করোনাভাইরাস অতিমারীর জন্য যেসব ক্ষেত্র সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তার অন্যতম বিমান পরিবহণ। তবে লকডাউনে শিথিলতার সঙ্গে সঙ্গে বেশ কিছু দেশ আন্তর্জাতিক বিমান চালনা শুরু করেছে, তবে বেশ কিছু বিধিনিষেধও বহাল করেছে তারা। ভারত এখনও আন্তর্জাতিক বিমান চলাচল শুরু করেনি তবে ইতিমধ্যেই বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের জন্য গাইডলাইন দিয়ে দিয়েছে। কেন্দ্রীয় অসামরিক বিমান পরিবহণ মন্ত্রী হরদীপ সিং পুরী গত শনিবার সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, "আমরা চেষ্টা করছি অগাস্টের আগে ভাল পরিমাণ যাত্রীবাহী আন্তর্জাতিক বিমান পরিবহণ শুরু করার।"
ভারত ছাড়া যেসব দেশে আন্তর্জাতিক বিমান চলাচল এখনও সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ, তার মধ্যে রয়েছে মায়ানমার, থাইল্যান্ড, লাওস, কাজাখাস্তান, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, সৌদি আরব, পোল্যান্ড, ইউক্রেন ও আর্জেন্টিনা সহ বেশ কিছু দেশ।
বিভিন্ন দেশ বিমান পরিবহণে কী কী বিধিনিষেধ জারি করেছে একবার দেখে নেওয়া যাক।
ইউরোপিয় ইউনিয়ন ও ব্রিটেনের বিমান পরিবহণের বিধি
ইউরোপিয়ান সেন্টার ফর ডিজিজ প্রিভেনশন অ্যান্ড কন্ট্রোল (ECDC) জানিয়েছে, এখন বিমানবন্দরে যে স্ক্রিনিং পদ্ধতি চালু আছে তা ভাইরাসের বিরুদ্ধে সুরক্ষায় কার্যকরী নয়। ECDC-র সুপারিশ উপসর্গযুক্ত ব্যক্তিদের ভ্রমণ করতে দেওয়া অনুচিত। স্বাস্থ্য বিষয়ক প্রশ্নপত্র, তাপমাত্রা মাপা এবং ইমিউনিটি সার্টিফিকেটের মত কিছু প্রতিষধেক ব্যবস্থার কথাও বলা হয়েছে।
কলকাতা বিমানবন্দরে শুরু হয়ে গেল বিমান ওঠা-নামা: উড়ানযাত্রায় কী করবেন, কী করবেন না?
এ ছাড়া যাত্রীদের বিমানে নিয়ে যাওয়ার জন্য ব্যবহৃত গাড়িতে দেড় থেকে দু মিটার দূরত্ব রাখার কথাও বলা হয়েছে যাত্রীদের মধ্যে। বলা হয়েছে, শারীরিক দূরত্ব যদি নিশ্চিত না করা যায়, তাহলে সমস্ত যাত্রীদের ফেস মাস্ক নিশ্চিত করতেই হবে।
ইউরোপে ইজিজেট ১৫ জুন থেকে মহাদেশের ২২টি বিমানবন্দরে বিমান চালানো শুরু করবে, এবং স্পেন ১ জুলাই থেকে নিষেধজ্ঞা তুলে নেবে বলে মনে করা হচ্ছে। এখন কেবলমাত্র ইতালি, গ্রিস, ফিনল্যান্ড, ফ্রান্স ও জার্মানির নাগরিকরা স্পেনে প্রবেশ করতে পারেন।
বিবিসি জানিয়েছে, ইজিজেট ব্রিটেন থেকে কেবলমাত্র একটি বিমানই চালাবে, গ্যাটউইক থেকে ফ্রান্সের নিস পর্যন্ত। ইজিজেট ছাড়া রায়ানএয়ার ১ জুলাই থেকে ইউরোপের ৮০টি বিমানবন্দের তাদের ৪০ শতাংশ বিমান চালানো শুরু করবে। এ ছাড়া ব্রিটেনে যে কোনও ভাবেই সে দেশে এসে পৌঁছন সমস্ত ব্যক্তিকে ৮ জুন থেকে শুরু হওয়া দু সপ্তাহের বাধ্যতামূলক কোয়ারান্টিনের কথা বলেছে।
ফ্রান্স শেনজেন সদস্যভুক্ত দেশ ছাড়া বাকি সমস্ত দেশের নাগরিকদের সে দেশে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে ব্যাতিক্রম কেবল ফরাসি নাগরিক ও ফরাসি নাগরিকের স্বামী বা স্ত্রী এবং সন্তানরা। আয়ারল্যান্জে সমস্ত যাত্রীদের বাধ্যতামূলক ১৪ দিনের হোম কোয়ারান্টিনে থাকতে হবে এবং একটি নির্দিষ্ট ফর্ম ভরতে হবে।
আমেরিকা, কানাডা সহ বিভিন্ন দেশ কীভাবে অন্য দেশ থেকে এসে পৌঁছনো যাত্রীদের উপর নিয়মবিধি লাগু করছে
আমেরিকা- ইরান, চিন, ইউরোপিয় শেনজেন এলাকা, ব্রিটেন, আয়ারল্যান্ড ও ব্রাজিল থেকে আমেরিকার নাগরিক ছাড়া কারো আসা নিষিদ্ধ। নির্দিষ্ট ব্যতিক্রমী কারণে ছাড় রয়েছে। অন্য দেশ থেকে আসা যাত্রীদের স্বেচ্ছায় ১৪ দিন বাড়িতে থাকতে হবে এবং নিজের স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ করতে হবে।
কানাডা- আমেরিকা বা কানাডা ছাড়া অন্য কোনও দেশের নাগরিকের প্রবেশ নিষেধ। এই তালিকায় রয়েছে স্থায়ী বাসিন্দা, তাঁদের নিকট পরিবারের সদস্য, কূটনীতিবিদ, মরশুমি কৃষিকর্মী ও কেয়ারগিভাররাও। পারমিট থাকলে আন্তর্জাতিক ছাত্রছাত্রীদেরও প্রবেশ করতে দেওয়া হবে।
চিন- ২৮ মার্চ থেকে মূল চিন ভূখণ্ডে বিদেশি নাগরিকদের প্রবেশ নিষেধ। তবে প্রয়োজনীয় আর্থিক, বাণিজ্যিক, কারিগরি ও বৈজ্ঞানিক কাজে বিদেশি নাগরিকরা সে দেশে যেতে পারেন। বেজিংয়ে পৌঁছলে সমস্ত যাত্রীদের পিসিআর পরীক্ষা ও ১৪ দিনের বাধ্যতামূলক কোয়ারান্টিনের নির্দেশ রয়েছে। আন্তর্জাতিক বিমান পরিবহণ চিন কিছুটা বাড়িয়েছে। এয়ার চায়না যেমন জুন থেকে দুটি আন্তর্জাতিক বিমান চালি করছে, বেজিং থেকে ম্যানিলা ও মাদ্রিদ। বিদেশি বিমানসংস্থা চিনে প্রবেশের অনুমতি চেয়েছে, তবে কোনও সাড়া মেলেনি এখনও।
ভারতে আন্তর্জাতিক আগমনের নির্দেশিকা
১ জুন থেকে ১০০ জোড়া ট্রেন, কী হবে মেট্রোর?
