Advertisment

কীভাবে মারা হল আই এস নেতা আল বাগদাদিকে?

"মার্কিন বাহিনী ও তাদের কুকুরেরা যত কাছে পৌঁছে যাচ্ছিল, ততই বাগদাদি ফোঁপাচ্ছিল, কাঁদছিল, চিৎকার করছিল।"

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Baghdadi, Trump

ছবি- টুইটার

রাতের বেলা হেলিকপ্টারগুলো উড়েছিল অনেকটা নিচ দিয়ে, খুব দ্রুত। সিরিয়ায় লুকিয়ে থাকা আইএস নেতা আবু বকর আল বাগদাদির বাসস্থানে হানা দেওয়ার জন্য বিশেষ মার্কিন বাহিনী ছিল সে হেলিকপ্টারে। যখন বাগদাদির হাইডআউটে মার্কিন বাহিনী ঝাঁপিয়ে পড়ল আর পৃথিবীর মোস্ট ওয়ান্টেড জঙ্গি জীবনের শেষ কয়েক কদম দৌড় দিচ্ছিল, অর্ধেক পৃথিবী দূরত্বে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার রিয়েল টাইম ভিডিও দেখছিলেন।

Advertisment

বহু বছরের গোয়েন্দা নেটওয়ার্কিং এবং আল বাগদাদির উত্তর পশ্চিম সিরিয়ার এক চত্বরে লুকিয়ে থাকার খবর  সুনিশ্চিত হবার পর ওয়াশিংটনের ৪৮ ঘণ্টার দ্রুত পরিকল্পনা, এ দুইয়ের যোগসাজশে কার্যকর হয় এই দুঃসাহসী হানা।

সে রাতের নিখুঁত সুশৃ্ঙ্খল অপারেশন ছিল অপ্রত্যাশিত ফলাফলদায়ী। ঠিক কী ঘটেছিল সে রাতে, তা এক দিকে যেমন জানিয়েছেন ট্রাম্প ও প্রশাসনিক ও অন্যান্য আধিকারিকরা, তেমনই জানিয়েছেন হতবাক গ্রামবাসীরা, যাঁদের কোনও ধারণাই ছিল না যে বাগদাদি তাঁদের মধ্যেই লুকিয়ে ছিল।

আরও পড়ুন, বিশ্লেষণ: আবু বকর আল বাগদাদি কে, তার মৃত্যুর তাৎপর্য কী?

দুদিনের ধাঁধা এবং এক উদযাপন

বৃহস্পতিবার রাতে হোয়াইট হাউস জানতে পারে, ইডলিব প্রদেশের এক জায়গায় আল বাগদাদির লুকিয়ে থাকার সম্ভাবনা প্রবল। এর পরেই ঘটনাপ্রবাহ দ্রুত মোড় নিতে থাকে।

শুক্রবারের মধ্যে ট্রাম্পের কাছে সামরিক ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ আসে। শনিবার সকালের মধ্যে প্রশাসনের কাছে আরও নির্দিষ্ট খবর আসে যার ভিত্তিতে অ্যাকশন শুরু করা যায়।

এসবের কোনও ইঙ্গিতই বাইরে ছিল না, ট্রাম্প নিজে শুক্রবার রাতে মেয়ে ইভাঙ্কা ও জামাই জেয়ার্ড কুশনারের দশম বিবাহবার্ষিকী পালন করার জন্য ক্যাম্প ডেভিডে চলে যান। এর পর শনিবার তিনি গলফ খেলতে চলে যান ভার্জিনিয়ায়।

এর পর তিনি যান বেসবল খেলতে।

ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে ফেরেন বিকেল ৪টে ১৮ মিনিটে। পাঁচটার মধ্যে ওয়েস্ট উইংয়ের সিচুয়েশন রুমে পৌঁছন তিনি হানাদারি দেখভাল করতে। একজন আধিকারিক জানিয়েছেন, গোটা অপারেশন তাঁরা দেখেছিলেন রিয়েল টাইম ছবির মাধ্যনে, কিন্তু ট্রাম্প নিজে আল বাগদাদির শেষ মুহূর্তের যে বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছেন তার ভিত্তি হল মিলিটারি কম্যান্ডারদের সঙ্গে তাঁর কথোপকথন।

অপারেশনের নামকরণ হয় মার্কিন মানবতাবাদী সংস্থার কর্মী মার্কিন নাগরিক কায়লা মুলারের নামে, যিনি আল বাগদাদির হাতে লাঞ্ছিত ও নিহত হন।

আতঙ্ক ও মৃত্যু

হোয়াইট হাউসের সবাই জড়ো হওয়ার পরেই পশ্চিম ইপাকের আল আসাদ বিমান ঘাঁটি থেকে উড়ে যায় আকাশ বাহিনী। কয়েক ঘণ্টা পরেই মৃত্যু হয় আল বাগদাদির।

গ্রামবাসীরা দেকেছিলেন খুব নিচু দিয়ে হেলিকপ্টার উড়ে আসছে। এক গ্রামবাসীর কথায়, "আমরা বারান্দায় যেতেই ওরা অটোমেটিক রাইফেল দিয়ে গুলি ছুড়তে শুরু করে। তাই আমরা ভেতরে গিয়ে লুকিয়ে পড়ি।" এরপর একটা বিরাট বিস্ফোরণ হয়- ট্রাম্প বলেন, "সেনারা একটি বাড়ির বাইরে একটি গর্ত তৈরি করে, কারণ তাদের আশঙ্কা ছিল বাড়ির সদরে বোমার ফাঁদ পাতা থাকতে পারে। আল বাগদাদি মাটির নিচের বাঙ্কারে পালিয়ে যায় এবং গোটা চত্বরে মধ্যে ছড়িয়ে থাকা টানেলে আশ্রয় নেয়।"

