Mother Language Day 2024 history and significance: ভাষা হল নিজেকে প্রকাশের মাধ্যম। সেই ভাষা যদি জন্ম পরবর্তী সময় থেকে শিখে আসা ভাষা হয়, আমাদের পালনকারী মায়ের মুখের ভাষা হয়, তবে তার গুরুত্বই আলাদা। সেই ভাষাই হল আমাদের মাতৃভাষা। প্রতিবছর ২১ ফেব্রুয়ারি পালিত হয় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। যার ইতিহাসে জড়িয়ে বাঙালির গর্ব, বাঙালির অহংকার।
history of International Mother Language Day আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের ইতিহাস:-
ভাষা শহিদ
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বাংলাদেশে জাতীয় শহিদ দিবস হিসেবেও পালিত হয়। এর ইতিহাসের সূত্রপাত হয়েছিল ভারত ভাগের পর। দেশভাগের চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ সেই সময় পূর্ব পাকিস্তান। সেখানকার বাঙালির ওপর জোর করে উর্দুভাষা চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা শুরু হয়। পালটা গর্জে ওঠে বাঙালি। ১৯৪৭ সালের নভেম্বর-ডিসেম্বর, পূর্ব পাকিস্তানের রাজধানী ঢাকায় শুরু হয় ভাষাবিক্ষোভ। ১৯৪৮ সালের মার্চে সীমিত ভাষা আন্দোলন হয়। যার চরম প্রকাশ ঘটে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি। ওই দিন সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা ১৪৪ ধারা অমান্য করে রাজপথে বেরিয়ে আসেন। পালটা, পুলিশ তাঁদের ওপর গুলি চালায়। যাতে আবুল বরকত, আবদুল জব্বার, আবদুস সালামের মত কয়েকজন ছাত্র ও যুবক নিহত হন।
বাংলা ভাষা প্রচলন বিল
প্রতিবাদে ক্ষুব্ধ ঢাকাবাসী ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হস্টেলে জড় হন। পরদিন, ২২ ফেব্রুয়ারি ছাত্রদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষও পূর্ব পাকিস্তানের রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানান। ভাষাশহিদদের স্মৃতিতে ২৩ ফেব্রুয়ারি, রাতারাতি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের হস্টেল প্রাঙ্গণে তৈরি হয় স্মৃতিস্তম্ভ। কিন্তু, পাকিস্তান প্রশাসন সেই স্মৃতিস্তম্ভ ২৬ ফেব্রুয়ারি গুঁড়িয়ে দেয়। তাতে আন্দোলন আরও ছড়িয়ে পড়ে। ১৯৫৪ সালে পূর্ব পাকিস্তানে প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট জয়লাভ করে। সেখানে ৭ মে আয়োজিত গণপরিষদের অধিবেশনে বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। বাংলাকে পাকিস্তানের দ্বিতীয় রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে পূর্ব পাকিস্তানে বা প্রাদেশিক সংবিধানে পরিবর্তন আনা হয়। দিনটা ছিল ১৯৫৬ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি। বাংলাদেশ স্বাধীন হলে, ১৯৮৭ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি সেদেশের সংসদে 'বাংলা ভাষা প্রচলন বিল' পাশ হয়। যা কার্যকর হয় ১৯৮৭ সালের ৮ মার্চ।
কানাডার দুই বাঙালির প্রচেষ্টা
