ISRO glacial lakes in Himalayas: হিমালয় অঞ্চলে হ্রদগুলোর পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করতে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরো, স্যাটেলাইট রিমোট সেন্সিং পদ্ধতি ব্যবহার করেছে। এটাই হিমবাহী হ্রদের ওপর করা সর্বশেষ গবেষণা। এই গবেষণা হিমবাহী হ্রদভাঙা বন্যার (জিএলওএফএস) ঝুঁকি কমানোর কথা মাথায় রেখে করা হয়েছে। গবেষণায় হিমবাহী হ্রদের নীচের দিকের পরিকাঠামো এবং বসতির ওপর হ্রদের প্রভাবের কথাও উঠে এসেছে।
ইসরোর গবেষণা থেকে জানা গিয়েছে
ইসরোর এই গবেষণায়, হিমবাহী পরিবেশের পরিবর্তনকে তুলে ধরা হয়েছে। গবেষণায় গত চার দশক ধরে সংগ্রহ করা স্যাটেলাইট ডেটাগুলোকে রাখা হয়েছে। ভারত, নেপাল, তিব্বত এবং ভুটানজুড়ে বিস্তৃত ভারতীয় হিমালয় দিয়ে বয়ে চলা নদীর অববাহিকাগুলোর পরিস্থিতি এই গবেষণায় উঠে এসেছে। ১৯৮৪ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত এই সমস্ত অববাহিকার ছবি তুলে ধরা হয়েছে। ইসরোর তথ্যে স্পষ্ট, হিমবাহের হ্রদের আকারে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এই সময়কালে ঘটে গিয়েছে। গবেষণা অনুযায়ী, ১০ হেক্টরের বেশি বিস্তৃত ২,৪৩১টি হ্রদ ২০১৬-১৭ সালে চিহ্নিত হয়েছিল। তার মধ্যে ১৯৮৪ সাল থেকে ৬৭৬টি হ্রদ সম্প্রসারিত হয়েছে। যার মধ্যে ৬০১টি হ্রদ দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে। ৬৫টি হ্রদ দেড়গুণ বেড়েছে। ১০টি হ্রদ দেড় থেকে দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ইসরো জানিয়েছে যে ৬৭৬টি হ্রদের মধ্যে ১৩০টি ভারতে অবস্থিত। তার মধ্যে ৬৫টি রয়েছে সিন্ধু অববাহিকায়, ৫৮টি রয়েছে ব্রহ্মপুত্র অববাহিকায়। আর, ৭টি আছে গঙ্গা অববাহিকায়। বিশ্ব উষ্ণায়নের কারণে হিমবাহগুলো দ্রুতহারে গলে যাওয়ায় হ্রদগুলো আয়তনে বেড়েছে।
হিমবাহী হ্রদ কীভাবে গঠিত হয়?
ঘর্ষণের ফলে হিমবাহের ক্ষয় হয়। গলে যাওয়া জল নীচু অংশে জমতে শুরু করে। যা হিমবাহী হ্রদের জন্ম দেয়। ইসরো হিমবাহী হ্রদগুলো কীভাবে গঠিত হয়েছিল, তার ওপর ভিত্তি করে হ্রদগুলোকে চারটি শ্রেণিতে ভাগ করেছে। সেগুলো হল— মোরাইন-বাঁধ, বরফ-বাঁধ, ক্ষয়-ভিত্তিক বাঁধ এবং অন্যান্য। মোরাইন বাঁধের হ্রদ হল সেই সব হ্রদ, যা পাথর এবং মাটির ধ্বংসাবশেষের মাধ্যমে তৈরি হয়। বরফ বাঁধ হল, সেই বাঁধ- যা ক্ষয়িঞ্চু বরফের মাধ্যমে বাঁধ তৈরি করে জল ধরে রাখে। ক্ষয়ভিত্তিক হ্রদ হল সেই হ্রদ, যা ভূমিক্ষয়ের ফলে তৈরি হয়। হিমবাহী হ্রদগুলোর জল এমনিতে মিষ্টি হলেও, তা অতিরিক্ত মাত্রায় সঞ্চিত হয়ে হ্রদ ভেঙে ফেলে। যার ফলে হ্রদ ভেঙে বন্যার সৃষ্টি হয়। এমনটাই জানিয়েছে ইসরো।
হ্রদ নিরীক্ষণে স্যাটেলাইট রিমোট সেন্সিং পদ্ধতি
হিমালয়ের ভূ-প্রকৃতির জন্যই হ্রদগুলোর পুঙ্খানুপুঙ্খ নিরীক্ষণ করা কঠিন হয়ে ওঠে। এই পরিস্থিতিতে স্যাটেলাইট রিমোট সেন্সিং পদ্ধতিকে কাজে লাগিয়ে হ্রদগুলোর নিরীক্ষণ করা হচ্ছে। যা বেশ কাজে দিচ্ছে বলেই দাবি ইসরোর। এই ব্যাপারে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা জানিয়েছে, 'স্যাটেলাইট চিত্রে ধরা পড়া দীর্ঘমেয়াদী পরিবর্তনগুলো বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। এই পরিবর্তনগুলো হিমবাহী হ্রদের পরিস্থিতি সম্পর্কে বহু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আমাদের সামনে তুলে ধরেছে। হিমবাহের পরিবেশগত প্রভাব সম্পর্কে আমাদের অন্তর্দৃষ্টি দিয়েছে। যা হিমবাহী পরিবেশে জলবায়ু পরিবর্তনের জেরে হ্রদভাঙা রুখতে এক অনন্য কৌশল তৈরিতে অপরিহার্য ভূমিকা গ্রহণের ক্ষেত্রে সহায়ক।' ভুবনেশ্বরের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির সহকারি অধ্যাপক হিমবিজ্ঞানী আশিম সাত্তার বলেছেন, 'অধিকাংশ হিমবাহী হ্রদের কাছে যাওয়ার রাস্তাগুলো মোটরযান চলাচলের যোগ্য নয়। এই পরিস্থিতিতে অত্যন্ত উন্নত রিমোট সেন্সিং টুলস, আমাদেরকে হিমবাহী হ্রদের বৃদ্ধি পর্যবেক্ষণ করতে এবং তাদের পরিস্থিতি বুঝতে সাহায্য করতে পারে।'
আরও পড়ুন- শুধু গাছ কাটাই নয়, দাবানলের জন্যও ভারসাম্য হারাচ্ছে প্রকৃতি! ভারতের পরিস্থিতিটা কেমন?
হিমবাহের হ্রদ দ্বারা সৃষ্ট ঝুঁকি কীভাবে কমানো যায়?
২০২৩ সালে, জিওফিজিক্যাল রিসার্চ জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণায় জানা গিয়েছে, হিমাচল প্রদেশের ৪,০৬৮ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত- লাহৌল উপত্যকার সিসু পর্যন্ত বিস্তৃত ঘেপান গাথ হ্রদের জলস্তর কমানো হয়েছে। যা আপাতত মডেল করেছে প্রশাসন। এই পদ্ধতিতে ঝুঁকি পুরোপুরি কমানো সম্ভব না হলেও ১০ থেকে ৩০ মিটার পর্যন্ত জলস্তর কমানো হয়েছে। লম্বা পলিথিন পাইপ ব্যবহার করে, ২০১৬ সালে একইভাবে সিকিম স্টেট ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অথরিটি এবং সিকিমের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ও জলবায়ু পরিবর্তন বিভাগের সদস্যরা, সিকিমের দক্ষিণ লোনাক হ্রদের জলস্তর কমিয়েছিলেন।