এপ্রিল-জুন ত্রৈমাসিকে স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পগুলিতে সুদের হার অপরিবর্তিত থাকবে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। এটা খুশির চেয়েও বেশি স্বস্তির। কারণ, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া ইঙ্গিত দিয়েছিল, ০.৯০ থেকে ১.৮০ শতাংশ কমানো হতে পারে এই সব সঞ্চয়ে সুদের হার। হতে পারে, গত দু'মাসে ৬ শতাংশ ছাড়ানো মুদ্রাস্ফীতি এবং তেলের দামের ঊর্ধ্বগতির জেরে সরকার এখনই স্বল্পসঞ্চয়ে সুদের হার কমাতে চায়নি। বিশেষ করে এমপ্লয়িজ প্রভিডেন্ট ফান্ড বা ইপিএফে যে রকম কোপ পড়েছে, তার পর মানুষের মধ্যে ক্ষোভের যে ছররা উঠেছে, তাতে এখনই স্বল্প সঞ্চয়ে সুদের হার কমানোটা মোটেই বিবেচনার কাজ হত না, এমনই মনে করেছে সরকার। বলছেন বিশ্লেষকদের অনেকে। এর আগে ২০২০ সালের এপ্রিলে বিভিন্ন স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পে সুদের হার ০.৫ থেকে ১.৪ শতাংশ কমানো হয়েছিল। গত মাসে ইপিএফে সুদের হার ৮.৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৮.১ শতাংশ করার কথা জানানো হয়, যা ৪২ বছরে সর্ব নিম্ন।
স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পগুলির দিকে তাকানো যাক
পিপিএফ পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড। যা অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি প্রকল্প। এতে সুদের হার ৭.১ শতাংশ। ন্যাশনাল সেভিংস সার্টিফিকেট বা এনএসসি, সুদের হার ৬.৮ শতাংশ। সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনা, কন্যা সন্তানদের সুরক্ষার্থে যে প্রকল্প, সুদের হার ৭.৮ শতাংশ। সেভিংস ডিপোজিটে সুদের হার ৪ শতাংশ। এক থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত সঞ্চয়ের ক্ষেত্রে এখন সুদের হার ৫.৫ থেকে ৬.৭ শতাংশ। পাঁচ বছরের জন্য রেকারিং ডিপোজিটে ৫.৮ শতাংশ হারে সুদ পাওয়া যায়। আপাতত, তিন মাস এ সব অপরিবর্তিত থাকছে।
২০২১-২২-এর প্রথম ত্রৈমাসিকে, মানে এপ্রিল-মার্চে, স্বল্প সঞ্চয়ে সুদের হার ০.৪০ থেকে ১.১০ শতাংশ কমানোর কথা ঘোষণা করেছিল সরকার। কিন্তু তা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রত্যাহারের কথা জানান। এবং দু'বছর আগে শেষ বার সুদের হার কমেছিল স্বল্প সঞ্চয়ে, যা বলেছি শুরুতেই। সরকার এই হার কমানো নিয়ে যথেষ্ট সমালোচিত হয়ে চলেছে। যদিও উত্তরপ্রদেশে বিজেপি জিতে এর যেন জবাব দিয়েছে, তাদের বডিল্যাঙ্গুয়েজ-- 'এ সবে কিছুই যায় আসে না দাদা'। তা ছাড়া উত্তরপ্রদেশের ভোটে বিজেপির জয়ের পরই আরও আত্মবিশ্বাসী সরকার ইপিএফে সুদের হার কমিয়ে দিতে দ্বিধা করেনি। শোনা যাচ্ছে এই কটাক্ষও।
সুদের হারের হিসেব নিকেশ
মার্চের ১২ তারিখ, ইপিএফে সুদের হার ৮.১ শতাংশের কথা জানানো হয়। সরকারের বক্তব্য হল, বর্তমান পরিস্থিতিতে এ ছাড়া উপায় ছিল না। রাজ্যসভাতেও যে কথা বলেছিলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ। নির্মলা বলেন, 'ইপিএফের সুদ অন্যান্য সঞ্চয়ের চেয়ে এখনও বেশি।' ১৯৭৭-৭৮ সালে ইপিএফ-এর সুদের হার ছিল ৮ শতাংশ। মানে আমরা যেন সুদের বিচারে অনেক পিছিয়ে গিয়েছি। যদি সুদের হারের চালচিত্রের তাকানো যায়, তা হলে দেখা যাবে ১৯৫২-৫৩ সালে ইপিএফ-এ সুদের হার ছিল ৩ শতাংশ। চারের ঘরে পৌঁছতে সময় লেগেছিল অনেক। ১৯৬৩-৬৪ সালে সুদের হার ছোঁয় ৪ শতাংশ। তার পর ১৯৭৭-৭৮ সালে বাড়তে বাড়তে পৌঁছয় ৮ শতাংশে। ১৯৮৫-৮৬ সালে ছাড়ায় ১০ শতাংশ। ১৯৮৯-৯০ থেকে ১২ শতাংশ। ২০০১ পর্যন্ত তা-ই ছিল। এর পর হ্রাস-পর্ব শুরু। ২০১০-১১ সালে অবশ্য বেড়েছিল, হয় ৯.৫০ শতাংশ। কিন্তু ১২ শতাংশ যেন স্বপ্নের ব্যাপার। এখন আবার টাইম মেশিনে চড়ে সেই ৭৭-৭৮-এ পৌঁছানো। মানুষের রোজগার কম, সুদের হার তলানিতে। কিন্তু দামবৃদ্ধির সৌজন্যে খরচ উত্তরোত্তর বাড়ছেই। তা হলে সাধারণ মানুষ যাবেন কোথায়? ভোটে জেতাই কি সব হল!
Read story in English