Advertisment

ডিপ ন্যুড- সাইবার জগতের বড় বিপদ

২০১৭ সালে এক রেডিট ব্যবহারকারী ডিপফেক নাম দিয়ে সেলিব্রিটিদের নগ্ন ভিডিও পোস্ট করেন। এর পর থেকে এ ধরনের অ্যাপ ও ওয়েবসাইটের ব্যবহার বেড়েছে এবং তা গড়পড়তা ব্যবহারকারীর কাছেও সুলভ হয়ে গিয়েছে।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Deep Nude, DeepFake

ডিপ ন্যুড হল কম্পিউটার কৃত ছবি বা ভিডিও

ভারতের সাইবারক্রাইম আধিকারিকরা কিছু ওয়েবসাইট ও অ্যাপের উপর লক্ষ্য রাখতে শুরু করেছেন। এগুলি আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI) অ্যালগরিদম ব্যবহার করে কোনও ব্যক্তির সম্পূর্ণ অজ্ঞাতে তাঁর নগ্ন ছবি তৈরি করে। এই ছবিগুলি কখনও ব্ল্যাকমেল করতে, কখনও প্রতিশোধ নিচে বা কখনও সোশাল নেটওয়ার্ক বা ডেটিং সাইটে জালিয়াতি করে ব্যবহার করা হয়।

Advertisment

ডিপ ন্যুড কী?

সাইবার অপরাধীরা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স সফটওয়ার ব্যবহার করে, যা এখন বিভিন্ন ওয়েবসাইট ও অ্যাপে সহজলভ্য। এর মাধ্যমে তারা বিভিন্ন মিডিয়াফাইল ব্যবহার করে একটি ভিডিও ফোটো বা অডিও ফাইল বানায়।  ডিপ ন্যুড হল কম্পিউটার কৃত ছবি বা ভিডিও। ২০১৮ সালের মার্চ মাসে রেডিটে মার্কিন ফার্স্ট লেড মিশেল ওবামার একটি ফেক ভিডিও আসে। ফেকঅ্যাপ নামের একটি অ্যাপ ব্যবহার করে তাঁর মুখকে জুড়ে দেওয়া হয় এক পর্নস্টারের শরীরের সঙ্গে।

রিলায়েন্স-ফেসবুক চুক্তি, কোন সংস্থা কী পাবে?

২০১৭ সালে অভিনেতা গ্যাল গ্যাডোটের একটি পর্নভিডিও ইন্টারনেটে আবির্ভূত হয়। এবারেও ওই একই প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়। অন্য কিছু ডিপফেক ভিডিওতে ডেইজি রিডলে, স্কারলেট জনসন, মেইজি উইলিয়মস, টেলর সুইফট ও অব্রে প্লাজার মুখ ব্যবহার করা হয়েছে।

এ ব্যাপারটা কেবল নগ্নতা ও পর্নোগ্রাফিতে সীমাবদ্ধ নেই। ২০১৮ সালে কমেডিয়ান জর্ডন পিলে অ্যাডোব আফটার এফেক্টস ও ফেকঅ্যাপ ব্যবহার করে একটি ভিডিও বানান যাতে দেখা যায় প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা হলিউটের ছবি ব্ল্যক প্যান্থার সম্পর্কে মতামত দিচ্ছেন ও বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্পর্কে মন্তব্য করছেন। সম্প্রতি দিল্লি দাঙ্গার ঘটনায় দিল্লির বিজেপি সভাপতি মনোজ তেওয়ারির একটি হিন্দি ভিডিও বার্তা ইংরেজি অডিও সহ পুনর্নির্মাণ করা হয়।

AI অ্যালগোরিদম ব্যবহার করে একজনের মুখের কথা, মাথার নড়চড়া ও অভিব্যক্তি অন্য ব্যক্তির চেহারায় বসিয়ে দওয়া হয়, যাতে কেউ যদি খুব ভাল করে খেয়াল না করেন, তাহলে বুঝতে পারবেন না যে সেগুলি ডিপফেক।

প্রথম কবে ডিপ ন্যুডের আবির্ভাব ঘটে?

২০১৭ সালে এক রেডিট ব্যবহারকারী ডিপফেক নাম দিয়ে সেলিব্রিটিদের নগ্ন ভিডিও পোস্ট করেন। এর পর থেকে এ ধরনের অ্যাপ ও ওয়েবসাইটের ব্যবহার বেড়েছে এবং তা গড়পড়তা ব্যবহারকারীর কাছেও সুলভ হয়ে গিয়েছে।

ডিপ ন্যুড ও ডিপ ফেক নিয়ে বিতর্ক ফের তুঙ্গে ওঠে ২০১৯ সালের জুলাই মাসে, যখন ফেস অ্যাপ ও ডিপন্যুডের মত অ্যাপ, যারা নগ্ন নারীর ছবি বাজারে আনে, তারা জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।

আপত্তি

ডিপফেক ছবি, অডিও ভিডিও যত বেশি বাস্তবের কাছাকাছি হচ্ছে, তত বেশি করে এই প্রযুক্তি সাইবারক্রিমিনালদের কাছে জনপ্রিয় হচ্ছে যারা এর মাধ্যমে ভুয়ো তথ্য ছড়াচ্ছে বা ব্ল্যাকমেল করছে।

কেবল অশোধিত তেল নয়, চিনির বাজারেও দুর্বিপাক

যে কেউ ডিপ ন্যুড তৈরি করতে পারে?

