Advertisment

বিশ্লেষণ: আবু বকর আল বাগদাদি কে, তার মৃত্যুর তাৎপর্য কী?

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আট বছর আগে বাগদাদিকে সন্ত্রাসবাদী ঘোষণা করে, তার মাথার দাম ধার্য করা হয় ১০ মিলিয়ন ডলার, অর্থাৎ ৭০ কোটি টাকারও বেশি।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Baghdadi, ISIS

ছবি- টুইটার

ভারতের দেওয়ালির সকালে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অর্থবহ একটি টুইট করেছেন। তিনি লিখেছেন, একটা বড় কিছু ঘটেছে।

Advertisment

শনিবার হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র বলেছেন, রবিবার সকালে, অর্থাৎ ভারতীয় সময় সন্ধে সাড়ে ছটায় গুরুত্বপূর্ণ একটা ঘোষণা করা হবে।

এ ব্যাপারে নির্দিষ্ট কিছু সরকারিভাবে না বলা হলেও, বেশ কিছু আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা উত্তর পশ্চিম সিরিয়ায় এক শীর্ষ জঙ্গি নেতার খোঁজে মার্কিন স্পেশাল কম্যান্ডোদের সফল অপারেশনের কথা বলছে।


নিউজউইক এবং সিএনএন বলছে লক্ষ্য ছিল ইসলামিক স্টেট (আইএস) নেতা আবু বকর আল বাগদাদি।

যদি ডিএনএ ও অন্যান্য পরীক্ষার মাধ্যমে সুনিশ্চিত করা যায় যে আল বাগদাদিকে হত্যা করা গিয়েছে, তাহলে ২০১১ সালের ২ মে-তে পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদে ওসামার হত্যার পর এটাই হবে মার্কিন বাহিনীর সবচেয়ে বড় সাফল্য।

আরও পড়ুন, বিশ্লেষণ: সারা দুনিয়ায় ধনী শহরগুলোতে বিদ্রোহ ঘনিয়ে উঠছে কেন?

আবু বকর আল-বাগদাদি কে?

ইসলামিক স্টেটের এই নেতাকে দুনিয়ার সবচেয়ে বড় ওয়ান্টেড ব্যক্তি বলে ধরা হয়ে থাকে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আট বছর আগে বাগদাদিকে সন্ত্রাসবাদী ঘোষণা করে, তার মাথার দাম ধার্য করা হয় ১০ মিলিয়ন ডলার, অর্থাৎ ৭০ কোটি টাকারও বেশি।

১৯৭১ সালে ইরাকে বাগদাদির জন্ম বলে ধরা হয়, ২০১৩ সালে সে ইসলামিক স্টেটের খলিফা বলে নিজেকে ঘোষণা করে।

এর পরের বছর উত্তর ইরাকের মসুলে রমজান উপলক্ষে আল নূরির মসজিদ থেকে ভাষণ দেবার সময়েই সে প্রথম জনসমক্ষে আসে। সেখানেই আইএস নিজেকে দুনিয়ার শাসক বলে ঘোষণা করে এবং আল বাগদাদিকে তাদের মাথা বলেও জানিয়ে দেয়।

কবে কখন বাগদাদি পৃথিবীর সবচেয়ে ভীতিকর জঙ্গি হয়ে উঠল?

২০১৪ সালের প্রথম দিকে আল বাগদাদির যোদ্ধারা পশ্চিম ইরাকের দখল নেয় এবং তার দেড় বছরের মধ্যে ইরাক ও সিরিয়ার বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে সন্ত্রাস ও বর্বরতা চালাতে থাকে। তাদের প্রচার করা মাথা কেটে নেওয়ার ভিডিও সারা দুনিয়াকে সন্ত্রস্ত করে, সমস্ত সরকারকে নাড়িয়ে দেয়।

২০১৫ সালের শেষাশেষি, ৮০ থেকে ১২০ লক্ষ্ মানুষের উপর শরিয়া আইন চাপিয়ে দেওয়া হয়, যার জেরে সারা দুনিয়ার জেহাদিরা তাদের প্রতি আকৃষ্ট হয়। এর মধ্যে ভারতের কিছু জেহাদিও রয়েছে।

