আবু ইব্রাহিম আল-হাশেমি আল-কুরেশি সম্পর্কে প্রায় কিছুই জানা যায় না। এ নাম প্রায় নিশ্চিতভাবেই যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে ব্যবহৃত ছদ্মনাম, জল্পনা চলছে আসল নাম হল হাজি আবদুল্লা। সম্প্রতি উদ্ধার হওয়া ইসলামিক স্টেটের নথিতে এ নামের উল্লেখ রয়েছে।
বৃহস্পতিবার ইসলামিক স্টেট (আইএস) তাদের খলিফা আবু বকর আল-বাগদাদির মৃত্যুর খবরে সিলমোহর দিয়েছে। একই সঙ্গে তারা বাগদাদির উত্তরসূরী হিসেবে আবু ইব্রাহিম আল-হাশেমি আল-কুরেশির নাম ঘোষণা করেছে।
আরও পড়ুন, বিশ্লেষণ: পেগাসাস স্পাইওয়ার ঠিক কী?
আইএসের নতুন খলিফা কে?
আবু ইব্রাহিম আল-হাশেমি আল-কুরেশি যে যুদ্ধকালীন ছদ্মনাম তা প্রায় নিশ্চিত করেই বলা চলে। আল কুরেশি একটি বিশেষণ। পয়গম্বর মহম্মদের কুরেশ জনজাতির মধ্যে যাঁরা খলিফার উত্তরসূরি তাঁদে আল কুরেশি বলা হয়ে থাকে। আল বাগদাদিরও একই দাবি ছিল। সে জন্মেছিল মধ্য ইরাকের জাল্লামে, যে গ্রামে বাস ছিল আল-বদরি জনজাতির, যারা কুরেশদের সঙ্গে সম্পর্কিত। তার নাম ছিল ইব্রাহিম আওয়াদ ইব্রাহিম আলি আল-বদরি। খলিফা নেতৃত্ব দাবি করার জন্য কুরেশ জনজাতির সঙ্গে সম্পর্কিত হওয়া অতীব প্রয়োজনীয়।
আবু ইব্রাহিম আল হাশেমি আল কুরেশি সম্পর্কে প্রায় কিছুই জানা যায় না। সন্ত্রাসবাদ সম্পর্কিত বিশ্লেষকরা বৃহস্পতিবার তার সম্পর্কে তথ্য জোগাড় করতে প্রায় ব্যর্থ হয়েছেন। কম্ব্যাটিং টেররিজম সেন্টারের সিটিসি সেন্টিনেল-এর সম্পাদক পল ক্রুইকশ্যাঙ্ক টুইট করে বলেছেন, "আইসিসের খুব ছোট, হাতে গোনা কয়েকজনের বাইরে তাদের নতুন নেতা আবু ইব্রাহিম আল-হাশেমি আল-কুরেশি সম্পর্কে কেউই কিছু জানে না।"
ক্রুইকশ্যাঙ্ক বলেছেন আইএস এখনও পর্যন্ত তার জীবন সম্পর্কে এমন কোনও তথ্য প্রকাশ করেনি, যার মাধ্যমে তার পরিচয় বিশ্লেষণ করা যেতে পারে। টেলিগ্রামে একটি অডিও নোট পেস্ট করে আইএস জানিয়েছে আল-কুরেশি জিহাদের একজন বড়সড় মুখ যে আগে মার্কিনদের সঙ্গে যুদ্ধ করেছে।
আরও পড়ুন, সরকারের বিরুদ্ধে কেন তথ্যের অধিকার আইন ধ্বংসের অভিযোগ আনলেন সোনিয়া গান্ধী?
আবু ইব্রাহিম আল-হাশেমি সম্পর্কে জল্পনা চলছে যে সে আসলে হাজি আবদুল্লা হতে পারে, যার নাম রয়েছে সম্প্রতি উদ্ধার হওয়া ইসলামিক স্টেটের আভ্যন্তরীণ নথিতে। এই নথি উদ্ধার করেছেন গবেষক আয়েমেন আল-তামিমি। নিউ ইয়্রক টাইমস এক রিপোর্টে এ কথা জানিয়েছে।
একজন খলিফা সম্পর্কে বলার মত কিছু নেই, এটা অস্বাভাবিক নয়?
কোনও জেহাদি সংগঠন, যার নেতৃত্বকে বিভিন্ন দেশের সামরিক ও গোয়েন্দাবাহিনী খুঁজে বেড়াচ্ছে, তাদের পক্ষে এমনটা অস্বাভাবিক নয়। সংশয় তৈরি করা এবং নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা তাদের প্রাথমিক লক্ষ্য।
নিউ ইয়র্ক টাইমস ড্যানিয়েল রাইনেরি নামের এক সাংবাদিক তথা বিশ্লেষককে উদ্ধৃত করেছে। তিনি এক দশকেরও বেশি সময় ধরে আইএস নেতৃত্বের কাঠামো নিয়ে গবেষণা করে আসছেন। তিনি বলছেন আইএস নেতৃত্ব প্রায়শই নতুন পদে নিয়োগ হলে যুদ্ধকালীন ছদ্মনাম ব্যবহার করে থাকে, যার অর্থ আল-কুরেশি হয়ত গত সপ্তাহ পর্যন্ত সম্পূর্ণ ভিন্ন নামে পরিচিত ছিল।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২০১০ সালে আল-বাগদাদি যখন আইএসের শীর্ষ পদে বসে, তখনও তার নাম সংগঠনের বাইরে কেউই বিশেষ জানত না।
নিউ ইয়র্ক টাইমসকে রাইনেরি বলেছেন, নতুন খলিফা আবু ইব্রাহিম আল-হাশেমি আল-কুরেশি এবং আইএস-এর নতুন মুখপাত্র আবু হামজা আল-কুরেশি, এ দুজনের নামই একেবারেই জাতিবাচক।
আল-বাগদাদির মৃত্যুর একদিন পরেই নিহত হয় আইএস-এর মুখপাত্র আবু হাসান আল-মুহাজির। তার জায়গায় এসেছে আবু হামজা আল-কুরেশি। তাকে এতদিন আল-বাগদাদির উত্তরসূরী বলে মনে করা হত। নিজের নামের সঙ্গে পয়গম্বরের যোগাযোগ থাকার সুবাদে সে বর্তমান প্রধান আবু ইব্রাহিম আল-হাশেমি আল-কুরেশির উত্তরসূরীও হতে পারে।
নিউ ইয়র্ক টাইমসের রিপোর্টে রাইনেরিকে উদ্ধৃত করা হয়েছে। "এ ধরনের যুদ্ধ পরিস্থিতির ছদ্মনাম ব্যবহার করা আমাদের বিভ্রান্ত করার জন্য, যাতে আমাদের পরিচিত লোকজনের তার সম্ভাব্য যোগাযোগ বুঝতে না পারি", মন্তব্য করেছেন তিনি।