/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2020/07/trump-lead.jpg)
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তখন ঘুমের দেশে। সবে ভোর হয়েছে। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একের পর এক টুইট কাঁচা ঘুম ভাঙাল মার্কিনিদের। হাই তোলা দূর, হাঁ করে জানতে হল, প্রেসিডেন্ট পদের নির্বাচন পিছিয়ে দিতে চান ট্রাম্প! আমেরিকাবাসীর কথা মাথায় রেখেই এই করোনা অতিমারীর সময়ে এমন ভাবনা তা জানিয়ে দিয়েছেন ট্রাম্প।
হোয়াইট হাউজের বাসিন্দার সাফ বক্তব্য, 'ইউনিভার্সাল মেল-ইন ভোটিং ২০২০' পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে তা ইতিহাসে সবথেকে ত্রুটিপূর্ণ ও প্রতারণার নির্বাচন হবে। আর তা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য যথেষ্ট অপমানের। সত্যি কথা বলতে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে থাকে গোটা বিশ্ব। প্রশ্নাকারে ট্রাম্পের প্রস্তাব, "যতক্ষণ না মানুষ নিরাপদে যথাযথভাবে ভোট দিতে পারছেন, ততদিন কি নির্বাচন পিছনো যায়?"
With Universal Mail-In Voting (not Absentee Voting, which is good), 2020 will be the most INACCURATE & FRAUDULENT Election in history. It will be a great embarrassment to the USA. Delay the Election until people can properly, securely and safely vote???
— Donald J. Trump (@realDonaldTrump) July 30, 2020
প্রসঙ্গত, করোনা ভাইরাসের দাপটে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মার্কিন মুলুক। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সেখানে নভেল করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৪০ লক্ষেরও বেশি মানুষ। মৃত্যু হয়েছে ১ লক্ষ ৫১ হাজার জনের। লকডাউন নিয়মাবলী এনও তেমন জোরদার নয়। সেই আবহে নভেম্বরে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হলে জনসাধারণ বুথে গিয়ে কীভাবে ভোট দেবে তা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছিল বিরোধী ডেমোক্র্যাট শিবির। জনস্বাস্থ্য বিধি মেনে তাই 'মেইল-ইন ভোটিং'কেই প্রাধান্য দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এই পদ্ধতি মানতে নারাজ বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
নির্বাচন কি পিছিয়ে দিতে পারবেন ট্রাম্প?
চলতি বছরের নভেম্বরের ৩ তারিখে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট পদের নির্বাচন হওয়ার কথা। কিন্তু ট্রাম্পের টুইট ইঙ্গিত দিচ্ছে নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার। আদৌ কি তা সম্ভব? আমেরিকার প্রেসিডেন্সিয়াল ইতিহাস নিয়ে চর্চা করা ইতিহাসবিদ মাইকেল বেসচলস বলেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প যদি এই পদক্ষেপ নেন তবে তা আমেরিকার ইতিহাসে প্রথম এবং 'আমেরিকার আইন লঙ্ঘনকারী' হবে। এই প্রেক্ষাপটেই ১৮১১ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় প্রেসিডেন্ট জন অ্যাডামস লিখে যান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আইনের সরকার, মানুষের নয়। অর্থাৎ ট্রাম্পের এই ঘুমভাঙানো টুইট আইনের ঘুম ভাঙাতে অপারগ। তাই তিনি যা বলেছেন তা করার অধিকার তাঁর নেই। হ্যাঁ, তবে আইন যেমন আছে, আইনের ফাঁকও আছে। সেক্ষেত্রে ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে যদি কংগ্রেস সদস্যরা সহমত হন, তবে পিছিয়ে যেতে পারে নির্বাচন।
আরও পড়ুন, গণিতই মগজাস্ত্র! কীভাবে জটিল অঙ্কের সমাধান করতেন শকুন্তলা দেবী?
