Israel-Hezbollah: গত কয়েক সপ্তাহে ইজরায়েল-হিজবুল্লাহ সংঘাত তীব্র হয়েছে। এই সংঘাত মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। লেবাননে পেজার বিস্ফোরণ, বেইরুটে ইজরায়েলি বিমানহানা, হাসান নাসারাল্লাহর হত্যা, আর, ইরানের এই লড়াইয়ে অংশগ্রহণ মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনাকে তীব্রতর করেছে। মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে, লেবাননে ইজরায়েলি হানায় নাসারুল্লাহ-সহ হিজবুল্লাহর বেশ কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় কমান্ডার প্রাণ হারিয়েছেন। ইজরায়েলের এই সাফল্য তাদের গুপ্তচর বাহিনীর দক্ষতার ফল বলেই অনেকে দাবি করছেন। ।
হামাসের পাশে হিজবুল্লাহ
গত সোমবার, লেবানন প্রায় এক বছরের মধ্য বেইরুট প্রথম ইজরায়েলি বিমান হামলার সাক্ষী হয়েছিল। তবে, গত বছরের ৮ অক্টোবর থেকেই ইজরায়েল-হিজবুল্লাহ সংঘাত ক্রমশ বাড়ছিল। হামাসের বন্দুকধারীরা ইজরায়েলের ওপর এক নজিরবিহীন আক্রমণ করার পরে, গাজা যুদ্ধ শুরু হয়। প্যালেস্তিনীয়দের পাশে দাঁড়িয়ে সেই সময় হিজবুল্লাহ ইজরায়েলের বিরুদ্ধে হামলা চালানো শুরু করে। এইভাবে হামাসের পাশে দাঁড়ানোর কারণ হল- হিজবুল্লাহ এবং হামাস পরস্পরকে একই 'প্রতিরোধের অক্ষ'-র অংশ বলে মনে করে।
গোলান মালভূমিতে হামলা
বিবিসির রিপোর্টে বলা হয়েছে, ওই ঘটনার পর থেকে, হিজবুল্লাহ উত্তর ইজরায়েলের অধিকৃত গোলান মালভূমিতে ৮,০০০-এর বেশি রকেট ছুড়েছে। তারা ইজরায়েলের বাহিনী এবং ট্যাংককে লক্ষ্য করে ড্রোন হামলাও চালিয়েছে। জবাবে ইজরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) লেবাননে হিজবুল্লাহর কার্যালয় লক্ষ্য করে অভিযান শুরু করেছে। এর মধ্যেই ২০২৪-এর ২৭ জুলাই গোলান হাইটে রকেট হামলায় ১২ শিশু ও এক যুবকের মৃত্যু হয়। ইজরায়েল অভিযোগ করে যে ওই হামলার পিছনে ছিল হিজবুল্লাহ।
ইজরায়েলের পেজার হানা
এর জবাবে ইজরায়েল হিজবুল্লাহর কমান্ডারদের নিশানা করে। জুলাইয়ের শেষের দিকে ফুয়াদ শুকুর নিহত হন। বিস্ফোরণে নিহত হন ইরানপন্থী হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়েহ। ১৭ এবং ১৮ সেপ্টেম্বর পেজার এবং হিজবুল্লাহ সদস্যদের দ্বারা ব্যবহৃত ওয়াকিটকি বিস্ফোরণে ৩৯ জন নিহত এবং কয়েক হাজার হিজবুল্লাহ সদস্য আহত হন। ১৭ সেপ্টেম্বর, লেবানন এবং সিরিয়াজুড়ে একযোগে প্রায় কয়েকশো পেজার বিস্ফোরণ ঘটে। এতে দুই শিশু-সহ কমপক্ষে ১২ জন নিহত হয়। আর কয়েক হাজার মানুষ আহত হন। হিজবুল্লাহ এবং লেবানন সরকার এই বিস্ফোরণের জন্য ইজরায়েলকে দায়ী করে। পরের দিন আবার লেবাননের স্বাস্থ্য দফতরের দাবি অনুযায়ী বেইরুট এবং লেবাননের অন্যান্য অংশে বিস্ফোরণ ঘটে। যাতে কমপক্ষে ২৫ জন নিহত এবং ৬০০ জনেরও বেশি আহত হয়।
হিজবুল্লাহর রকেট
ইজরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট এরপর সামরিক বাহিনী এবং নিরাপত্তা সংস্থার প্রশংসা করেন। তবে তিনি সরাসরি বিস্ফোরণের পিছনে সংস্থাগুলোকে কৃতিত্ব দেননি। গ্যালান্ট শুধু এটুকু জানান যে, ইজরায়েল 'যুদ্ধের এক নতুন পর্যায়ে' প্রবেশ করেছে। হাসান নাসরাল্লাহ, সেই সময়ে, গ্রুপের যোগাযোগ ডিভাইসে হামলাকে একটি 'গুরুতর আঘাত' বলে জানান। আর ইজরায়েলকে চরম হুঁশিয়ারি দেন। এরপর ২০ সেপ্টেম্বর বেইরুটের দক্ষিণ শহরতলিতে ইজরায়েলি বিমান হামলায় সিনিয়র কমান্ডার ইব্রাহিম আকিল এবং আহমেদ ওয়াহবি-সহ কমপক্ষে ১৬ জন প্রাণ হারান। হতাহতদের মধ্যে শিশু-সহ সাধারণ নাগরিকরাও ছিলেন বলে অভিযোগ। দুই দিন পর, হিজবুল্লাহ ইজরায়েলের ভিতরে দূরপাল্লার রকেট ছোড়ে। হাজার হাজার ইজরায়েলি বোমা প্রতিরোধকেন্দ্রে আশ্রয় নেন। রকেটগুলো হাইফার কাছে ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত করে।
হিজবুল্লাহ প্রধান হাসান নাসরুল্লাহর মৃত্যু
২৭ সেপ্টেম্বর বেইরুটে ইজরায়েলি বিমান হামলায় হাসান নাসরাল্লাহ নিহত হন। তিনি কয়েক দশক ধরে হিজবুল্লাহর নেতৃত্বে ছিলেন। বেইরুটের দক্ষিণ শহরতলিতে হিজবুল্লাহর সদর দফতরে ওই বিমান হামলা হয়। হিজবুল্লাহ নাসরুল্লাহর মৃত্যু নিশ্চিত করে। আর, 'শত্রুর বিরুদ্ধে এবং প্যালেস্তাইনের সমর্থনে পবিত্র যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার' হুঁশিয়ারি দেয়। পালটা, ইজরায়েলের সামরিক বাহিনী হামলার দায় স্বীকার করে। পাশাপাশি, লেবাননে অভিযান শুরু করে।
আরও পড়ুন- 'ধ্রুপদি ভাষা'র স্বীকৃতি, কেন দেওয়া হল বাংলাকে?
মৃতের সংখ্যা, বাস্তুচ্যুত
লেবাননে ইজরায়েলের বিমান হামলায় কয়েকশো মানুষ ইতিমধ্যে প্রাণ হারিয়েছেন। তার মধ্যে নারী এবং শিশুদের সংখ্যাও অনেক। এমনটাই দাবি লেবানন সরকারের। লক্ষাধিক লোক বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। আনুমানিক ২৫০,০০০ লেবাননবাসী এখন আশ্রয়কেন্দ্রে আছেন।