Advertisment

Explained: কেন ভারতে এপ্রিল-জুন মাসে সোনার চাহিদা কমে গেল?

ব্যাংকগুলো থেকে সোনা কেনাতেও মন্দা দেখা দিয়েছে।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Gold Demand

দাম বেড়েছে সোনার।

চলতি বছর, অর্থাৎ ২০২৩ সালের এপ্রিল-জুন ত্রৈমাসিকে ভারতের সোনার চাহিদা আগের বছরের তুলনায় কমেছে। আগের বছর একই সময়ে ছিল ১৭০.৭ টন। সেটা এবছর কমে হয়েছে ১৫৮.১ টন। এই সময়কালে গয়নার চাহিদা এবং বিনিয়োগ উভয় ক্ষেত্রেই পতন দেখা গেছে। শুধু তাই নয়, এই ত্রৈমাসিকে রিজার্ভ ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া (আরবিআই)-সহ কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো থেকে সোনা কেনার ক্ষেত্রেও মন্দা দেখা গেছে।

Advertisment

এপ্রিল-জুন মাসে সোনার চাহিদা কতটা কমেছে?
২০২৩ সালের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে, ভারতে সোনার চাহিদা গত বছরের তুলনায় ৭ শতাংশ কমেছে। ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিল (ডব্লিউজিসি)-এর প্রতিবেদন অনুসারে এমনটাই জানা গিয়েছে। ২০২৩ সালের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে সোনার চাহিদার মূল্য ছিল ৮২,৫৩০ কোটি টাকা। যা ২০২২ সালের এপ্রিল-জুন সময়ের মধ্যে ছিল ৭৯,২৭০ কোটি টাকা। তার তুলনায় ৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। আর দেশে গয়নার মোট চাহিদা ১৪০.৩ টন থেকে ৮ শতাংশ কমে ১২৮.৬ টনে এসে দাঁড়িয়েছে। গয়নার চাহিদার মূল্য ছিল ৬৭,১২০ কোটি টাকা। যা ২০২২ সালের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকের চেয়ে (৬৫,১৪০ কোটি টাকা) ৩ শতাংশ বেশি। স্বর্ণের জন্য বিনিয়োগের চাহিদা, যা পরবর্তী পর্যায়ে গহনায় রূপান্তরিত হতে পারে, এই সময়কালে ২৯.৫ টনে নেমে আসে। যা আগের বছরে একই সময়ে ছিল ৩০.৪ টন। মূল্যের পরিপ্রেক্ষিতে, স্বর্ণে বিনিয়োগের চাহিদা ছিল ১৫.৪১০ কোটি টাকা। যা ২০২২ সালের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকের (১৪,১৪০ কোটি টাকা) থেকে ৯ শতাংশ বেশি।

সোনার চাহিদায় এই মন্দার কারণ কী?
ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের আঞ্চলিক সিইও (ভারত) সোমাসুন্দরাম পিআর-এর মতে, বর্তমান রেকর্ড অনুযায়ী সোনার দাম বেশি হওয়ার কারণেই ভারতে সোনার গহনার চাহিদা কমে গেছে। কারণ তা ক্রয়ক্ষমতা এবং ভোক্তাদের মনোভাবকে প্রভাবিত করেছে। ২০২৩ সালের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে, গড় সোনার দাম প্রায় ১২ শতাংশ বেড়ে প্রায় ৫২,১৯১ টাকা (প্রতি ১০ গ্রাম, শুল্ক এবং কর ব্যতীত) হয়েছে। ২০২২ সালে একই সময়ে সোনার দাম ছিল প্রতি ১০ গ্রামে ৪৬,৪৩০ টাকা। জানুয়ারি-মার্চ ২০২৩ সালের প্রথম ত্রৈমাসিকে প্রতি ১০ গ্রাম সোনার গড় দাম ছিল ৪৯,৯৭৭ টাকা।