কিন্তু এখানেও বজ্রআঁটুনি। হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভ, ডেমোক্র্যাটদের দখলে। তাঁরা প্রথম থেকেই 'মেইল-ইন ভোটিং'-এর সমর্থনে কথা বলে এসেছেন। তাই রিপাবলিকান পার্টি কিংবা ডোনাল্ড ট্রাম্প চাইলেও এই আবেদন পাস যে রীতিমতো অসম্ভব তা সকলে বুঝে গিয়েছেন।
তবে ট্রাম্প প্রথম নন যিনি এই নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার কথা বললেন। করোনার বাড়বাড়ন্তের কারণ দেখিয়ে মার্চ মাসে ওহাওয়ো-তে প্রাথমিক নির্বাচন পিছিয়ে দেন ওহাওয়োর ডিরেক্টর অফ হেলথ অ্যামি অ্যাকটন। অ্যামিকে অবশ্য সব ধরনের সমর্থন জুগিয়েছিলেন সেই প্রদেশের গভর্নর তথা রিপাবলিকান নেতা মাইক ডেওয়াইন।
মার্কিন মুলুকে কারা ঠিক করে নির্বাচনের দিন?
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের তারিখ আইন অনুসারে ৩ নভেম্বর নির্ধারণ করা হয়েছে। এর অর্থ এই যে এবার যদি নির্বাচনে বিলম্বের প্রয়োজন পড়ে তবে আইন প্রণেতাদের ঐক্যমত হতে হবে। কংগ্রেসনাল রিসার্চ সার্ভিস অনুসারে, "বিংশতম সংশোধনীর অধীনে ক্ষমতাসীন রাষ্ট্রপতির কার্যকাল ২০ জানুয়ারি, ২০২১-এর দুপুরে শেষ হবে। এই তারিখের পরে রাষ্ট্রপতির পদে থাকার অনুমতি দেওয়ার সংস্থান আইনের কোনও বিধানে নেই। এমনকি জাতীয় জরুরি অবস্থা হলেও নতুন সংবিধান সংশোধনীর অনুমোদনের কোনও বিধান নেই।” সুতরাং, ২০২১ সালের ২০ জানুয়ারির মধ্যে ট্রাম্প যদি ফের নির্বাচিত না হন তবে তিনি অফিস ছাড়তে বাধ্য হবেন, এমনটাই নিয়ম।
কেন মেইল-ইন ভোটিং-এর বিপক্ষে কথা বলছেন ট্রাম্প?
বুধবার থেকেই ট্রাম্প মেল-ইন ভোটিং-এর বিরুদ্ধে টুইটারে মন্তব্য করেন। 'কারচুপি নির্বাচনের' দাবি করে সরব হয়েছেন তিনি। তিনি ইঙ্গিত করেছেন, মেল-ইন ভোটিং-এর ফলে কোনও প্রমাণ না দিয়েই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আরও বেশি ব্যাপক আকারে নির্বাচনের জালিয়াতির ঘটনা ঘটতে পারে।
আরও পড়ুন, কেন মার্কিন-চিন সম্পর্কের ভাঙন ভারতের কাছে গুরুত্বপূর্ণ?
বিরোধী ডেমোক্র্যাটদের নিশানা করে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, "ডেমোক্র্যাটরা ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে বৈদেশিক প্রভাবের কথা বলছেন, কারণ তাঁরা জানেন মেল-ইন ভোটিং-এ বিদেশিরা সহজেই প্রবেশ করতে পারবে"।
এর আগে কি কখনও নির্বাচন পিছিয়েছে?
আমেরিকার ২৪৪ বছরের ইতিহাসে প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচন অজ পর্যন্ত কখনও স্থগিত হয়নি বা পিছিয়ে যায়নি। এমনকি, ১৯১৮ সালের স্প্যানিশ ফ্লু বা আমেরিকার গৃহযুদ্ধ (১৮৬১-১৮৬৫), কিংবা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়- কখনো পিছিয়ে যায়নি এই নির্বাচন।
এমনকি অপ্রত্যাশিতভাবে ট্রাম্প যদি নির্বাচন পিছনোর বিষয়ে হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভসের সমর্থনও পায়, সে ক্ষেত্রেও অনির্দিষ্টকাল বা খুব বেশি সময়ের জন্য তা পিছতে পারবেন না। কারণ, ২০ জানুয়ারির পর নয়া মেয়াদে প্রেসিডেন্ট চাই ওভাল অফিসের।
বিষয়টা কি আরও জটিল হতে পারে?
সম্ভবত হ্যাঁ। হাউজের সদস্যেরা প্রতি দু'বছর অন্তর নির্বাচিত হন। যদি অনির্দিষ্টকালের জন্য প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচন পিছিয়ে যায়, তাহলে হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভস গঠনই করা যাবে না।
Read the story in English
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন