Advertisment

আগুন বাজার, টালমাটাল অর্থনীতি, সুদের হার না বাড়িয়ে কি হাল সামলাতে পারবে আরবিআই?

বর্তমানে ওমিক্রনের ধাক্কায় অর্থনীতির মন্দগতির কথা মাথায় রেখেই সুদের হার অপরিবর্তিত রাখার রাস্তা থেকে আরবিআই সরেনি।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
RBI Monetary Policy

সুদের হার বাড়ালে বাজারের বাড়তি টাকা চলে আসে আরবিআইয়ের ঘরে।

এই নিয়ে পর পর দশ বার। ফির জিনে কি তমন্না হ্যায়, লতার গানে ঘুরে দাঁড়ানোর বার্তা দিয়ে দশম বারেও সুদের হার অপরিবর্তিত রেখে দিয়েছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। গত অর্থবর্ষ মানে, ২০২০-২০২১-তে, জিডিপি-র যে হার, মানে জিডিপি সংকোচনের হার–ছিল ৭.২ শতাংশ। এই অর্থবর্ষে কেন্দ্র মনে করছে জিডিপি বৃদ্ধির হার ৯. ২ শতাংশ হবে। কিন্তু বর্তমানে ওমিক্রনের ধাক্কায় অর্থনীতির মন্দগতির কথা মাথায় রেখেই সুদের হার অপরিবর্তিত রাখার রাস্তা থেকে আরবিআই সরেনি। খারাপ পরিস্থিতির সঙ্গে লড়াই, অর্থনীতিকে সেই মতো এগিয়ে নিয়ে চলা, নীতিকে বলা হয় অ্যাকোমোডেটিভ পলিসি।

Advertisment

আরবিআইয়ের মনিটারি পলিসি কমিটি বা এমপিসি-র ছ'জন সদস্যের মধ্যে জয়ন্ত ভার্মা ছাড়া বাকিরা এই নীতি বজায় রাখার পক্ষেই মত দিয়েছেন। অর্থনীতিবিদদের অনেকে এতে খুশি না হলেও, এই ঘোষণায় শেয়ার বাজার খুশি ভালই। সেনসেক্স শোঁ-শোঁ করে বাড়তে শুরু করে ঘোষণার পর, নিফটিও সেই পথ ধরে। আরবিআইয়ের গভর্নর শক্তিকান্ত দাশ ঘোষণা করতে গিয়ে বলেছেন, মুদ্রাস্ফীতির দিকে তাকিয়ে এবং ওমিক্রন-সম্পর্কিত যে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে বাজারে, পৃথিবীর বাজারের অবনমন তার ধাক্কা, সেই সব বিচার করেই সুদের হার অপরিবর্তিত রাখা হচ্ছে। যা এ দেশের অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোকে সুনিশ্চিত করে তুলবে।

কেন কোনও বদল নেই?

রেপো রেট, মানে হল-- ব্যাঙ্কগুলিকে ধার দেওয়া অর্থের উপর সে সুদ নেয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক, তা চার শতাংশই রাখা হয়েছে। এর মানে হল, বিভিন্ন ব্যাঙ্কের তরফে কোনও ধরনের সুদ বাড়ানোর আর প্রশ্ন উঠছে না। ২০২০ সালের মার্চ মাস থেকে, আরবিআইয়ের রেপো রেট ১১৪ বেসিস পয়েন্ট (.১১৪) কমে চার শতাংশ হয়, আর রিভার্স রেপো রেট, মানে বিভিন্ন ব্যাঙ্কের থেকে নেওয়া টাকায় যে সুদ দেয় আরবিআই, তা একই পরিমাণ কমে হয় ৩.৩৫ শতাংশ। বিভিন্ন ব্যাঙ্কও তাদের সুদের হার চোখে পড়ার মতো কমিয়ে দেয় তার পর।
তবে অর্থনীতিবিদদের অনেকেই এবার মনে করেছিলেন, রেপো অপরিবর্তিত রাখলেও, রিভার্স রেপো রেট অন্তত বাড়াবে আরবিআই। কারণ, মহামারিকালে বাজারে যে নগদ অর্থের জোগান বাড়ানো হয়েছে, যাকে সারপ্লাস লিকুইডিটি বলে, সেটা কমানোর দরকার রয়েছে বলে মনে করছিলেন তাঁরা। রয়টার্সের সমীক্ষায় অর্থনীতিবিদরা আশা করেছিলেন রিভার্স রেপো রেট ৩.৩৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে আরবিআই ৩. ৫৫ শতাংশ করবে। কিন্তু সেই পথে না হেঁটে কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক হয়তো মুদ্রাস্ফীতিকেই উসকেছে বলে মত অনেকের। যদিও পৃথিবীর বেশ কয়েকটি কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কই সুদের হার বাড়ানোর পথেই হাঁটছে। যেমন, আমেরিকার ফেডেরাল রিজার্ভ জানিয়েছে, তারা মার্চ মাসে সুদের হার বাড়াবে, ইউরোপিয়ান সেন্ট্রাল ব্যাঙ্কও সুদের হার বাড়ানোর পথে হাঁটবে বলে মনে করা হচ্ছে। এ ভাবে বাজারে নগদের জোগান কমানো এদের অন্যতম উদ্দেশ্য।

সমীক্ষা থেকে কী বার্তা?

