এ দেশে মাঙ্কিপক্সে দ্বিতীয় সংক্রমণের খবর এসেছে এবং তা নিয়ে হইচই হচ্ছে। দুবাই থেকে কুন্নুরে পৌঁছেছিলেন ৩১ বছরের ওই যুবক, জুলাইয়ের ১৩ তারিখ। ১৮ জুলাই নমুনা পরীক্ষার ফলাফল আসতে জানা গিয়েছে তিনি মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত। কুন্নুরের সরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তাঁকে ভর্তি করা হয়েছে, এবং তিনি স্থিতিশীল। মাঙ্কিপক্সে প্রথম আক্রান্তের খবর মিলেছিল এ মাসেরই ১৪ তারিখ। ৩৫ বছর বয়সী ওই ব্যক্তি। সংযুক্ত আরব আমিরশাহি থেকে ফিরেছিলেন। তার পর নমুনা পরীক্ষায় জানা গেল তিনি মাঙ্কিপক্স পজিটিভ। ফলে, একটি উচ্চপর্যায়ের কেন্দ্রীয় দলকে কেরল পাঠানো হয়েছে, যাঁদের কাজ হবে রাজ্য সরকারের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে জনস্বাস্থ্যে ব্যবস্থা নেওয়া। কেরলের ১৪টি জেলাতেই মাঙ্কিপক্স নিয়ে সতর্কতা জরি করা হয়েছে। বিমানবন্দরগুলিতে হেল্পডেস্কের ব্যবস্থা করা হয়েছে। যাতে পাঙ্কিপক্স নিয়ে যে কোনও ধোঁয়াশা মেটানো যায় এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা যায়।
মাঙ্কিপক্স সারা পৃথিবীতে কতটা ছড়িয়েছে?
মে মাসের শুরু থেকে সারা পৃথিবীতে মাঙ্কিপক্স ছড়াচ্ছে। বিশেষ করে সমকামী এবং উভকামীদের মধ্যে। WHO বলেছে, মাঙ্কিপক্সের নানা দেশে ছড়িয়ে পড়ার প্রক্রিয়া চলছে। ইউরোপ, আমেরিকা, আফ্রিকা, পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগর এবং পূর্ব ভূমধ্যসাগরের দেশগুলিতে ছড়াচ্ছে এই বানর বসন্ত। যে সব দেশে এই অসুখটি আগেও হয়েছে, যেমন নাইজেরিয়া, কঙ্গো, সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাব্লিক, এই সব জায়গায় সাধারণ মাত্রার চেয়ে এই রোগে আক্রান্তের সংখ্যা এখন বেশি। সারা পৃথিবীতে ১১,৫০০ জনের মাঙ্কিপক্স হয়েছে। এর মধ্যে ১, ৪৬৯ জন হল আমেরিকার, ব্রিটেনের ১, ৮৫৬ জন। সোমবার এমনই জানিয়েছে সংবাদ সংস্থা রয়টার্স। সবচেয়ে বেশি আক্রান্তের সংখ্যা অবশ্য স্পেনে। ২,৫০০ জন। অন্য আর একটি রিপোর্টে রয়টার্স বলেছে, ইউরোপীয় কমিশন মাঙ্কিপক্সের ভ্যাক্সিনের ৫৪ হাজার অতিরিক্স ডোজ পাচ্ছে, মূল সরবরাহের চুক্তি ছিল ১ লক্ষ ১০ হাজার ডোজ। যে ভ্যাক্সিন তৈরি করেছে বাভারিয়ান নর্ডিক নামে সংস্থা, যাদের হেডকোয়ার্টার ডেনমার্কে।
মাঙ্কিপক্সে কতটা উদ্বেগের?
