লকডাউন নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক নতুন গাইডলাইন জারি করার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই অসামরিক বিমান পরিবহণের দায়িত্বে থাকা ডিরেক্টর জেনারেল অফ সিভিল অ্যাভিয়েশন (DGCA) জানিয়ে দিয়েছে, বাণিজ্যিক স্তরে আন্তর্জাতিক বিমান চলাচল ৩০ জুন পর্যন্ত নিষিদ্ধ থাকবে। ডিজিসিএ-র তরফ থেকে এক সার্কুলার জারি করে বলা হয়েছে, আরও একবার বলা হচ্ছে যে ভারত থেকে যেসব বিদেশি বিমানসংস্থার উড়ান যাতায়াত করে, তাঁদের চলাচলের সময় নির্দিষ্ট সময়ে জানিয়ে দেওয়া হবে।
ভারত নিয়মিত আন্তর্জাতিক বিমান চলাচলের অনুমতি কবে দেবে?
অন্তর্দেশীয় বিমান পরিষেবা দুমাস লকডাউনের পর গত সোমবার শুরু হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক জানিয়েছে আন্তর্জাতিক বিমান পরিষেবা আপাতত বন্ধ থাকবে এবং পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
কিন্তু এ সম্পর্কিত সিদ্ধান্ত কেবল ভারতের হাতে নেই, কারণ যেসব দেশগুলিতে বিমান যাবে, তারাও খতিয়ে দেখবে ভাপত থেকে আসা বিমান কতটা সুরক্ষিত এবং সেই বিবেচনা করে তারাও তাদের দেশের বিমানবন্দরে ভারত থেকে আসা বিমান অবতরণের অনুমতি দেবে। এবং সেদিক থেকে দেখলে ভারতের আশা কম কারণ ভারতে কোভিড-১৯ সংক্রমণের সংখ্যা ঊর্ধ্বমুখী। এ ছাড়া কোভিড-উত্তর পুনর্বহাল পদ্ধতিতে বিমান পরিষেবা সম্পর্কিত ক্ষমতা সম্ভবত গোটাটাই রাষ্ট্রের হাতে থাকবে।
আনলকডাউন- এবার দায়িত্ব ব্যক্তি ও সংস্থার কাঁধে
অন্য দেশ কি আন্তর্জাতিক বিমান পরিষেবা শুরু করেছে?
ইউরোপের মধ্যে একাধিক দেশ ১৫ জুনের পর থেকে আন্তঃ ইউরোপ সীমান্ত খুলে দিচ্ছে যাতে ছুটি কাটানো সহ বিভিন্ন প্রয়োজনে বিমানযাত্রা করা যায়। সুইডেন, ব্রিটেন, আয়ারল্যান্ড, হল্যান্ড এবং স্লোভেনিয়া ইউরোপিয় ইউনিয়নের পর্যটকদের জন্য সীমান্ত খুলে দিচ্ছে, জার্মানি, হাঙ্গেরি, রোমানিয়া ও ফিনল্যান্জের মত দেশগুলি আংশিক পরিষেবা চালু করছে। লুৎফহানসার মত বিমান সংস্থা জুন মাস থেকে সপ্তাহে ৩৬০০ বিমান চালনার কথা ঘোষণা করেছেন। এ ছাড়া লুফৎহানসা গোষ্ঠীভুক্ত সুইস এবং ইউরোউইংস ৭০টি আন্তর্জাতিক বিমান চালাবে।
তবে ইউরোপিয় ইউনিয়ন তাদের বাইরের সীমান্ত খোলার ব্যাপারে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত জানায়নি। এশিয়ায় কাতার এয়ারওয়েজ বলেছে, তারা জুনের মাঝামাঝির আগেই ম্যানিলা, নাইরোবি ও আম্মানের মত ৫০টির বেশি জায়গায় বিমান চলাচল শুরুর পরিকল্পনা করেছে। তারা একই সঙ্গে আশাপ্রকাশ করেছে এ মাসের শেষে ইউরোপের ২৩টি, আমেরিকার ৪টি, মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকায় ২০টি ও অশিয়া প্যাসিফিকে ৩৩টি - মোট ৮-টি জায়গায় বিমান চালাবে।
আন্তর্জাতিক রুট কীভাবে খুলবে?
যাত্রীদের কোয়ারান্টিন ও পরীক্ষার মত পদক্ষেপের বিষয়টি তো সার্বজনীন বটেই, এ ছাড়াও কথা হচ্ছে বাবল বা এয়ার ব্রিজের মত বিষয়ও, যার ফলে অনেকটাই ভাইরাস বিমুক্তি ঘটে থাকে এবং এ ছাড়া একে অপরের টেস্ট ও সংক্রমিতের সংখ্যার উপর নির্ভর করার বিষয়টি তো আছেই।
‘খালি চোখে’ই সনাক্ত করা যেতে পারে কোভিড ভাইরাসকে
দ্য ইকোনমিস্ট পত্রিকার বক্তব্য অনুসারে, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড কোভিড-নিরাপদ ভ্রমণাঞ্চল তৈরি করতে পারে। প্রশান্ত মহাসাগরের ছোট দ্বীপ কুক দ্বীপপুঞ্জ বা ফিজি, যারা ভাইরাসকে দূরে রাখতে সক্ষম হয়েছে, তারাও এই অংশে য়োগ দিতে পারে। এই অঞ্চলে যুক্ত হতে পারে হংকং, দক্ষিণ কোরিয়া ও তাইওয়ানের মত জায়গাগুলিও। তাইওয়ান এখন স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে কাজ করছে যাতে সুরক্ষিত ভ্রমণের প্রটোকল স্থির করা যায়, এর আওতায় প্রায় ৫০০ মানব গিনিপিগ সান ফ্রান্সিসকো থেকে তাইপেই যাচ্ছেন।
যাত্রীদের বিমানভ্রমণের আগে কোয়ারান্টিন পর্যায়ে টেস্ট করা হবে এবং তাঁরা বিমান থেকে নামার পর প্রতি দুদিনে একবার করে টেস্ট করা হবে। এর লক্ষ্য হল কাজের জন্য যাঁরা কোথাও যাচ্ছেন, তাঁদের কোয়ারান্টিনের সময় সংক্ষিপ্ত করে আনা। বর্তমানে ১৪ দিনের কোয়ারান্টিনের কথা বলা হয়েছে।
ভারতের যেসব ভ্রমণকারী বিদেশ যেতে আগ্রহী, তাঁদের অনেকটাই নির্ভর করতে হবে দেশে এই অতিমারী কেমন ছড়ায় ও কেমনভাবে ডিজিসিএ ও আন্তর্জাতিক নিয়ত্রক সংস্থাগুলি আগামী মাসে ভারত থেকে বিমান চলাচলের ব্যাপারে কী বলে তার উপরে।