সংসদের এ অধিবেশনে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল (ক্যাব) আনা হতে চলেছে বলেই খবর। এ সময়ে একই সঙ্গে উঠে আসছে ইনার লাইন পারমিট (আইএলপি) ব্যবস্থার কথাও। শনিবার উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির প্রতিনিধিরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে দেখা করে এ বিলের ব্যাপারে তাঁদের উদ্বেগের বিষয়টি জানান। মন্ত্রী তাঁদের আশ্বাস দেন যেসব রাজ্যে ও এলাকায় আইএলপি চালু রয়েছে, সেখানে, এবং সংবিধানের ষষ্ঠ তফশিল অনুসারে যেসব স্থানে স্বায়ত্তশাসন জারি রয়েছে, সেখানে ক্যাব লাগু করা হবে না।
গত মাসে, মেঘালয় মন্ত্রিসভা ২০১৬ সালের মেঘালয় রেসিডেন্টস সেফটি অ্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাক্ট পাশ করে। মনে করা হচ্ছে, এই সংশোধনীগুলি আইএলপি সময়কালের নিয়মাবলীর সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। আইএলপি ঠিক কী
বিশ্লেষণ- আইএলপি ব্যবস্থা কী?
সহজ করে বলতে গেলে, আই এলপি হল এমন একটি বন্দোবস্ত যার সুবাদে ও যার আওতায় ভারতীয় নাগরিকরা একটি রাজ্যে বসবাস করতে পারেন। আজকের দিনে এই বন্দোবস্ত চালু রয়েছে উত্তর পূর্বাঞ্চলের তিনটি রাজ্য- অরুণাচল প্রদেশ, নাগাল্যান্ড ও মিজোরামে। ওই রাজ্যের মানুষ না হলে কোনও ভারতীয় নাগরিক এই রাজ্যগুলিতে যেতে পারেন না, এবং আইএলপি-তে উল্লিখিত সময়সীমা পার হয়ে যাবার পর সেখানে থাকতে পারেন না।
আরও পড়ুন, বিশ্লেষণ: আরও পাঁচ বছরের জন্য নিষিদ্ধ বোড়ো জঙ্গি গোষ্ঠী
এই ধারণা এসেছে ঔপনিবেশিক এলাকা থেকে। বেঙ্গল ইস্টার্ন ফ্রন্টিয়ার রেগুলেশন অ্যাক্ট, ১৯৭৩ মোতাবেক ব্রিটিশরা নির্দিষ্ট এলাকায় বহিরাগতদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছিল। ভারতীয় কেউ যাতে ব্যবসা বাণিজ্য করে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে কাঁটা হয়ে না দাঁড়ায়, সে কারণে এই ব্যবস্থা। ভারত সরকার যখন এই আইন চালু রাখে, তখন তার উদ্দেশ্য হিসেবে বলা হয়েছিল ভারতের অন্যান্য প্রদেশ থেকে ওই এলাকার আদি বাসিন্দাদের সুরক্ষাপ্রদান।
ইনার লাইন পারমিট প্রদান করে সংশ্লিষ্ট সরকার। অনলাইনে বা হাতে হাতেও এই পারমিট মেলে। এখানে ভ্রমণের তারিখ লেখা থাকে, রাজ্যের ঠিক কোন কোন এলাকায় ভ্রমণ করতে পারবেন ওই ব্যক্তি, লেখা থাকে তাও।
ক্যাবের সঙ্গে আইএলপি-র যোগাযোগ
নাগরিকত্ব (সংশোধনী) বিলের লক্ষ্য বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে আসা অমুসলিম উদ্বাস্তুরা যাতে সহজে এদেশের নাগরিকত্ব পান তার ব্যবস্থা করা। যদি আইএলপি ভুক্ত এলাকা ছাড়া অন্য জায়গার জন্য ক্যাব লাগু হয়, তাহলে ক্যাবের আওতায় এঁরা ভারতীয় নাগরিকত্ব পেলেও ওই তিন রাজ্যে বসবাস করতে পারবেন না। বাস্তবত, এই নিষেধাজ্ঞা ভারতীয় নাগরিকদের জন্য লাগু হবে।
অরুণাচল প্রদেশ এবং নাগাল্যান্ড বাংলাদেশ থেকে অভিবাসনের জন্য খুব একটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। মিজোরামের সঙ্গে বাংলাদেশের সীমান্ত রয়েছে। যে তিন রাজ্যে সবচেয়ে বেশি অভিবাসন ঘটেছে, সেই আসাম, ত্রিপুরা এবং মেঘালয়ে আইএলপি ব্যবস্থা চালু নেই।
মেঘালয় আইন সংশোধন করেছে বটে, তবে একথা স্পষ্ট নয় যে ঠিক কোন আইনের আওতায় পড়বেন বহিরাগতরা। এবং সরকারি ভাবে একথা জানানোও হয়নি, যে এ আইন আইএলপি-র প্রতিলিপি।
আইএলপি ব্যবস্থা লাগুর দাবি উত্তর পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন রাজ্য থেকে আগেই উঠেছে। ওই অঞ্চলের সমস্ত ছাত্র সংগঠন গুলি নিয়ে গঠিত নর্থ ইস্ট স্টুডেন্টস অর্গানাইজেশন (নেসো) গত মাসে এক প্রেস বিবৃতিতে বলেছিল উত্তর পূর্বের সমস্ত রাজ্যে ইনার লাইন পারমিট চালু করার দাবির কথা ফের মনে করিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
আরও পড়ুন, আসাম এনআরসি নিয়ে কেন অসন্তুষ্ট বিজেপি, কেন তারা আগে ক্যাব চায়?
গত বছর রাজ্য বিধানসভায় সর্বসম্মতিক্রমে পাশ হয়ে যায় মণিপুর পিপল বিল, ২০১৮। ওই বিলে অ-মণিপুরি জনতা ও বহিরাগতদের উপর বেশ কিছু নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগ করা হয়েছে। ওই বিলে মণিপুরি মানুষের সংজ্ঞা নির্ধারণার্থে বেশ কিছু বোঝাপড়া করা হয়েছে। এর পরে ১৯৫১ সালকে কাট অফ বছর বলে ধরে এই সংজ্ঞা নির্ধারণ করার বিষয়ে সহমতে পৌঁছনো গিয়েছে।
আসামের কিছু অংশের মধ্যে থেকে আইএলপি চালুর দাবি উঠেছে। সারা রাজ্যে আইএলপি চালুর দাবিতে অসম জাতীয়তাবাদী যুব ছাত্র পরিষদ বেশ কিছু বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে।