Advertisment

গো-হত্যা ছাড়া কি আর কোনও উপায় নেই?

একবার গরু দুধ দেওয়া বন্ধ করে দিলে তাদের বর্জন করে দেন ডেয়ারি চাষিরা, কারণ তাঁদের হিসেবে এসব গরু গুলির জন্য দৈনিক ৪০ থেকে ৫০ টাকা পশুখাদ্য সহ অন্যান্য খরচ হয়, যা তাঁদের কাছে নেহাৎই ভার।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Cow

রাস্তায় পরিত্যক্ত গরু নাভিশ্বাস তুলে দিয়েছে

রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছে ছাড়া গরু, যার জেরে পথ দুর্ঘটনা ঘটছে, বিক্ষোভ হচ্ছে। পাঞ্জাব এই অদ্ভুত সমস্যার মুখে দাঁড়িয়ে বেশ কিছুদিন যাবৎ। কংগ্রেস তাদের নির্বাচনী ইস্তেহারে এই সমস্যার সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। গত ১৩ সেপ্টেম্বর মানসার এলাকার বাসিন্দারা অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্না শুরু করেছেন। দাবি উঠেছে ভারতীয় গরুদের দায়িত্ব নেওয়া হবে গোশালায় আর অন্যদিকে আমেরিকান গরুর দায়িত্ব নিতে হবে সরকারকে। এ নিয়ে বিতর্কও শুরু হয়েছে।

Advertisment

আপ বিধায়ক আমন অরোরা পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ক্যাপ্টেন অমরিন্দর সিং দেশি এবং বিদেশি গরুর মধ্যে তফাৎ করতে চেয়েছেন এবং বলেছেন দেশি গরু রক্ষা করতে হবে, মার্কিন গরু জবাই করা হোক।

আমেরিকান ব্রিডের গরু ভারতে এল কী করে?

জার্সি গরু এবং হোলস্টেইন ফ্রেইজিয়ান (এইচএফ) গরু ভারতে পাওয়া যায়। পাঞ্জাব প্রাণিসম্পদ দফতর এবং পশুসম্পদ বিভাগ বলছে, ৭-এর দশকের গোড়ায় আমেরিকান এই প্রজাতির ষাঁড়ের বীর্য আমদানি করা হত। ভারতে দুধের ঘাটতি মেটানোর জন্য  কিছু ষাঁড় ও গরুও আমদানি করা হয়েছিল। বাছুর হবার পর ভারতীয় গরু গড়ে দিনে ১০-১৫ লিটার দুধ দেয়, অন্যদিকে এইচএফ ও জার্সি গরু দুধ দেয় গড়ে দৈনিক ২০-২৫ লিটার। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এ প্রজাতির গরু দিনে ৭০ লিটার অবধি দুধ দিয়ে থাকে। তবে ভারতের কিছু ফার্মেও এইচ এফ এবং জার্সি গরুর উন্নততর প্রজাতির পালন করা হয়, যারা দিনে ৬০ লিটার পর্যন্ত দুধ দেয়, যা গড় দুধ উৎপাদনের দ্বিগুণ। পাঞ্জাবের সরকারি আধিকারিক তথা দুগ্ধ বিশেষজ্ঞ ডক্টর অনিল পট্টনায়কের মতে এ ছিল শ্বেত বিপ্লব। এ ছাড়া ভারতীয় গরুদের শরীরে বিদেশি ষাঁড়ের বীর্য কৃত্রিমভাবে ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে প্রবেশ করানো হত।

আরও পড়ুন, গ্রেটা থুনবার্গ কি বিশ্বের জলবায়ু নীতিতে কোনও পরিবর্তন ঘটাতে সক্ষম?

এ ধরনের গরু কতদিন দুধ দেয়?

বিদেশি ব্রিডের গরু ১০ থেকে ১৫ বছর দুধ দেয়, যা ভারতীয় গরুর তুলনায় বেশি। ফলে এ ধরনের গোপালনের মাধ্যমে কৃষকদের লাভ বেশি হয়। পাঞ্জাবের আমেরিকান গরুর ধরন হল এইচএফ ও জার্সি এবং ভারতীয় গরু হল সাহিওয়াল, রাঠি, গির প্রভৃতি।

গবাদি পশুগুলি পরিত্যক্ত হয়ে পড়ল কীভাবে?

একবার গরু দুধ দেওয়া বন্ধ করে দিলে তাদের বর্জন করে দেন ডেয়ারি চাষিরা, কারণ তাঁদের হিসেবে এসব গরু গুলির জন্য দৈনিক ৪০ থেকে ৫০ টাকা পশুখাদ্য সহ অন্যান্য খরচ হয়, যা তাঁদের কাছে নেহাৎই ভার। মহিষদের পশুমাণ্ডিতে বিক্রি করে দেওয়া হয় যেখানে সেগুলি জবাই করা হয়। কিন্তু গরুগুলিকে রাস্তায় ছেড়ে দেওয়া হয় এবং ডেয়ারি চাষিরা দুধ দিতে পারেন এমন নতুন গরু কেনেন।

পাঞ্জাবে কত পরিত্যক্ত গবাদি পশু রয়েছে? সেগুলি কীভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়ে থাকে?