সে সময়ে যে জঙ্গি সংগঠন ও সাম্রাজ্য বাগদাদির নেতৃত্বে চলত, তার আকার ছিল ইংল্যান্ডের মত, যার বাজেট ছিল কোটি ডলারের বেশি এবং সেনাবাহিনীতে ছিল ৩০ হাজার জেহাদি।

২০১৬ সালের পর থেকে আন্তর্জাতিক জোটের সামনে দুর্বল হতে শুরু করে আইএস, সৌজন্যে সিরিয়ার কুর্দিশ যোদ্ধা সহ স্থানীয় মিত্রশক্তি। সিরিয়া এবং ইরাকের জমি ফিরে পেতে শুরু করে তারা।

আইসিসের কাঠামো ভেঙে যায়, হাজার হাজার যোদ্ধা আত্মগোপন করে, যদিও স্থানীয় গোষ্ঠীগুলি সারা দুনিয়া জুড়ে আইসিস এবং আল বাগদাদির নাম করে বিচ্ছিন্ন জঙ্গি হামলা ঘটাতে থাক। এর মধ্যে দুটি বড় হামলার ঘটনা ঘটে ২০১৫ সালের নভেম্বরে প্যারিসে এবং ২০১৯ সালে শ্রীলঙ্কায়।

আল বাগদাদিকে শেষ কবে দেখা গিয়েছিল?

এ বছরের গ্রীষ্মের শুরুতে আইসিসের প্রচার উইং আল ফুকরান ইন্টারনেটে একটি ভিডিও পোস্ট করে। সাইট ইন্টেলিজেন্স গ্রুপ, যারা আইসিস এবং অন্যান্য জিহাদি গোষ্ঠীর অনলাইন কার্যক্রমের উপর নজরদারি করে, তাদের কথায ২০১৪ সালের জুলাই মাসের পর এই প্রথম ওই ভিডিওয় আল বাগদাদি দৃষ্টিগোচর হয়।

১৮ মিনিটের ওই ভিডিওয় বাগদাদিকে মেঝের উপর পা মুড়ে বালিশে হেলান দিয়ে বসে থাকতে দেকা গিয়েছে, তার ডানদিকে অ্যাসল্ট রাইফেল।

পাঁচ বছর আগে ইরাকের মসুলের মসজিদে যে বাগদাদিকে দেখা গিয়েছিল এ ভিডিওয় তার চেয়ে একটু ভারী দেখায় তাকে, দাড়ির পাকও একটু বেশি। তাতে হেনাও করা হয়েছে এবার।

শ্রীলঙ্কায় ইস্টারের হামলাতে আল বাগদাদি সিরিয়ায় আল বাগুজ ফকানির পরাজয়ের বদলা হিসেবে বর্ণনা করে। মার্চের শেষে আল বাগুজ ফকানির দখল তার হাত থেকে নিয়ে নেওয়া হয়। এই অঞ্চলই ছিল তার নেতৃত্বে চলা শেষ ইসলামিক রাজ্যবিশেষ।

২০১৯ সালে আইসিস ভিডিও প্রকাশ করল কেন?

বেশ কিছু সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য অনুযায়ী, আল বাগদাদি এ কাজ করতে বাধ্য হয়েছিল। ক্রমাগত সামরিক পরাজয়ের মুখে দাঁড়িয়ে আইসিসের অস্তিত্ব ঘোষণা করা, নিজেকে সে সংগঠনের প্রধান হিসেবে জানান দেওয়া এবং ক্রমাগত আক্রমণ চালিয়ে যেতে নিজের যোদ্ধাদের সাবধান করে দেওয়ার জন্যই এ কাজ করেছিল সে।

সাইট ওই ভিডিও-র য়ে অনুবাদ প্রকাশ করেছে, সে অনুসারে, বাগদাদি বলেছিল, "আমাদের আজকের যুদ্ধ গায়ে লেগে থেকে লড়াইয়ের, আমরা শত্রুদের সঙ্গে এ লড়াই চালিয়ে যাব, ওদের জানতেই হবে কয়ামতের দিন পর্যন্ত জিহাদ চলবে।"

বাগদাদির হত্যা আমেরিকার কাছে কী অর্থ বহন করে?

