সোমবার ইরানে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। পরোয়ানা জারি করা হয়েছে আরও বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে। এ বছরের ৩ জানুয়ারি বাগদাদে ইরানের জেনারেল কাসিম সোলেইমানিকে ড্রোন হামলায় হত্যা করার পিছনে যাঁদের হাত রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে তাঁদের সকলের বিরুদ্ধেই এই পরোয়ানা।
অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের এক রিপোর্ট অনুসারে তেহরানের অভিযোক্তা আলি আলকাসিমেহর বলেছেন ট্রাম্প এবং আরও ৩০ জন ইরানে হত্যা ও সন্ত্রাসবাদে অভিযুক্ত।
কাসিম সোলেইমানি কে ছিলেন?
ইরানের ইসলামিক রেভলিউশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি)-এর কুদ বাহিনীর দায়িত্বে ছিলেন সোলেইমানি। আমেরিকা এই সংগঠনকে গত বছর এপ্রিল মাসে বিদেশি জঙ্গি সংগঠনের তকমা দেয়। কুদ বাহিনী অন্যান্য দেশে ইরানি মিশন চালায়, তার মধ্যে গোপন অপারেশনও রয়েছে।
সোলেইমানি শুধু ১৯৯৮ থেকে কুদদের শীর্ষ নেতৃত্বে অবস্থান করাকালীন গোয়েন্দা তথ্য ও গোপন মিলিটারি অপারেশনের দায়িত্বেই শুধু ছিলেন না, একই সঙ্গে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতোল্লা আলি খামেনেইয়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার সুবাদে তাঁর প্রভাব ছিল ব্যাপক এবং তাঁকে ইরানের সম্ভাব্য নেতা হিসেবেও দেখা শুরু হয়েছিল।
কীভাবে মারা গেলেন সোলেইমানি?
২০২০ সালের শুরুতে আকাশহামলায় সেলোইমানির মৃত্যু হয়, আমেরিকা এই হামলার দায় নিয়েছিল। সোলেইমানি বিমান থেকে নামার পর বাগদাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিকটবর্তী রাস্তায় এই ড্রোন হামলা হয়। সোলেইমানি ও বেশ কিছু অফিসার এবং ইরান সমর্থিত মিলিশিয়াকে নিয়ে যাওয়ার সময়ে দুটি গাড়িতে এই হামলা হয়। এ ঘটনায় যাঁরা মারা গিয়েছিলেন তাঁদের মধ্যে ছিলেন ইরাকের ইরান সমর্থিত মিলিশিয়া পপুলার মোবিলাইজেশন ফোর্সের ডেপুটি কম্যান্ডার আবু মেহদি আস মুহান্দি।
সোলেইমানির মৃত্যুর অর্থ কী?
সোলেইমানির প্রভাবের কারণে তাঁর মৃত্যুর সঙ্গে তুলনা করা হয় মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্টের মৃত্যুর। সে সময়ে আমেরিকার প্রতিরক্ষা দফতর আমেরিকার সঙ্গে সংঘর্ষে সোলেইমানির নেতৃত্বের ভূমিকা নিয়ে বলেছিল, জেনারেল সোলেইমানি এবং তাঁর কুদ বাহিনী কয়েকশ আমেরিকান ও কোয়ালিশন সার্ভিসের সদস্যের হত্যা ও আরও কয়েকহাজারের আহত হওয়ার জন্য দায়ী। ইরাকে গত কয়েকমাসে কোয়ালিশন বেসে হামলার পরিকল্পনা করেছে সোলেইমানি, এর মধ্যে রয়েছে ২৭ ডিসেম্বরের হামলাও, যে ঘটনায় আরও কিছু মার্কিন ও ইরাকি হতাহত হয়েছেন।
তাঁর মৃত্যুর পর ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রৌহানি বলেন, এই হত্যাকাণ্ডের ফলে আমেরিকার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ইরান আরও বেশি নির্ণায়ক হবে।
তাহলে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিযোগের অর্থ কী?
ইরান ট্রাম্পের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে এবং ফ্রান্সে অবস্থিত ইন্টারপোলের কাছে অনুরোধ জানিয়েছে যেন ড্রোন হামলায় অভিযুক্ত ট্রাম্প ও অন্যান্যদের গ্রেফতার করা হয়। ইরান ইন্টারপোলের কাছে ট্রাম্প ও অন্যান্যদের বিরুদ্ধে রেড নোটিস জারি করার অনুরোধও জানিয়েছে।
ইন্টারপোলে রেড নোটিস বলতে বোঝায় সারা পৃথিবীর আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলির কাছে যে ব্যক্তি প্রত্যর্পণ, আত্মসমর্পণ, বা এই ধরনের আইনি পদক্ষেপের মুখে রয়েছেন, তাঁকে খুঁজে বের করা এবং অস্থায়ী ভাবে গ্রেফতার করার অনুরোধ। ইন্টারপোল তার সদস্য দেশগুলির কাছে এই অনুরোধ প্রকাশ করে। পলাতক ব্যক্তি বিচার বা শাস্তির জন্য ওয়ান্টেড হতে পারেন।
তা সত্ত্বেও রেড নোটিসের অর্থ আন্তর্জাতিক স্তরে কোনও ব্যক্তির ওয়ান্টেড নোটিস, আন্তর্জাতিক গ্রেফতারি পরোয়না নয়। ইন্টারপোল ইরানের এই অনুরোধ মানবে বলে হয় না কারণ এ ধরনের নোটিসের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক কাজকর্মে হস্তক্ষেপের বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়া হয়। খুব জোর ইরানের এ পদক্ষের দু দেশের মধ্যে সম্পর্কে উত্তেজনা বৃদ্ধি করবে।