পাঞ্জাব সরকারের ২০১২ সালের সেন্সাস অনুসারে রাজ্যে প্রায় ২৪ লক্ষ গবাদি পশু রয়েছে। সাম্প্রতিক সেন্সাস রিপোর্ট কিছুদিনের মধ্যেই প্রকাশিত হবার কথা। এখন পাঞ্জাবের রাস্তায় দুধ উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছে এমন পরিত্যক্ত গবাদি পশুর সংখ্যা প্রায় ১.২৫ লক্ষ। রাজ্যে প্রায় ১.৭৫ লক্ষ গোশালা রয়েছে। পাঞ্জাবের প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী ত্রিপৎ রাজিন্দর সিং বাজওয়া সম্প্রতি বলেছেন, রাজ্যে ২০টি গোশালা রয়েছে যাদের ২০ হাজার গবাদি পশু রাখার ক্ষমতা রয়েছে, কিন্তু সেখানে রয়েছে মাত্র ১১০০০ গবাদি পশু। তবে রিপোর্ট বলছে গৌশালাগুলি পরিপূর্ণ রয়েছে একন।

ধর্মবিশ্বাসের কারণে, মানুষজন কেবলমাত্র ভারতীয় গরুর দায়িত্ব নিতে আগ্রহী। এই গরুগুলিকে তাঁরা পবিত্র বলে মনে করেন। আরএসএসের গৌ সংবর্ধন ইউনিটের তরফ থেকে পাঞ্জাব সরকারকে এ সমস্যা মেটানোর জন্য আমেরিকান গরুর বীর্য আমদানি বন্ধ করে দিতে বলা হয়েছে। এমন গুজবও রয়েছে আমেরিকান প্রজাতির গরু বেশি হিংস্র হবার কারণে মালিকরা তাদের গোশালায় রাখতে চায় নাষ অনেক সংগঠনই সরকারের কাছে গরুর সংজ্ঞা জানতে চেয়েছে। তবে প্রাণিসম্পদ দফতরের বিশেষজ্ঞরা বলছেন গরু যে প্রজাতিরই হোক, সব গরুই এক।

আরও পড়ুন, হিন্দি কি ৭০ বছর আগেই রাষ্ট্রভাষা হতে পারত?

আমেরিকান গরু কি বেশি হিংস্র?

কোনও গবেষণা থেকেই এরকম প্রমাণ উঠে আসছে না। গুরু অঙ্গদদেব প্রাণী ও পশুবিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিরেক্টর ডক্টর এইচ কে ভার্মা বলেছেন এগুলি সবই গৃহপালিত পশু। তিনি আরও বলেন, "এইচএফ ও জার্সি গরু শীতল জলবায়ুতে বেড়ে ওঠার মত প্রজাতি, কিন্তু ভারতের জলবায়ু অপেক্ষাকৃত উষ্ণ। ফলে চাষিদের উচিত তাদের পশুখামারে ফ্যান বা জল ছেটানোর বন্দোবস্ত রাখা। না হলে এই প্রজাতির গরু ক্লান্তির শিকার হয় এবং কোনও কোনও সময়ে ডিম্বাণু তৈরি বন্ধ করে দেয়, যার জেরে এরা অফলা হয়ে পড়ে। ডেয়ারি চাষিরা যে এদের পরিত্যাগ করে, সেটাও একটা কারণ। দুধ দেওয়া বন্ধ করার কারণের সঙ্গে এটিকেও হিসেবে রাখতে হবে।"

 ভারতীয় গরুর সপক্ষে কারা?

পাঞ্জাব আরএসএসের গৌ সংবর্ধন ইউনিটের সভাপতি চন্দ্র কান্ত জানিয়েছেন, ২০০৯ সাল থেকে আরএসএসের গোসেবা মিশন চলছে। "আমরা চাষিদের বোঝাচ্ছি যাতে তাঁরা কেবলমাত্র দেশি গরু রাখেন। সারা দেশে আমাদের গবেষণা কেন্দ্রে গোশালা রয়েছে, যেখানে আমরা গোদুগ্ধ, গোমূত্র এবং গোবর থেকে বিভিন্ন সামগ্রী উৎপাদন করি। তাই আমরা চাষিদের কেবল দেশি গরু পালন করতে বলছি এবং একই সঙ্গে সরকারকে বলছি আমেরিকান প্রজাতি বীর্য আমদানি বন্ধ করতে। এদের দ্বারা বহুরকম রোগের সৃষ্টি হয় এবং এই ধরনের পশুগুলি হিংস্র হয়ে ওঠে এবং রাস্তায় পথচারীদের আক্রমণ করে।"

তিনি জানিয়েছেন এখন এইচ এফ এবং জার্সি গরুর শরীরে সাহিওয়াল ও অন্যান্য ভারতীয় প্রজাতির ষাঁড়ের বীর্য ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে প্রবেশ করানো হচ্ছে। চন্দ্রকান্ত বলেন, "যদি গরু দুধ দেওয়া বন্ধও করে দেয়, তাহলে মানুষ দেশি গরুকে পরিত্যাগ করবে না এবং গোশালাগুলি তাদের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রস্তুতও রয়েছে।"

 পাঞ্জাব সরকারের পরিকল্পনা কী?

গোশালা তৈরি ছাড়া, প্রাণিসম্পদ দফতর পরকল্পনা করেছে, যে সব গরু দুধ দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে, তাদের জন্য দৈনিক কিছু খরচ বরাদ্দ করা হবে, যাতে এই ধরনের পশু রাস্তায় না ছেড়ে দেওয়া হয়। এর ফলে গোশালা তৈরিরর হার কমানো সম্ভব হবে। তবে আধিকারিকরা জানিয়েছেন, এ বিষয়টি এখনও পরিকল্পনার স্তরেই রয়েছে।

Read the Full Story in English

Punjab RSS
Advertisment