১৯৯৮ সালে কানাডার ভাংকুভারের দুই বাঙালি রফিকুল ইসলাম ও আবদুস সালাম রাষ্ট্রসংঘের মহাসচিব কোফি আন্নানের কাছে ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালনের দাবি জানিয়েছিলেন। চিঠিটি রাষ্ট্রসংঘের মহাসচিবের তৎকালীন প্রধান তথ্য আধিকারিক হাসান ফেরদৌসের নজরে আসে। ১৯৯৮ সালের ২০ জানুয়ারি, ফেরদৌস পালটা রফিকুলকে অনুরোধ করেন, রাষ্ট্রসংঘের কোনও সদস্য দেশকে দিয়ে এই আবেদন করাতে। এরপরই রফিকুল, 'মাদার ল্যাংগুয়েজ লাভার্স অফ দ্য ওয়ার্ল্ড' নামে একটি সংগঠন আবদুস সালামকে সঙ্গে নিয়ে গড়ে তোলেন। এই সংগঠনে ইংরেজিভাষী, জার্মানভাষী, ক্যান্টোনিভাষী ও কাচ্চিভাষীরাও যোগ দিয়েছিলেন। তাঁরা রাষ্ট্রসংঘের মহাসচিব কোফি আন্নানকে, 'অ্যা গ্রুপ অফ মাদার ল্যাংগুয়েজ অফ দ্য ওয়ার্ল্ড' নামে এক সংগঠনের পক্ষ থেকে চিঠি দেন। সেই চিঠির কপি পাঠানো হয়েছিল রাষ্ট্রসংঘে কানাডার দূত ডেভিড ফাওলারের কাছেও।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি
১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ইউনেস্কোর প্যারিস অধিবেশনে মাতৃভাষা দিবসের প্রস্তাবটি উত্থাপিত হয়। ১৮৮টি দেশ তাকে সমর্থন জানায়। এরপর ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ২০০০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে দিনটি রাষ্ট্রসংঘের সদস্য দেশগুলো আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালন করে আসছে। এরপর ২০১০ সালের ২১ অক্টোবর বৃহস্পতিবার, রাষ্ট্রসংঘের ৬৫তম সাধারণ অধিবেশনে এখন থেকে প্রতিবছর ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হবে বলে প্রস্তাব উত্থাপিত হয়। প্রস্তাবটি উত্থাপন করেছিল বাংলাদেশ। ২০১১ সালের মে মাসে রাষ্ট্রসংঘের ১১৩ সদস্যবিশিষ্ট তথ্যবিষয়ক কমিটিতে প্রস্তাবটি সর্বসম্মতভাবে পাস হয়।
আরও পড়ুন- মেয়র নির্বাচনে সুপ্রিম হস্তক্ষেপ! বিরাট স্বস্তি তৃণমূলের ঘনিষ্ঠ দলের
significance of International Mother Language Day আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের তাৎপর্য:-
প্রতিবছর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালনের লক্ষ্যে ইউনেস্কো একটি থিম বেছে নেয়। যেমন- ‘সীমান্তহীন ভাষা’, ‘উন্নয়ন, শান্তি ও পুনর্মিলনের জন্য আদিবাসী ভাষা গুরুত্বপূর্ণ’, ‘টেকসই করার জন্য ভাষাগত বৈচিত্র্য এবং বহুভাষিকতার উন্নয়ন’। ২০২৪ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি, বুধবার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের থিম হল- 'বহুভাষিক শিক্ষা আন্তঃপ্রজন্মীয় শিক্ষার একটি স্তম্ভ'। এই থিম বহুভাষিক শিক্ষার গুরুত্ব তুলে ধরেছে। বহুভাষিক শিক্ষার লক্ষ্য- বিভিন্ন প্রজন্মের মধ্যে জ্ঞান, দক্ষতা, মূল্যবোধ এবং অভিজ্ঞতা বিনিময়। এই ব্যাপারে রাষ্ট্রসংঘ তার ওয়েবসাইটে লিখেছে, বহুভাষী এবং বহুসাংস্কৃতিক সমাজ ভাষার সংরক্ষণের মাধ্যমেই উন্নতি লাভ করে। ভাষা ঐতিহ্যগত জ্ঞান এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য বহন করে। তাই মাতৃভাষার গুরুত্ব সর্বাধিক বলেই জানান ভাষা বিজ্ঞানীরা। যদিও বর্তমান বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৪০ শতাংশই মাতৃভাষায় লেখাপড়ার সুযোগ পান না।