মাঙ্কিপক্স প্রধানত সেই অসুখ, যা স্ব-সীমাবদ্ধ, বা নিজে থেকেই সেরে যায়। এটি রোগীর শরীরে কোনও দীর্ঘ মেয়াদি প্রভাবও ফেলে না। যে সব শিশু এবং প্রাপ্তবয়স্কের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা ভাল মাত্রায় রয়েছে, তাদের এই অসুখ কাবু করতে পারবে না। স্মলপক্সের ভ্যাক্সিন যে সব বয়স্কের নেওয়া রয়েছে, তারা মাঙ্কিপক্স থেকে বাঁচতে পারেন। আমাদের দেশে স্মলপক্সের বিলুপ্তি ঘটেছে ১৯৭৭ সালে।
আরও পড়ুন- এক ডলারের দাম হয়েছে ৮০ টাকা, কেন এরকম হচ্ছে, কোথায় এর শেষ?
কী করে মাঙ্কিপক্স ছড়ায়?
শ্বাসপ্রশ্বাসের থেকে ছড়ায় মাঙ্কিপক্স। যাঁর এই রোগ হয়েছে, তিনি যদি কাশেন বা হাঁচেন যে গুচ্ছ ড্রপলেট বেরিয়ে আসবে, তা থেকে মাঙ্কিপক্সও পৌঁছে যেতে পারে অন্য শরীরে। যদিও কোভিডের মতো দুরন্ত সংক্রামক নয় এই বানরবসন্ত। কোনও আক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে বেশ খানিকটা সময় থাকলেই এটি হতে পারে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক বলেছে, মাক্সিপক্সে আক্রান্ত কোনও রোগীর গায়ের পুঁজ যদি অন্য কারওর গায়ে লাগে তা হলে তাঁর এই রোগ হতে পারে। আক্রান্তের জামাকাপড় থেকেও হওয়া সম্ভব। এই রোগটি জানোয়ারের কাছ থেকে আমরা পেয়েছি। প্রথমে জানোয়ারের থেকে মানুষের শরীরে, তার পর মানুষ থেকে মানুষে। এই ভাবে বানরের মতোই বানরবসন্তও এক ডাল থেকে অন্য ডালে যাচ্ছে এগিয়ে। আফ্রিকায় প্রথম জানোয়ার থেকে মানুষের শরীরে এটি সেঁধিয়েছে বলে মনে করা হয়। যেমনটা এ দেশের হওয়ার সম্ভবনা অতি ক্ষীণ, মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। জানোয়ার থেকে মানুষের শরীরে ছড়ানোর ক্ষেত্রে আক্রান্ত জানোয়ারের কামড় বা আঁচড় দায়ী হয়ে থাকতে পারে।
মাঙ্কিপক্সের চরিত্র কেমন?
মাঙ্কিপক্সের উপসর্গ দুই থেকে চার সপ্তাহ পর্যন্ত থাকে। প্রথমিকপর্বটা চলে ৫ দিন পর্যন্ত। উপসর্গের মধ্যে রয়েছে-- জ্বর, মাথা-ব্যথা, হাত-পায়ে ব্যথা, ক্লান্তি ভাব এ সব। ঘাম হতে পারে। সর্দি হতে পারে, গলায় সংক্রমণও। জ্বর আসার এক থেকে তিন দিনের মধ্যে ভয়ঙ্কর rash-এর আগমন হয়ে থাকে। তার পর থেকে বেশ ভালমাত্রায় যন্ত্রণা পেতে হয়। মাঙ্কিপক্সে মৃত্যুর সম্ভাবনা শূন্য থেকে ১১ শতাংশের মধ্যে ঘোরাফেরা করে। সাধারণ ভাবে বাচ্চাদের বেশি হয়। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক বলছে, সাম্প্রতিক সময়ে এই রোগে মৃত্যুর হার ৩ থেকে ৬ শতাংশ। চিকিৎসা বলতে সাপোর্টিং ট্রিটমেন্ট। মানে, এই অসুখ হলে যে সমস্যা হচ্ছে, তার জন্য ওষুধ। এবং এখনও পর্যন্ত কোনও ভ্যাক্সিন হাতের কাছে আপনি পাবেন না।
Read full story in English