বিচারপতি ফাতিমা বেভি বৃহস্পতিবার কেরলের কোল্লামে প্রয়াত হয়েছেন। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৯৬ বছর। তিনিই হলেন সুপ্রিম কোর্টের প্রথম মহিলা বিচারপতি। ১৯৮৯ সালে তিনি সুপ্রিম কোর্টে বিচারপতি নিযুক্ত হন। তিনিই হলেন সুপ্রিম কোর্টের প্রথম মুসলিম মহিলা বিচারপতি। এশিয়ার সুপ্রিম কোর্টগুলোয় নিযুক্ত প্রথম মহিলা বিচারপতি। ২০১৬ সালে 'দ্য উইক'-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তাঁকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ভারতীয় বিচার ব্যবস্থা পুরুষতান্ত্রিক কি না? তাঁর উত্তর ছিল, 'এক্কেবারে। এ নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই।… এখন এই বিভাগে, বারে এবং বেঞ্চে অনেক নারী আছেন। তবে তাঁদের অংশগ্রহণ খুবই কম। তাঁদের সংখ্যা পুরুষদের মত নয়।'
সুপ্রিম কোর্টে মহিলা বিচারপতির সংখ্যা কত?
বর্তমানে, সুপ্রিম কোর্টে ৩৪ জন বিচারপতির মধ্যে মাত্র তিন জন মহিলা বিচারপতি। তাঁরা হলেন- বিচারপতি হিমা কোহলি, বিচারপতি বেলা ত্রিবেদী ও বিচারপতি বিভি নাগারথনা। ২০২১ সালে তাঁদের নিয়োগ, শীর্ষ আদালতে মহিলা বিচারপতির সংখ্যা বাড়িয়ে করেছিল চার। যা ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টের ইতিহাসে নজির তৈরি করেছিল। বিচারপতি নাগারথনাও ২০২৭ সালে ভারতের প্রথম মহিলা প্রধান বিচারপতি হতে চলেছেন। যদিও তাঁর মেয়াদ হবে মাত্র ৩৬ দিন। স্বাধীনতার প্রায় ৮০ বছর পর এই প্রথম সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি হবেন কোনও মহিলা। এর আগে, ভারতের সর্বোচ্চ আদালতের ইতিহাসে মোট ১১ জন মহিলা বিচারপতি হয়েছেন। ১৯৮৯ সালে এই পথ দেখিয়েছিলেন বিচারপতি বেভি। তারপর থেকে মাত্র দশ জন মহিলা বিচারপতি পেয়েছে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। এর অর্থ হল, সর্বোচ্চ আদালতের মোট ২৬৮ জন বিচারপতি। তার মাত্র ৪ শতাংশ (১১ জন) হলেন মহিলা বিচারপতি। বাকিরা হলেন- বিচারপতি সুজাতা মনোহর, বিচারপতি রুমা পাল, বিচারপতি জ্ঞানসুধা মিশ্র, বিচারপতি রঞ্জনা দেশাই, বিচারপতি আর ভানুমাথি, বিচারপতি ইন্দু মালহোত্রা, বিচারপতি ইন্দিরা ব্যানার্জি। বর্তমান প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বে বর্তমান কলেজিয়াম ১৪টি নিয়োগ করেছে। কিন্তু, এখনও সুপ্রিম কোর্টে একজনও মহিলা বিচারপতি নিয়োগ করতে পারেনি।
হাইকোর্টের অবস্থা কি ভালো?
