চিনের সঙ্গে সীমান্ত সংঘর্ষের এই সময়ে ভারতকে কৌশলগত সম্ভাবনাগুলি ভেবে দেখতে হবে। সারা বিশ্বে যে ভাবে চিনের বিরুদ্ধে ভাবাবেগ বাড়ছে তাকে কি ভারত নিজের পক্ষে কাজে লাগাতে পারে! ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের কনট্রিবিউটিং এডিটর প্রতাপভানু মেহতা তাঁর সাম্প্রতিকতম কলামে লিখেছেন সময়টা পেকে উঠেছে। শি জিনপিংয়ের শাসনকাল যেভাবে সারা পৃথিবীতে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে তা অভূতপূর্ব। কিন্তু তা কি চিনের বিরুদ্ধে সত্যিই সারা বিশ্বের চাপ বাড়াতে পারে!
ভারতের সঙ্গে আমেরিকার সম্পর্ক গভীর হওয়ায় কৌশলগত বিশেষজ্ঞরা অনেকেই খুশি হয়ে উঠেছেন। মেহতা বলছেন, বাস্তবত ভারতের হাতে খুব বেশি সুযোগ নেই।
আরও পড়ুন, চিনের পণ্য কেন বন্দরে আটকে, তার ফলে কী হচ্ছে?
এটা একটা অদ্ভুত বিশ্ব পরিস্থিতি যেখানে চিন যে সকলের পক্ষে চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে, কিন্তু একযোগে চিনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁডানোর পরিস্থিতি নেই। চিনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের ব্যাপারে সারা দুনিয়ার দিরে তাকালে দেখা যাবে বহু দেশে এই সংস্থার ঋণ মেটানোর জন্য লড়ছে।
অনেক পরিমাণ চিনা ঋণ বহু ঋণগ্রহণকারী দেশের গলায় ফাঁস হয়ে বসেছে। কিন্তু অন্য দেশগুলি ঋণগ্রহণকারী দেশগুলিকে তাদের এই অর্থ শোধে সাহায্য করবে এমনটা সম্ভব নয়। একইভাবে সাইবার নিরাপত্তা ও মহাকাশে তাদের মধ্যেকার সংঘর্ষ নিয়ে উদ্বেগের পরিবেশও রয়েছে, লিখছেন প্রতাপভানু।
কিন্তু তা কেন?
মেহতা লিখছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক তৈরি হয় দেশের উন্নয়নের প্রেক্ষিতে। যেমন আমেরিকা-চিন সম্পর্ক তৈরি হওয়ার পিছনে চিন-সোভিয়েত সম্পর্কের বিচ্ছিন্ন হওয়ার বীজ ছিল, কিন্তু কয়েক দশক ঘরে আমেরিকা ও চিনের উন্নয়নের রাজনৈতিক অর্থনীতিও রয়েছে, যেখানে একে অন্যের উপর নির্ভর করেছে।
কিন্তু উন্নয়নের রাজনৈতিক বৈধতার মডেলটি সাম্প্রতিক কয়েক বছরে খর্বিত হয়েছে।
আরও পড়ুন, উঁচু জায়গায় যুদ্ধের চ্যালেঞ্জ কী কী, কীভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় সেনাবাহিনীকে?
ভারতের সামনে বড় প্রশ্ন হল তাদের উন্নয়নের সঙ্গে আমেরিকার উন্নয়নের রূপ খাপ খাচ্ছে কিনা। এ ক্ষেত্রে তা হল আমেরিকা যেখানে উৎপাদনের কাজ ফিরিয়ে আনতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, তার সঙ্গে আত্মনির্ভর ভারত খাপ খাচ্ছে কিনা।
মেহতা লিখছেন আমরা এমন একটা পৃথিবীতে বাস করছি যেখানে বিশ্বের অবশিষ্ট দেশগুলির চিনের বিরুদ্ধাচরণের প্রয়োজন অত্যন্ত, তা সত্ত্বেও একত্রে পদক্ষেপ গ্রহণ করার আগ্রহ দুর্বল।
ফলে বিশ্বের বাকি দেশগুলি ভারত-চিন দ্বন্দ্বে বরফজল দেবে তাতে সন্দেহ নেই কারণ ভারত ও চিনের মধ্যে যে এলাকা নিয়ে দ্বন্দ্ব তা নিয়ে কারোরই কোনও গুরুতর আগ্রহ নেই।
মেহতা লিখছেন, দিনের শেষে তাই চিন আর পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতকে একাই বুঝে নিতে হবে।