আরবিআই কনজিউমার কনফিডেন্স সার্ভে বা উপভোক্তার আস্থা-সমীক্ষা এবং হাউজহোল্ড ইনফ্লেশন এক্সপেক্টেশন সার্ভে বা পরিবারগত মুদ্রাস্ফীতির প্রত্যাশা সমীক্ষা প্রকাশ করেছে। কনজিউমার কনফিডেন্স সার্ভের মাধ্যমে বোঝা যায় জনসাধারণ নিজেদের অর্থনৈতিক আগামী সম্পর্কে কী ভাবছে। কেউ কোনও বড় কিছু কিনবেন কিনা, যেমন গাড়ি কিংবা বাড়ি, বা অন্য কোনও বড় আর্থিক পদক্ষেপ করবেন কি না, মানে তাঁর যা বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থা, দেশের গোটা অর্থনীতির যা অবস্থা, তা থেকে সেই আত্মবিশ্বাস তাঁর আছে কি না, তাই দেখা হয় এই সমীক্ষায়। এতে উঠে এসেছে যে, পরিস্থিতি ভাল হচ্ছে, পর পর তিন বার যা বলেছে সমীক্ষা, কিন্তু হতাশাজনক পরিসর, যাকে বলা হচ্ছে পেসিমিস্টিক জোন, তার বাইরে বেরতে পারেনি এখনও এর ফলাফল।

পরিবারগত মুদ্রাস্ফীতির প্রত্যাশা সমীক্ষা থেকে জানা যায় মুদ্রাস্ফীতি নিয়ে কী ভাবছে দেশের মানুষ। আগামী তিন মাসে পণ্যের দামদর কী হতে পারে বলে মনে করছে তারা। এবারের আরবিআইয়ের সমীক্ষা থেকে জানা গিয়েছে, তুলনায় কম সংখ্যক পরিবার মনে করছে মুদ্রাস্ফীতির হার বাড়বে। তবে তারা বলেছে, অত্যাবশ্যকীয় খরচখরচা বাড়বে, এর ফলে মোট খরচ বেড়ে যাবে। যদিও অন্যান্য খরচ নিয়ন্ত্রণেই থাকবে।

আরও পড়ুন আয়কর আইনে কী কী রেট্রোস্পেকটিভ পরিবর্তন, তার কেমন প্রভাব আপনার জীবনে পড়বে?

কনজিউমার কনফিডেন্স সার্ভে চলেছিল ২ থেকে ১১ জানুয়ারি পর্যন্ত, ১৩টি প্রধান শহরে। আমদাবাদ, বেঙ্গালুরু, ভোপাল, চেন্নাই, দিল্লি, গুয়াহাটি, হায়দরাবাদ, জয়পুর, কলকাতা, লখনউ, মুম্বই, পটনা এবং তিরুবনন্তপুরমে। হাউজহোল্ড ইনফ্লেশন এক্সপেক্টেশন সার্ভে হয়েছে ২ থেকে ১২ জানুয়ারি পর্যন্ত, ১৮টি প্রধান শহরে। ৫,৯৮৫টি পরিবারে এই সমীক্ষা চালানো হয়েছিল।
আরবিআই মনে করছে খুচরো বাজারে, তেলের দাম বাড়া সত্ত্বেও, এই অর্থবর্ষে (২০২১-২২) মুদ্রাস্ফীতির হার হবে ৫.৩ শতাংশ। আগামী অর্থবর্ষে যা কমবে বলে মনে করছে তারা। তাদের পূর্বাভাস হল, ২০২১-২১ অর্থবর্ষে খুচরোয় মুদ্রাস্ফীতি পৌঁছবে ৪.৫ শতাংশে। গত বছর অগস্টের পর থেকেই যা বাড়ছে। ডিসেম্বরে কনজিউমার প্রাইজ ইনডেক্স, যার মাধ্যমে খুচরো বাজারের মুদ্রাস্ফীতির ছবিটা ধরা পড়ে, পৌঁছয় ৫.৫৯ শতাংশে। যদিও রয়টার্সের সমীক্ষা বলেছিল, মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে হবে ৫.৮০ শতাংশ।

অন্য দিকে জোগানের সঙ্কটে হোলসেল প্রাইজ ইনডেক্স বা পাইকারি বাজারে মুদ্রাস্ফীতি গত ন'মাস ধরে ডবল ডিজিট বা দু'-সংখ্যায় রয়েছে, গত নভেম্বরে তো সেইটি ১৪ পেরিয়ে গিয়েছিল, অথচ ২১-এর জানুয়ারিতে ছিল মাত্র ২ শতাংশ। পাইকারি বাজারে মুদ্রাস্ফীতির হার আরও বাড়তে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। তার কারণ জোগানের টালমাটাল যেমন রয়েছে, তেমনই কাজ করছে প্রকৃতির বিরূপ কাণ্ডকারখানা।

আরবিআইয়ের অর্থনৈতিক কমিটি মনে করছে, ২০২২-২৩-এর প্রথম অর্ধে মুদ্রাস্ফীতির হার মাথা নোয়াবে, যা লক্ষ্যে পৌঁছনোর পথে এগিয়ে যাবে ক্রমে। আরবিআই চাইছে, মুদ্রাস্ফীতিতে লাগাম দিতে সরকার শুল্ক কমাক। সবচেয়ে বড় চিন্তাটা হল তেল নিয়ে। অপরিশোধিত তেলের দাম ব্যারেল পিছু ৯০ ডলারে পৌঁছেছে, আরও যা বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে। এর ধাক্কায় মুদ্রাস্ফীতিতে কতটা লাগাম দেওয়া সম্ভব হবে সেই চিন্তাটা থাকছেই।

RBI Repo Rate Monetary Policy
Advertisment