 ২০১৯ সালের অগাস্টের CSIRO Scope-এর এক নিবন্ধ অনুসারে সাধারণ কম্পিউটার ব্যবহারকারীর পক্ষে বিশ্বাসযোগ্য ডিপফেক বানানো মুশকিল। কিন্তু যদি কারও মেশিন লার্নিং সম্পর্কে বেশি জ্ঞান থাকে তাহলে এবং ভিক্টিমের সোশাল মিডিয়া প্রোফাইলের ফোটোগ্রাফিক, ভিডিও ও অডিও কনটেন্ট যদি সহজলভ্য হয় সেক্ষেত্রে তা করা সম্ভব।

এমনকি বেশ কিছু ওয়েবসাইট ও অ্যাপও এখন সাধারণ ব্যবহারকারীদের পক্ষে ডিপফেক ও ডিপন্যুড বানানো সহজ করে দিয়েছে। প্রযুক্তির উন্নতির সঙ্গে তার মানও বাড়বে বলেই প্রত্যাশিত।

ভাইসের এক নিবন্ধ অনুসারে Adobe VoCo-র মত টুলের উদ্ভব হওয়ায় Face2Face অ্যালগোরিদমের মাধ্যমে রেকর্ডেড ভিডিও-ও বদলে ফেলা যায়, যার ফলে “বিশ্বাসযোগ্য এমন ভিডিও বানানো সম্ভব, যা সত্যিই কখনও বলা বা করা হয়নি। এমনকি যৌনক্রিয়াও।”

 ডিপফেক কি আইনি?

আমেরিকায় এর আইনগত দিক জটিল। কোনও ব্যক্তি একদিকে যেমন ডিপফেকের মাধ্যমে তাঁর চরিত্রহনন হয়েছে বলে দাবি করতে পারেন, এ ধরনের কনটেন্ট সরিয়ে দেওয়া আবার সেন্সরশিপ হিসেবে গণ্য, যা প্রথম সংশোধনী অনুসারে মার্কিনদের ধর্মীয়, বাক, জমায়েত ও আবেদনের স্বাধীনতা স্বীকার করে।

সাইবার সিভিল রাইট ইনিশিয়েটিভের হিসেবে আমেরিকার ৪৬টি স্টেটে রিভেঞ্জ পর্ন আইন রয়েছে। এর অর্থ হল কোনও ব্যক্তি সম্মতি ব্যাতিরেকে তাঁকে হেনস্থার উদ্দেশ্যে যৌন ছবি বা ভিডিও তৈরি করে ইন্টারনেটে প্রকাশ করা।

কিন্তু ডিপ ন্যুডের ক্ষেত্রে সম্মতির বিষয়টি জটিলতর কারণ ভিডিওতে তাঁর শরীর প্রকাশিত হচ্ছে না, কেবলমাত্র তাঁর মৌখিক ভাব প্রকাশ হচ্ছে। যেমন কেউ দাবি করতে পারেন ডিপ ন্যুডের পর্নোগ্রাফি ভিডিও আসলে প্যারোডি ভিডিও যা প্রথম সংশোধনী অনুসারে সুরক্ষাযোগ্য।'

গ্রিন জোন নয়, লকডাউন তুলতে প্রয়োজন গ্রিন কর্মিগোষ্ঠী গড়ে তোলা

কিন্তু আশার আলো রয়েছে ভুলে যাবার অধিকারের ধারণার মধ্যে। এর মাধ্যমে একজন ইউজার ফেসবুক বা গুগলের মত সংস্থার কাছে তাঁর নিজের যেসব ডেটা সংস্থার কাছে রক্ষিত, তা মুছে দিতে বলতে পারেন। ওয়াশিংটন পলিসি সেন্টারের এক সাম্প্রতিক নিবন্ধে জানা গিয়েছে আমেরিকার কিছু স্টেট ও ইউরোপিয় ইউনিয়ন গোপনীয়তা রক্ষা বিধিতে এই ধারণা প্রয়োগের মাধ্যমে খশড়া প্রস্তুত করা শুরু করেছে।

নিজেকে সুরক্ষিত রাখবেন কীভাবে?

আপনার ছবি কে ডাউনলোড করছে বা অপব্যবহার করছে তার হদিশ যেহেতু রাখা সম্ভব নয়, সেকারণে সোশাল মিডিয়ার প্রাইভেসি সেটিং নিজের সুবিধা অনুসারে রাখুন। যদি মনে করেন আপনার অনুমতি ছাড়া আপনার ছবি ব্যবহার করা হয়েছে, তাহলে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে সহজেউ খুঁজে পেতে পারেন আপনার মত ছবি।

ওয়েবে কার সঙ্গে কথা বলছেন, সে ব্যাপারে খেয়াল রাখুন। সোশাল মিডিয়া প্রোফাইলে খেয়াল রাখুন, তাদের ছবির কমেন্ট দেখুন, তাতে বুঝতে পারবেন যাঁর সঙ্গে আলাপচারিতা করছেন তিনি কতটা জেনুইন।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন

Social Media
Advertisment