট্রেলিয়া খেলেছিল গোলাপি কোকাবুরা বলে।
দিন-রাতের প্রথম আন্তর্জাতিক টেস্ খেলা হয়েছিল অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের মধ্যে ২০১৫ সালের নভেম্বর মাসে। তবে সে ম্যাচ মাত্র তিন দিনে শেষ হয়ে যায়। কোনও দলই ২৫০ পেরোতে পারেনি। হ্যাজেলউড মোট ৬টি উইকেট নিয়েছিলেন।
তার পর থেকে মোট ১০টি দিন রাতের ক্রিকেট টেস্ট খেলা হয়েছে। এ যাবৎ অস্ট্রেলিয়াই গোলাপি বলের ক্রিকেটে সফলতম দল। তারা পাঁচটি ম্যাচ খেলে পাঁচটিতেই জিতেছে। সাফল্যের দিক থেকে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে শ্রীলঙ্কা। তিনটির মধ্যে ২টি ম্যাচ জিতেছে তারা। ইংল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং নিউজিল্যান্ড তিন দলই একটি করে গোলাপি বলের টেস্ট জিতেছে।
ভারতে ২০১৬ সালের দলীপ ট্রফিতে একটি ম্যাচে গোলাপি বলে খেলা হয়েছিল। সিএবি-ও স্থানীয় সুপার লিগের এক ফাইনাল ম্যাচে গোলাপি বলে খেলার আয়োজন করেছিল। সে ম্যাচে খেলেছিলেন মহম্মদ শামি ও ঋদ্ধিমান সাহা।
এখনও পর্যন্ত ১১টি যে দিন রাতের টেস্ট গোলাপি বলে খেলা হয়েছে, তাতে ২৫৭টি উইকেট নিয়েছেন ফাস্ট বোলাররা। স্পিনারদের দখলে মাত্র ৯৫টি উইকেট।
দিন-রাতের টেস্ট ম্যাচের জন্য কী প্রয়োজন?
২০০০-এর শেষ দিকে টেস্ট ম্যাচে যকন ভিড় কম হতে শুরু করে তখনই দিন-রাতের টেস্টের প্রসঙ্গ নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। দিন রাতের টেস্টে খেলা টিভির প্রাইমটাইমে যেমন দেখানো যায়, তেমনই কাজের পর অনেকেই মাঠে আসতে পারেন। অস্ট্রেলিয়া এ যাবৎ পাঁচটি গোলাপি বলের টেস্ট খেলেছে এবং তাদের রিপোর্ট অনুসারে মাঠে দর্শকের সংখ্যা যথেষ্ট ভাল।
লাল, সাদা ও গেলাপি বলের মধ্যে তফাৎ কী?
নতুন লাল বলের পালিশ থাকে প্রায় ৬০-৭০ মিনিট। গোলাপি বলের পালিশ থাকে প্রায় একটা সেশন জুড়ে। এ জন্যেই গোলাপি বল স্পিনারদের থেকে জোরে বোলারদের বেশি সাহায্য করে।
লাল বলের সেলাই হয় সাদা রঙের। গোলাপি বলের সিমের রং কালো। শিশিরের কথা মাথায় রেখেই গোলাপি বলের সিম বেশি স্পষ্ট রাখা হয়। সবচেয়ে বড় কথা গোলাপি বলে লাক্ষার অতিরিক্ত আস্তরণ দেওয়া হয় চকচকে ভাবের বিষয়টি মাথায় রেখে।
দামের তারতম্যের বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ। এসজি গোলাপি বলের দাম ২৭০০ টাকা যা কোকাবুরার তুলনায় অনেক সস্তা। কোকাবুরা গোলাপি বলের দাম ৮০০০ টাকা। দিনের বেলার টেস্ট খেলার জন্য লাল এসজি বলের দাম হয় ১৩০০ টাকাক মতন। ওয়ান-ডে ম্যাচে ভারত যে সাদা কোকাবুরা বলে খেলে তার দাম ১২ হাজার টাকার মত।