২,০০০ টাকার নোট প্রত্যাহার কি সোনার চাহিদাকে প্রভাবিত করেছে?
গত ১৯ মে, আরবিআই তার আইনি দরপত্রের অবস্থা বজায় রেখে প্রচলিত অবস্থাতেই ২,০০০ টাকার নোট প্রত্যাহারের কথা ঘোষণা করেছিল। আরবিআই ২,০০০ টাকার ব্যাংকনোট জমা বা বিনিময় করার জন্য ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ পর্যন্ত সময়সীমা নির্ধারণ করেছে। এই ঘোষণার পরে ২,০০০ টাকার নোট ব্যবহার করে সোনা কেনা নিয়ে কিছু আতঙ্ক তৈরি হয়েছিল। সোমসুন্দরম জানিয়েছেন, এর পরের 'ত্রৈমাসিকে ২,০০০ টাকার নোট নিষিদ্ধ করার জন্য সোনার চাহিদার ওপর একটি সংক্ষিপ্ত কিন্তু উল্লেখযোগ্য প্রভাব পড়েছে।' তবে তাঁর বক্তব্য, কঠোর সরকারি তদারকির কারণে নোট বাতিলের পরে ২০১৬ সালে যে আতঙ্ক গয়না কিনতে গিয়ে তৈরি হয়েছিল, এবার ২,০০০ টাকার নোট বাতিলের ক্ষেত্রে অনুরূপ পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা কম।

এপ্রিল-জুন মাসে আরবিআই কত সোনা কিনেছে?
এপ্রিল-জুন ২০২৩-এর দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে আরবিআই ১০ টন কিনেছে। আগের বছর দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে আরবিআই কিনেছিল ১৫ টন সোনা। জুনের শেষে আরবিআইয়ের মজুদ সোনার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭৯৭.৪ টন। ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিল (ডব্লিউজিসি)-র রিপোর্টে বলা হয়েছে যে ২০২৩ সালের প্রথম ত্রৈমাসিকে রেকর্ড ভাঙার পর, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সোনার চাহিদা দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে উল্লেখযোগ্য ভাবে কমেছে। বিশ্বজুড়ে নিট সোনা ক্রয় চলতি বছর এপ্রিল থেকে জুনের মধ্যে ছিল মোট ১০৩ টন। যা ২০২২ সালে এপ্রিল থেকে জুনের মধ্যে ছিল ১৫৮.৬ টন। অর্থাৎ এই সময়ের মধ্যে একবছরে সোনা কেনার পরিমাণ ৩৫ শতাংশ কমেছে। ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিল (ডব্লিউজিসি)-র রিপোর্টে বলা হয়েছে 'প্রথম ত্রৈমাসিকে বিশ্ববাজারে সোনার প্রথমসারির ক্রেতা সেন্ট্রাল ব্যাংক অফ তুরস্ক (টিসিএমবি) মার্চ মাসে হঠাৎ করে কেনা কমিয়ে দেয়। তবে, জুন মাসে কেনাকাটা পুনরায় শুরু হওয়ার আগে এপ্রিল এবং মে মাসে বিক্রি অব্যাহত ছিল। এই সময় অর্থাৎ দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে বিশ্ববাজারে নেট ১৩২ টন বিক্রি হয়েছে।'

আরও পড়ুন- জলবায়ু পরিবর্তনের জেরে বদলাচ্ছে সমুদ্রের রং? কী বলছে গবেষণা?

ভারতের সোনার চাহিদা সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গি কী?
সোমসুন্দরম বলেন, 'এখনও বছর শেষ হওয়ার অনেকটাই বাকি। এখন সবাই সামনের দিকে তাকিয়ে আছেন। তারই মধ্যে সকলেরই সোনার চাহিদা সম্পর্কে সতর্ক থাকা প্রয়োজন। কারণ, স্থানীয় মূল্যবৃদ্ধি এবং ব্যয়ের ক্ষেত্রে বিবেচনার জেরে সোনা কেনা অনিশ্চয়তার মুখোমুখি হতে পারে।' যাইহোক, বর্ষা ঋতুর সাফল্য দীপাবলি মরশুমের আগে সোনা কেনার আবেগকে শক্তিশালী করতে পারে। ইতিবাচক চমক সেক্ষেত্রে মিলতে পারে। সেক্ষেত্রে সোমসুন্দরমের আশা, চলতি বছরে সোনার চাহিদার পরিমাণ আনুমানিক ৭৫০ টন পর্যন্ত যেতে পারে।

India Gold Price Hike
Advertisment