প্রেস ইনফরমেশন ব্যুরো অনুযায়ী, চলতি বছরের ২১ মার্চ পর্যন্ত, ভারতে ২৫টি হাইকোর্টে মোট ১,১১৪ জন বিচারপতির পদ আছে। যার মধ্যে মাত্র ৭৮৫ জন কর্মরত। বাকি ৩২৯টি পদ খালি। এই ৭৮৫ জনের মধ্যে মাত্র ১০৭ জন বিচারপতি বা মোটের ১৩ শতাংশ মহিলা। বর্তমানে দেশের ২৫টি হাইকোর্টের মধ্যে একজনমাত্র মহিলা প্রধান বিচারপতি পদে আছেন। কলেজিয়াম এই বছরের জুলাইয়ে বিচারপতি সুনিতা আগরওয়ালকে গুজরাট হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি নিযুক্ত করেছিল। উচ্চ আদালতের বিচারপতি হিসেবে দুর্বল অংশের প্রতিনিধিত্বের ব্যাপারে লোকসভার প্রশ্ন করেছিলেন সাংসদ আসাদউদ্দিন ওয়াইসি। তাঁর প্রশ্নের জবাবে কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী অর্জুনরাম মেঘওয়াল জুলাইয়ে বলেছিলেন, উচ্চতর বিচার বিভাগে নিয়োগ সংবিধানের ১২৪, ২১৭, এবং ২২৪ অনুচ্ছেদের অধীন। এগুলো, 'কোনও জাতি বা শ্রেণির জন্য সংরক্ষিত' নয়। তা সত্ত্বেও, কেন্দ্রীয় সরকার অনুরোধ করেছে, যাতে হাইকোর্ট যথাযথ বিবেচনা করে মহিলা, সংখ্যালঘু, তফসিলি জাতি বা উপজাতি এবং অন্যদের মধ্যে থেকে বিচারপতি নিয়োগ করে। যাতে, 'সামাজিক বৈচিত্র্য' দেশের বিচারব্যবস্থার ক্ষেত্রেও থাকে। এমনটাই জানিয়েছেন মেঘওয়াল।
আরও পড়ুন- ব্রহ্মার কন্যা, কে এই ‘পানৌতি’? প্রধানমন্ত্রীকে বলায় কমিশন নোটিশ ধরাল রাহুল গান্ধীকে !
নিম্ন আদালতের অবস্থা কী?
২০১৮ সালে, 'বিধি সেন্টার ফর লিগ্যাল পলিসি'র সমীক্ষায় দেখা গেছে, নিম্ন আদালতে বিচার বিভাগে মহিলাদের প্রতিনিধিত্ব তুলনামূলকভাবে প্রায় ২৭ শতাংশ বেশি। সমীক্ষায় দেখা গেছে যে ২০১৭ সালের মার্চ থেকে জুলাইয়ের মধ্যে নিম্ন আদালতে ১৫,৮০৬ জন বিচারক ছিলেন। সমীক্ষায় দেখা গেছে যে শুধুমাত্র তিনটি ছোট রাজ্য- গোয়া, মেঘালয় এবং সিকিমে নিম্ন আদালতে মোট ১০৩ জন বিচারক আছেন। সেখানে মহিলা বিচারকের সংখ্যা ৬০ শতাংশ অতিক্রম করেছে৷ তেলেঙ্গানা এবং পুদুচেরি বাদে ভূগোল, সাংস্কৃতিক বিবেচনা বা অন্যান্য পার্থক্য নির্বিশেষে, অন্যান্য সমস্ত রাজ্যের নিম্ন আদালতে মহিলা বিচারকের সংখ্যা ৪০ শতাংশের নীচে। উচ্চতর বিচার বিভাগে মহিলাদের জন্য কোনও সংরক্ষণ নেই। কিন্তু, অন্ধ্রপ্রদেশ, অসম, বিহার, ছত্তিশগড়, ঝাড়খণ্ড, কর্ণাটক, ওড়িশা, রাজস্থান, তামিলনাড়ু, তেলেঙ্গানা এবং উত্তরাখণ্ড-সহ বেশ কিছু রাজ্যে নিম্ন বিচার বিভাগে মহিলাদের জন্য সংরক্ষণ আছে। এই রাজ্যগুলি সরাসরি নিয়োগ করে নিম্ন আদালতে ৩০ থেকে ৩৫ মহিলা সংরক্ষণের ব্যবস্থা করেছে। অতি সম্প্রতি 'ইন্ডিয়া জাস্টিস রিপোর্ট (আইজেআর), ২০২২' শিরোনামে এক গবেষণায় জানা গিয়েছে যে, 'মাত্র ১৩ শতাংশ হাইকোর্টের বিচারপতি এবং ৩৫ শতাংশ অধস্তন আদালতের বিচারক মহিলা।' জেলা আদালতের স্তরে গোয়ায় মহিলাদের প্রতিনিধিত্ব সর্বাধিক (৭০%)। তারপরে রয়েছে মেঘালয় (৬২.৭%), তেলেঙ্গানা (৫২.৮%) এবং সিকিম (৫২.৪%)।