প্রথমত এ মৃ্ত্যু আগে নিশ্চিত করতে হবে। ট্রাম্পের ঘোষণায় এ নিয়ে সমস্ত জল্পনার অবসান ঘটা উচিত।

তবে বাগদাদির মৃত্যু নিয়ে আগেও বেশ কিছু কথা সামনে এসেছে। ২০১৭ সালের জুন মাসে রাশিয়া দাবি করে রাশিয়া দাবি করে সিরিয়ার রাগা এলাকায় বিমানহামলায় সে নিহত হয়েছে, দু সপ্তাহ পর, সিরিয়ান অবজার্ভেটরি অফ হিউম্যান রাইটস আল বাগদাদির মৃত্যুর নিশ্চিত খবর দেয়।

২০১৯ সালের ভিডিও থেকে প্রমাণিত হয়েছে, সে মরেও নি, পঙ্গুও হয়নি।

বাগদাদির শেষ ভিডিওর লোকেশন জানা যায়নি। ২০১৮ সালে সে একটি অডিও বার্তা প্রকাশ করেছিল, তার উৎসস্থলও অজ্ঞাত।

বহু মার্কিন সংস্থা তাকে খুঁজে চলেছে এবং বেশ কিছু বিশ্লেষক মনে করেন, বাগদাদি ইরাক-সিরিয়া সীমান্তের জনবিরল মরুভূমিতে বাস করে, এবং কোনও রকম ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করে না।

নিউ ইয়র্ক টাইমসের হয়ে আইসিস বিষয়ক সংবাদ প্রতিবেদক রুক্মিণী কাল্লিমাচি বারবার মনে করিয়ে দিচ্ছেন "আইসিস টুকরো টুকরো হলেও এবং দেখা না গেলেও তারা একেবারেই মৃত নয়।"

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, "আইসিস শুধু বেঁচে আছে নয়, ২০১১ সালের চেয়ে তারা বহাল তবিয়তে রয়েছে। বিশেষ করে ইরাক থেকে যখন আমেরিকা সেনা প্রত্যাহার করে নিচ্ছে এবং আইসিসের পরাজয় হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে সিআইএ-র ধারণা আইসিসের মাত্র ৭০০ জন যোদ্ধা রয়েছে। এদিকে জেনারেল জোসেফ ভোটেল (মধ্য প্রাচ্যে সামরিক বিষয়ে দেখভালের দায়িত্বপ্রাপ্ত শীর্ষ মার্কিন জেনারেল)-এর মতে তাদের দশ হাজার যোদ্ধা রয়েছে, এবং ইরাক ও সিরিয়ায় তারা অভ্যুত্থান ঘটাতে সমর্থ শুধু নয়, আগের মতই ভয়ংকর সন্ত্রাসবাদী শক্তিই রয়েছে তারা।"

ইরাক ও সিরিয়ার হাজার হাজার যোদ্ধা ছাড়াও আইসিসের হাতে রয়েছে খোরাসান প্রদেশ এবং ফিলিপিন্স ও পশ্চিম আফ্রিকা বেশ কিছু প্রদেশ। এ ছাড়াও আফগানিস্তানে তারা যথেষ্ট "শক্তিশালী এবং বিকাশমান" বলে মনে করছেন রুক্মিণী কাল্লিমাচি।

"এদের আওতায় থাকা বেশ কিছু সংগঠন এবং ইরাক ও সিরিয়ায় আইসিসের কোর গ্রুপের মধ্য যোগাযোগ রয়েছে বলে মনে করার যথেষ্ট প্রমাণও রয়েছে।"

বাগদাদির হয়ত মৃত্যু ঘটেছে, কিন্তু আতঙ্কের মৃত্যু ঘটেছে কিনা সে নিয়ে সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে।

Read the Full Story in English

IS Terrorist
Advertisment