Advertisment

টুইটার ছেড়ে ভারতীয়রা ম্যাস্টোডনের দিকে ঝুঁকছেন কেন?

বিজ্ঞাপনহীন, অ-কর্পোরেট সোশাল নেটওয়ার্কের ধারণা নতুন কিছু নয়। ফেসবুককেও ২০১৪ সালে এধরনের বয়কটের মুখে পড়তে হয়েছিল যখন ফেসবুক ব্যবহারকারীরা এলো নেটওয়ার্কে চলে যেতে শুরু করেছিলেন।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
mastodon, twitter

২০১৬ সালে ইউজিন রোকো ম্যাস্টোডন লঞ্চ করেন

নিজেদের বেশ কিছু নীতির কারণে টুইটার ভারতে ব্যাপক সমস্যার মুখে পড়েছে। অনেকেই এ প্ল্যাটফর্ম ছেড়ে যাচ্ছেন। সিনিয়র অ্যাডভোকেট সঞ্জয় হেগড়ের অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়ার পর টুইটারের নিরপক্ষেতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। টুইটার ইঙ্গিত দিয়েছে হেগড়ের অ্যাকাউন্ট ফেরত দেওয়া হবে না, এবং নিজেদের সমর্থনে বিবৃতিও দিয়েছে তারা। এর জেরে টুইটার ইন্ডিয়ার জোরালো কণ্ঠ বলে পরিচিতদের অনেকেই প্ল্যাটফর্ম বয়কটের ডাক দিয়েছেন। তাঁরা যোগ দিচ্ছেন নতুন সোশাল নেটওয়ার্ক ম্যাস্টোডনে।

Advertisment

ভারতীয় জনতা টুইটার বয়কটের ডাক দিচ্ছে কেন?

টুইটার নিয়ে একাংশের ক্ষোভ বহুদিনের। এখানে যথেচ্ছ গালমন্দ ব্যবহার ঠেকাতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে এই প্ল্যাটফর্ম, যার জেরে তাদের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ উঠেছে। সঞ্জয় হেগড়ের অ্যাকাউন্ট বন্ধের ঘটনা তাদের শেষ পেরেক হয়ে উঠেছে। হেগড়ের ঘটনায় অভিযোগ উঠেছে, তাঁর অ্যাকাউন্ট দুবার সাসপেন্ড করা হয়েছে। প্রথমবার তিনি একটি কভার পিকচার দিয়েছিলেন যা বহুল পরিচিত অগাস্ট ল্যান্ডমেসারের ছবি, যেখানে অগাস্ট ছাড়া হিটলারের জার্মানিতে সকলে নাজি স্যালুট করছে। দ্বিতীয়বার তাঁর অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়া হয় একটি কবিতার জন্য।

অ্যাকাউন্ট ভেরিফিকেশন নিয়েও গোলযোগের অভিযোগ উঠেছে টুইটারের বিরুদ্ধে। একদিকে যখন তারা বলছে, ভেরিফিকেশন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, তখনও ভেরিফিকেশন করা হয়েছে বলে কিছু অ্যাক্টিভিস্ট জানিয়েছেন। দলিত সমাজকর্মীরা এও বলেছেন টুইটার তাঁদের অ্যাকাউন্ট ভেরিফাই করেই নি। এ ব্যাপারে তাঁরা জাতিবিদ্বেষের অভিযোগ করেছেন।

আরও পড়ুন, বিশ্লেষণ: ফেসবুকে নতুন কোম্পানি লোগো কেন?

টুইটার অবশ্য ক্রমাগত দাবি করে দিয়েছে তাদের সিদ্ধান্ত পক্ষপাতিত্বহীন ও অরাজনৈতিক। এক বিবৃতিতে তারা বলেছে তারা অকপট, স্বচ্ছ, ও নিরপেক্ষতার নীতিতে বিশ্বাসী।

এই বিবৃতির ব্যাপক সমালোচনা এসেছে ভারতীয় মহল থেকে। এঁরা টুইটার থেকে চলে গিয়ে ম্যাস্টোডনে অ্যাকাউন্ট খোলার ডাক দিয়েছেন। কেউ কেউ আবার ২৪ ঘণ্টা টুইটার বয়কটের ডাকও দিয়েছেন।

ম্যাস্টোডন কী?

