সপ্তম দফার নির্বাচনের আগে পশ্চিমবঙ্গে আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে সংবিধানের ৩২৪ নম্বর অনুচ্ছেদ। কিন্তু ওই অনুচ্ছেদে ঠিক কী রয়েছে? কেনই বা বাংলায় শেষ দফার নির্বাচনের আগে সংবিধানের ওই বিশেষ ধারার প্রয়োগের পক্ষে-বিপক্ষে যুযুধান কেন্দ্র ও রাজ্যের শাসকদল? এই অনুচ্ছেদ ঠিক কতখানি বিপাকে ফেলতে পারে তৃণমূলকে? আদৌ কি কোনও সুবিধা পাবে বিজেপি? নির্বাচনী প্রচারের শেষে চোখ বুলিয়ে নিন ৩২৪ নম্বর অনুচ্ছেদের উপরে। জেনে নিন সংবিধান বিশেষজ্ঞদের মতামত।
সংবিধানের ৩২৪ নম্বর অনুচ্ছেদে নির্বাচন কমিশনকে কিছু বিশেষ অধিকার দেওয়া হয়েছে। ওই অনুচ্ছেদ অনুসারে, নির্বাচন অবাধ ও শান্তিপূর্ণ করার জন্য কমিশন যে কোনওরকম ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে। সুষ্ঠু নির্বাচন সম্পাদনের জন্য কোন বাহিনী ব্যবহার করা হবে, তা কমিশনই ঠিক করবে। এজন্য তাকে রাজ্য সরকার বা আইনসভার অনুমতি নিতে হবে না। নির্বাচনের দিন এগিয়ে আনা বা পিছিয়ে দেওয়া, প্রচারের সময় নির্ধারণ-সহ যাবতীয় সিদ্ধান্ত কমিশন স্বাধীনভাবে নিতে পারে। বস্তুত, এই অনুচ্ছেদের মাধ্যমে নির্বাচনী কালপর্বে কমিশন সম্পূর্ণ স্বাধীন সংস্থা হিসেবে কাজ করতে পারে। ফলে তার প্রশাসনিক শক্তির সম্প্রসারণ ঘটে এবং তা কার্যত আধা বিচারবিভাগীয় রূপ নেয়।
সংবিধানের এই অনুচ্ছেদের বলে নির্বাচন কমিশন আইনসভার নিয়ন্ত্রণ থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত হয়ে কাজ করতে পারে। ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল যাতে নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে কোনওভাবেই প্রভাবিত করতে না পারে, তা নিশ্চিত করতেই সংবিধানে এই বিশেষ ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
কংগ্রেস নেতা এবং বিশিষ্ট আইনজীবী অরুণাভ ঘোষ বলেন, সংবিধানের ৩২৪ নম্বর অনুচ্ছেদ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। নির্বাচন কমিশন যাতে রাজনৈতিক দলের নিয়ন্ত্রণ ছাড়া নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে পারে, এই অনুচ্ছেদ তা সুনিশ্চিত করে। তাঁর কথায়, "কমিশন চাইলে নির্বাচনের দিন কোনও পুলিশ বা সশস্ত্র বাহিনী ছাড়াই নির্বাচন সম্পাদন করতে পারে। আবার প্রয়োজনবোধে রাজ্য পুলিশকে সম্পূর্ণভাবে ব্রাত্য করে রেখে কেবলমাত্র কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে ভোট পরিচালনা করতে পারে। বিশেষ কোনও পরিস্থিতিতে কোনও নির্দিষ্ট ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য রাষ্ট্রপতি বা রাজ্যপালকে অনুরোধও করতে পারে কমিশন।"
উল্লেখ্য, নির্বাচন কমিশন বাংলায় ৩২৪ নম্বর অনুচ্ছেদ প্রয়োগ করায় তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই অনুচ্ছেদ তৃণমূলের কতটা সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে? অরুণাভবাবুর মতে, রাজ্যের শাসকদলের সঙ্গে রাজ্য পুলিশের একাংশের "নিবিড় সম্পর্ক" থাকায় প্রতিটি নির্বাচনের আগেই তৃণমূল কিছু "বিশেষ সুবিধা" পেয়ে থাকে। কেন্দ্রীয় বাহিনী এরিয়া ডমিনেশন করলেও রাজ্য পুলিশের একাংশ তৃণমূলের পক্ষে সক্রিয় থাকায় ভোট করাতে সুবিধা হয় জোড়াফুল শিবিরের। এবার কমিশন যদি সমগ্র নির্বাচন প্রক্রিয়াই কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে সম্পন্ন করায়, তাহলে তা তৃণমূলের পক্ষে অস্বস্তিকর। অন্যদিকে বিজেপি, কংগ্রেস বা বামেরা তাদের ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে নিয়ে আসতে পারবে। তৃণমূলের ব্যূহ ভেদ করার প্রয়োজন হবে না।