বন্দে ভারত মিশনের আওতায় কেন্দ্রীয় অসামরিক বিমান পরিবহণ মন্ত্রক বিদেশ থেকে ভারতীয়দের নিয়ে আসার জন্য বিমানের বন্দোবস্ত করেছে। ভারতের বিদেশি নাগরিকরা পরিবারে মৃত্যুর মত আপৎকালীন কারণে এ দেশে আসতে পারবেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা যাঁদের বাবা-মা ভারতীয় নাগরিক ও ভারতে বসবাসকারী, তাঁরাও দেশে আসতে পারবেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রক আন্তর্জাতিক আগমনের কিছু গাইডলাইন স্থির করেছে তবে রাজ্যগুলি কোয়রান্টিন ও আইসোলেশন বিষয়ে নিজেদের মত করে তা তৈরি করতে পারে। মন্ত্রকের তরফে গাইডলাইনে উল্লেখযোগ্য যা বলা হয়েছে-
১) বিমানে চড়ার আগে সমস্ত বিমানযাত্রীদের বাধ্যতামূলক ১৪ দিনের কোয়ারান্টিনে যেতে হবে - ৭ দিন নিজের খরচে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারান্টিনে ও তারপর ৭ দিনের হোম কোয়ারান্টিন। সঙ্গে নিজের স্বাস্থ্যের পর্যবেক্ষণ করতে হবে।
২) মানবিক সমস্যা, গর্ভাবস্থা, পরিবারে মৃত্যু, গুরুতর অসুস্থতা, ১০ বছরের নিচের বাচ্চাসহ বাবা-মায়ের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের অনুমতি পেলে ১৪ দিনের হোম কোয়ারান্টিনে থাকা যেতে পারে। আরোগ্য সেতু অ্যাপ সকলের জন্যই বাধ্যতামূলক।
৩) করণীয় ও অকর্তব্য বিষয়ে সমস্ত তথ্য ভ্রমণকারীদের টিকিটের সঙ্গে সংস্থা জানিয়ে দেবে।
৪) সমস্ত যাত্রীদের মোবাইল ডিভাইসে আরোগ্য সেতু অ্যাপ ডাউনলোড করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
৫) বিমানে বা জাহাজে ওঠার সময়ে থার্মাল স্ক্রিনিংয়ের পর কেবলমাত্র উপসর্গবিহীন যাত্রীদের ভ্রমণের অনুমতি দেওয়া হবে।
৬) সড়কসীমান্ত দিয়ে যাঁরা প্রবেশ করবেন, তাঁদের সকলকেও একই পদ্ধতির মধ্যে দিয়ে যেতে হবে, এবং কেবলমাত্র উপসর্গবিহীনরাই ভারতে প্রবেশ করতে পারবেন।
৭) যাত্রীকে সেলফ ডিক্লারেশন ডুপ্লিকেট ফর্ম ফিলআপ করতে হবে এবং তা বিমানবন্দর, সমুদ্রবন্দর বা সড়কসীমান্তের স্বাস্থ্য ও ইমিগ্রেশন আধিকারিকদের জমা দিতে হবে। আরোগ্য সেতু অ্যাপের মাধ্যমেও এই ফর্ম পাওয়া যাবে।
৮) যাত্রীরা এসে পৌঁছনোর পর বিমানবন্দর, সমুদ্রবন্দর বা সড়কসীমান্তে তাঁদের থার্মাল স্ক্রিনিং হবে। উপসর্গযুক্ত যাত্রীকে সঙ্গে সঙ্গে আলাদা করে চিকিৎসাক্ষেত্রে নিয়ে যাওয়া হবে।
৯) অন্য যাত্রীদের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারান্টিনে নিয়ে যাওয়া হবে, এই যাত্রীদের অন্তত সাতদিন প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারান্টিনে রাখা হবে।
১০) কোনওভাবে উপসর্গ দেখা দিলে তা জেলা পর্যবেক্ষণ আধিকারিক বা রাজ্য ও কেন্দ্রের কল সেন্টার (১০৭৫)-এ জানাতে হবে।