প্রতিরক্ষা রপ্তানিতে ইতিহাস গড়ল ভারত। শুক্রবারই অত্যাধুনিক 'ব্রহ্মস' মিসাইল হাতে পেল ফিলিপিন্স। ভারত থেকে এই ক্ষেপণাস্ত্রের প্রথম ব্যাচ গেল সেদেশে। চিনকে ঠেকাতেই এই ক্ষেপনাস্ত্র কিনেছে ফিলিপিন্স। এমনটাই ধারণা বিশেষজ্ঞদের।
প্রতিরক্ষা রপ্তানিতে শক্তি বাড়াল ভারত। ৩০০০ কোটি টাকার 'ব্রহ্মোস ক্ষেপণাস্ত্র' ফিলিপিন্স-এর হাতে আজই তুলে দিয়েছে ভারত। ব্রাহ্মোস সুপারসনিক মিসাইলের জন্য ভারত ও ফিলিপিন্স-এর মধ্যে ৩০০০ কোটি টাকা মূল্যের একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। যার ফলস্বরূপ আজ সেদেশের হাতে তুলে দেওয়া হল সুপারসনিক মিসাইল।
এটিকে দেশের প্রতিরক্ষা রপ্তানিতে বড় পদক্ষেপ হিসাবে বিবেচনা করা হচ্ছে। বিমান বাহিনী বিশেষ বিমানে করে সেদেশে ক্ষেপণাস্ত্র পৌঁছে দিয়েছে। এ সময় ভারত ও ফিলিপিন্স-এর কর্মকর্তারা একে অপরকে মিষ্টিমুখ করান।
ফিলিপিন্স এমন সময়ে ভারতের কাছ থেকে ক্রুজ মিসাইল আমদানি করল যখন চিনের সঙ্গে সেদেশে বিরোধ চলছে। ধারণা করা হচ্ছে চিনা সেনাবাহিনীর হাত থেকে নিজেদের রক্ষা করতেই এই ক্ষেপনাস্ত্র কিনেছে সেদেশ। দু বছর আগে ভারত ও ফিলিপিন্স-এর মধ্যে ক্রুজ মিসাইলের একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। এই চুক্তির মূল্য ছিল ৩৭৫ মিলিয়ন ডলার (প্রায় ৩০০০ কোটি টাকা)।
ভারতীয় বায়ুসেনার C-17 গ্লোবমাস্টার কার্গো বিমান শুক্রবার ব্রহ্মোস ক্ষেপণাস্ত্রের প্রথম ব্যাচ নিয়ে সেদেশে পৌঁছেছে। ক্ষেপণাস্ত্রগুলি সেদেশের ফিলিপাইন মেরিন কর্পসের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। উল্লেখ্য গত এক বছরে ভারতের প্রতিরক্ষা রপ্তানি ৩২.৫ % বেড়েছে।
প্রতি বছরই ভারতের প্রতিরক্ষা রপ্তানি বাড়ছে। ২০২৩-২০৪ অর্থবর্ষে, ভারত ২১,০৮৩ কোটি টাকার অস্ত্র ও প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম রপ্তানি করেছে। গত বছরের তুলনায় যা ৩২.৫ % বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন সরকারের ১০ বছরের মেয়াদে ভারতের প্রতিরক্ষা রপ্তানি দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৩-২০১৪ অর্থবছরের তুলনায় গত ১০ বছরে প্রতিরক্ষা রপ্তানি ৩১ গুণ বেড়েছে।
ব্রহ্মোসের বিশেষত্ব কী?
ফিলিপিন্স ছাড়াও আর্জেন্টিনার মতো দেশও ব্রহ্মোস ক্ষেপণাস্ত্র কেনার আগ্রহ দেখিয়েছে। ব্রহ্মোস অ্যারোস্পেস প্রাইভেট লিমিটেড, ভারত ও রাশিয়ার যৌথ উদ্যোগ, 'ব্রাহমোস সুপারসনিক ক্রুজ মিসাইল' তৈরি করে। সাবমেরিন, জাহাজ, বিমান বা ল্যান্ড প্ল্যাটফর্ম থেকে এই ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ করা যেতে পারে। ব্রহ্মোস ক্ষেপণাস্ত্রের গতি 2.8 Mach বা এটি শব্দের তিনগুণ গতিতে লক্ষ্যবস্তুতে আক্রমণ করতে পারে। ফিলিপিন্স-এর হাতে বিশ্বের দ্রুততম ব্রহ্মোস হস্তান্তর করেছে ভারত। ব্রহ্মোস ক্ষেপণাস্ত্র, যা ভারতীয় ব্রহ্মপুত্র এবং রাশিয়ান মস্কভা নদীর নামে নামকরণ করা হয়েছে।
চিনের সাথে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মধ্যে, ফিলিপিন্স ২০১৩ সালে সামরিক আধুনিকীকরণের প্রচেষ্টা শুরু করে। ৩১ শে ডিসেম্বর, ২০২১-এ, ফিলিপিন্স প্রতিরক্ষা মন্ত্রক ঘোষণা করেছে যে ৩৭৫ মিলিয়ন ডলারে উপকূল-ভিত্তিক অ্যান্টি-শিপ মিসাইল সিস্টেম সরবরাহ করার প্রস্তাব গ্রহণ করে BrahMos Aerospace Pvt Ltd-এর কাছে একটি দরপত্র জারি করেছে।
ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থার বিতরণ এমন এক সময়ে হয়েছে যখন ফিলিপিন্স ও চিনের মধ্যে উত্তেজনা চরমে। যে কোন মুহূর্তে শুরু হতে পারে সামরিক সংঘর্ষ। এই প্রথম ভারতের পক্ষ থেকে চিনের শত্রুদের কাছে কোন অস্ত্র বিক্রি করা হয়েছে। ফিলিপিন্স-এর প্রেসিডেন্ট ইতিমধ্যে বলেছেন যে আমরা পিছিয়ে যাচ্ছি না এবং আমরা আমাদের সেনাবাহিনীকে আধুনিকীকরণের পথে হাঁটছি।
চিনের সঙ্গে যুদ্ধের আশঙ্কা মাথায় রেখেই ব্রহ্মোস ক্ষেপণাস্ত্র কিনেছে ফিলিপিন্স। দক্ষিণ চীন সাগরের বেশ কয়েকটি দ্বীপ নিয়ে বিরোধ রয়েছে। এসব দ্বীপ নিয়ে দুই দেশের উপকূলরক্ষী বাহিনী একাধিকবার মুখোমুখি হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ফিলিপিন্স অনেকটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখন ধারণা করা হচ্ছে, ব্রাহ্মোসের আগমনে ফিলিপিন্স-এর কৌশলগত শক্তি বহুগুণ বেড়ে যাবে। ব্রহ্মোস এমন একটি ক্ষেপণাস্ত্র যার সাথে চিনের কোন মিল নেই। এমতাবস্থায়, চিনা যুদ্ধজাহাজ ব্রহ্মোসের ফায়ারিং রেঞ্জের মধ্যে আসা এড়াতে চাইবে।