বলিষ্ঠকায়, দাড়িওয়ালা জঙ্গি নেতার পরণে ছিল আত্মঘাতী পোশাক, মার্কিন বাহিনীর হাত এড়িয়ে পালানোর সময়ে সে সঙ্গে রেখেছিল তিন শিশুকে।

ট্রাম্প আরও জানিয়েছেন, "মার্কিন বাহিনী ও তাদের কুকুরেরা যত কাছে পৌঁছে যাচ্ছিল, ততই বাগদাদি ফোঁপাচ্ছিল, কাঁদছিল, চিৎকার করছিল।" ট্রাম্প বলেন, "টানেলের শেষ মাথায় পৌঁছে গিয়েছিল ও, আমাদের কুকুরগুলো ওকে তাড়া করছিল। বাগদাদি পোশাকে বিস্ফোরণ ঘটায়, তাতে নিজেও মারা যায়, মারা যায় তিনটি শিশুও।"

`ও-ই ছিল’

বিস্ফোরণে বাগদাদির দেহ ছিন্নভিন্ন হয়ে গিয়েছিল, গোটা টানেল তার উপরে এসে পড়েছিল। মৃতদেহ উদ্ধার করার জন্য বাহিনীকে ধ্বংসাবশেষ খুঁড়তে হয়েছিল।

ট্রাম্প বলেন, "বিশেষ কিছু অবশিষ্ট ছিল না, কিন্তু তা সত্ত্বেও কিছু টুকরো ছিল যে গুলো বের করে আনা হয়।" তখনই সামরিক বাহিনী ফরেন্সিক অপারেশন শুরু করে। স্পেশাল ফোর্সকে নিয়ে আসা হয়।

সে ফোর্স নিজেদের সঙ্গে নিয়ে এসেছিল আল বাগদাদির ডিএনএ স্যাম্পল। সেনাবাহিনীর মনে হয়েছিল হানা চলাকালীন যে পালিয়েছিল তাকে অনেকটা বাগদাদির মত দেখতে, কিন্তু সেটাই যথেষ্ট ছিল না। এর আগে বাগদাদির মৃত্যুর অনেক খবর রটেছে, কিন্তু কিছুদিন পর তার আবার উদয় ঘটেছে।

এবার আর সন্দেহের অবকাশ নেই। ল্যাব টেকনিশিয়ানরা মৃত্যুর ১৫ মিনিটের মধ্যে ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত করেছেন সে কথা। ট্রাম্প বলেছেন, ও-ই ছিলয

শুধু আল বাগদাদির মৃতদেহই উদ্ধার করা হয়নি। ট্রাম্প বলেছে বাগদাদির মৃত্যুর পরেও দু ঘন্টা সে চত্বরে ছিল বাহিনী, উদ্ধার করা হয়েছে আইএসের অতি গুরুত্বপূর্ণ জিনিসপত্র, য়ার মধ্যে তাদের পরবর্তী পরিকল্পনা সম্পর্কিত তথ্যও রয়েছে।

মার্কিন বাহিনী ফিরে যাবার পর, আমেরিকান যুদ্ধ বিমান সে বাড়ি মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিতে সেখানে ছটি রকেট ছোড়ে।

দুই শীর্ষ পদস্থ ডেমোক্র্যাট, হাউস স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি এবং হাউস ইন্টেলিজেন্স কমিটির প্রধান অ্যাডাম শিফকে এই গোটা অপারেশনের ব্যাপারে অন্ধকারে রাখা হয়েছিল।

গোপনীয়তার ব্যাপারে ট্রাম্প তাঁদের বিশ্বাস করেন না। তিনি বলেছেন, ঠওয়াশিংটনে খবর ফাঁসের কারখানা। এবারে কোনও কিছু ফাঁস হয়নি, কোনও সমস্যা হয়নি। যে সামান্য কয়েকজন বিষয়টা জানত তাদের যোগাযোগ আমার সঙ্গে।ঠ

`বৃহত্তম’

রবিবারের ঘোষণার জন্য ডিপ্লোম্যাটিক রুম বেছে নিয়েছিলেন ট্রাম্প। আল বাগদাদির মৃত্যুর ঘোষণাকে তিনি তুলনা করতে চেয়েছেন ২০১১ সালের ওসামা বিন লাদেনের হত্যাকাণ্ডের সফল অপারেশনের সঙ্গে।

ওসামা বিন লাদেন মার্কিন ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ জঙ্গি হানা ঘটিয়েছিল, আল বাগদাদি আই এস গোষ্ঠীকে ইরাক ও সিরিয়ার ৩৪ হাজার মাইল এলাকা জুড়ে নিয়ন্ত্রণ রাখতে সাহায্য করেছিল।

এই হানা সম্পর্কিত প্রশ্নোত্তরে প্রায় ৪৫ মিনিট সময় ব্যয় করেন ট্রাম্প। রবিবার বিকেলের মধ্যেই ট্রাম্পের ফের ভোটের প্রচ্রারে জন্য একে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা শুরু হয়ে যায়। ট্রাম্প সমর্থকেদের মেসেজ পাঠানো হতে থাকে। তাতে লেখা ছিল, ট্রাম্প দুনিয়ার এক নম্বর জঙ্গি নেতাকে ধরাশায়ী করেছেন- তিনি আমেরিকাকে নিরাপদে রাখছেন।

Advertisment