২০১৬ সালে ইউজিন রোকো ম্যাস্টোডন লঞ্চ করেন। ২০১৭ সালের মাঝামাঝি তা ভাইরালও হয়ে ওঠে। ম্যাস্টোডনের ডিজাইন কিছুটা টুইটারের মত হলেও এটি ওপেন-সোর্স। ম্যাস্টোডনকে নিয়ন্ত্রণ করার মত কোনও কেন্দ্রীয় সার্ভার নেই। ম্যাস্টোডনের সোর্স কোড সবটাই পাওয়া যায় গিটহাবের পেজে। ব্যবহারকারীর নিজেরাও তাঁদের সার্ভার হোস্ট করতে পারেন।

অন্য সোশাল মিডিয়ায় যাকে পোস্ট করা বলা হয়, ম্যাস্টোডনে তাকে বলা হয় টুট করা। ম্যাস্টোডনে সর্বাধিক ৫০০ ক্যারেক্টারের টুট করা সম্ভব। টুইটারের মতই এখানে অন্য কাউকে ফলো করা য়ায়। এবং পাবলিক প্ল্যাটফর্ম হওয়ার ফলে একজনের পোস্ট সকলে দেখতে পারে।

এখানে অন্যের টুট লাইক করা যায়, এবং টুইটারের রিটুইটের মতই, এখানে অন্যের টুট রিটুটও করা যায়। ম্যাস্টোডনে ক্রনোলজিকাল টাইমলাইন, পাবলিক টাইমলাইন, জিফ ভিডিও সেট এবং শর্ট ভিডিও রয়েছে। এই নেটওয়ার্কে কোনও বিজ্ঞাপনের ব্যাপার নেই এবং কোনও ব্লক বা মিউট করার ব্যবস্থাও নেই।

আরও পড়ুন, বিশ্লেষণ: প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর ফোনে ঠিক কী হয়ে থাকতে পারে?

টুইটারে যেমন হ্যান্ডেলে টুইটার থাকতেই হয়, ম্যাস্টোজনে তাদের নিজেদের হ্যান্ডেল ছাড়া অন্য সার্ভারের হ্যান্ডেলও ব্যবহার করা সম্ভব।

ম্যাস্টোডনে কি হ্যারাসমেন্ট হতে পারে?

ম্যাস্টোডন বিকেন্দ্রীভূত এবং বেশ কিছু স্বাধীন অপারেটর রয়েছে যাদের নিজেদের পৃথক অ্যাডমিন রয়েছে। ম্যাস্টোডন ব্যবহারকারীদের সম্পূর্ণ পাবলিক, প্রাইভেট এবং কিছু নির্দিষ্ট ব্যবহারকারীদের বেছে নেবার স্বাধীনতা দেয়, যে স্বাধীনতা টুইটারে প্রোটেক্টেড অ্যাকাউন্ট না থাকলে মেলে না।

অ্যাডমিনরা বর্ণবিদ্বেষ, লিঙ্গবিদ্বেষ, হোমোফোবিয়া এবং ট্রান্সফোবিয়ার বিরুদ্ধে মডারেশনে অঙ্গীকারাবদ্ধ। উল্লেখ্য টুইটারের সবচেয়ে বড় সমস্যাই হল বর্ণবিদ্বেষ, লিঙ্গবিদ্বেষ, হোমোফোবিয়া এবং ট্রান্সফোবিয়া।

ম্যাস্টোডন কি টুইটারকে ছাপিয়ে যেতে পারবে?

আইডিয়া হিসেবে ম্যাস্টোডন দারুণ, তবে এর ইউজার ইন্টারফেসে কিছু সমস্যা রয়েছে। তবে বিজ্ঞাপনহীন, অ-কর্পোরেট সোশাল নেটওয়ার্কের ধারণা নতুন কিছু নয়। ফেসবুককেও ২০১৪ সালে এধরনের বয়কটের মুখে পড়তে হয়েছিল যখন ফেসবুক ব্যবহারকারীরা এলো নেটওয়ার্কে চলে যেতে শুরু করেছিলেন। এলো অবশ্য জনগণের প্রত্যাশা মাফিক ফেসবুক কিলার হয়ে উঠতে পারেনি।

এ ধরনের সোশাল নেটওয়ার্কের আইডিয়া হল, কোনও একটি সংস্থা বা এনটিটি এর নিয়ন্ত্রক নয়। কিন্তু এ আইডিয়া খুব বেশি সাফল্যের মুখ দেখে নি। ম্যাস্টোডন যখন প্রথমবার ভাইরাল হয়েছিল, তখন তারা অত্যধিক ইউজার সামলাতে সমস্যায় পড়েছিল। টুইটার এখন তোপের মুখে পড়েছে বটে, কিন্তু ম্যাস্টোডন তাকে ছাপিয়ে যাবে এখনই এরকমটা মনে হয় না। টুইটারের প্রায় ৩৩০ মিলিয়ন ইউজার রয়েছে, অন্যদিকে ম্যাস্টোডনের ইউজার ২.২ মিলিয়ন।

টুইটার ব্যবহারকারীদের বিশাল অংশ যদি না সে প্ল্যাটফর্ম ছেড়ে যান, তাহলে ম্যাস্টোডনের তেমন কোনও আশা নেই।

Social Media twitter
Advertisment