ক্রিস্টোফার নোলানের বহুল প্রত্যাশিত চলচ্চিত্র ওপেনহাইমার ২১ জুলাই মুক্তি পাবে। ছবিটি মার্কিন তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানী জে রবার্ট ওপেনহাইমারের জীবন এবং ব্যক্তিত্বকে মাথায় রেখে তৈরি করা হয়েছে। জে রবার্ট ওপেনহাইমার গোটা বিশ্বে পরমাণু বোমার জনক হিসেবে পরিচিত। নিউ মেক্সিকোতে লস আলামোস ল্যাবরেটরির ডিরেক্টর হিসেবে ওপেনহেইমার বহুচর্চিত 'ম্যানহাটন প্রজেক্ট'-এর নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। এই প্রজেক্টে সেই পরমাণু পদার্থ বিজ্ঞানীরা কাজ করছিলেন, যাঁদের বিংশ শতকের যুদ্ধের কথা মাথায় রেখেই কাজে লাগানো হয়েছিল।
অস্ত্র প্রতিযোগিতার বিরুদ্ধে সোচ্চার
যাইহোক, পরমাণু অস্ত্রের বিধ্বংসী সম্ভাবনাকে স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করার পর, ওপেনহেইমার পরমাণু অস্ত্রের বিস্তারের বিরুদ্ধে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পূর্ববর্তী সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে ক্রমবর্ধমান পারমাণু অস্ত্র প্রতিযোগিতার বিরুদ্ধে সবচেয়ে শক্তিশালী কণ্ঠস্বর হয়ে ওঠেন। কীভাবে তথাকথিত 'পরমাণু বোমার জনক' পরমাণু বোমা সম্প্রসারণের বিরুদ্ধে সবচেয়ে সোচ্চার হয়ে উঠলেন, এটা হল সেই কাহিনি।
পরমাণু যুগের ভোর
১৯৪৫ সালের ১৬ জুলাই ইতিহাস একটি নাটকীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ মোড় নেয়। সেই সময় পরমাণু বোমা লস আলামোসের প্রায় ৩৪০ কিলোমিটার দক্ষিণে পরীক্ষা করা হয়েছিল। এটি 'ট্রিনিটি টেস্ট' নামে পরিচিত। এটি ছিল বিজ্ঞানী ওপেনহাইমারের নেতৃত্বাধীন গোষ্ঠীর বছরের পর বছর কাজের চূড়ান্ত পরিণতি।
হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে বোমা
এক মাসেরও কম সময় পরে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জাপানের হিরোশিমা শহরে দুটি পরমাণু বোমা ফেলে। তার মধ্যে ৬ আগস্ট ফেলে হিরোশিমায়। আর, ৯ আগস্ট ফেলে নাগাসাকিতে। বোমাগুলি ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের সৃষ্টি করে। দুটি শহরের সমস্ত ঘরবাড়িকে প্রায় সমতলে পরিণত করে ফেলে। ২ লক্ষেরও বেশি লোককে হত্যা করে, যাঁদের বেশিরভাগই অসামরিক নাগরিক। পরমাণু বোমা বিকিরণের জেরে দূরের অঞ্চলেরও যাঁরা কয়েক সপ্তাহ বা কয়েক মাস ধরে ভুগছিলেন, তাঁরা ১৯৪৫ সালের শেষের দিকে মারা যান।
বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তি
বোমা বিস্ফোরণে বিশ্বের পূর্বপ্রান্তে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তি ঘটায়। সম্রাট হিরোহিতো ১৫ আগস্ট জাপানের আত্মসমর্পণের কথা ঘোষণা করেন। ৮ মে জার্মানি, ১০ এবং ১১মে পূর্ব ইউরোপীয় যুদ্ধক্ষেত্রে নাৎসি সেনাবাহিনী আত্মসমর্পণ করে। বিশ্বে এখনও পর্যন্ত হিরোশিমা এবং নাগাসাকিতেই একমাত্র পরমাণু বোমা হামলা হয়েছিল। কিন্তু, সেই হামলা বিশ্বে একটি পারমাণু অস্ত্র প্রতিযোগিতার জন্ম দেয়। যা বৈশ্বিক ভূ-রাজনীতিকে চিরতরে বদলে দিয়েছে।
সোভিয়েতের পরীক্ষা
সোভিয়েত রাশিয়া তাদের প্রথম পারমাণু বোমা পরীক্ষা করেছিল ১৯৪৯ সালে। ব্রিটিশরা করেছিল ১৯৫২ সালে। ফরাসিরা পরমাণু বোমা পরীক্ষা করেছিল ১৯৬০ সালে। চিন পরীক্ষা করেছিল ১৯৬৪ সালে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে, বোমাগুলো আরও বড় এবং আরও বিধ্বংসী হয়ে ওঠে। যা সম্ভাব্য পরমাণু সংঘাতের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দিয়েছে। ব্যাপক ক্ষতির সম্ভাবনা তৈরি করেছে।
আরও পড়ুন- চরম অর্থকষ্টে ‘লাইফলাইন’ পেল পাকিস্তান, চুক্তির শর্ত আদৌ বজায় রাখতে পারবেন শরিফ?
ওপেনহাইমার এবং ভগবদ্গীতা
তিনি পরমাণু বোমার জনক। তার পরও রবার্ট ওপেনহাইমার সর্বদা 'মানবতাকে' সর্বাগ্রে স্থান দিয়েছেন। ট্রিনিটি টেস্ট দেখার পর মানবতার প্রতি তাঁর আবেগ বহুগুণ প্রসারিত হয়েছিল। আরও অনেকের মত, তিনি ভগবদ্গীতার দর্শনে তাঁর কর্মের অর্থ অনুসন্ধান করেছিলেন। ১৯৬৫ সালে, পরমাণু বোমার প্রথম বিস্ফোরণের ব্যাপারে কথা বলতে গিয়ে ওপেনহাইমার গীতা উদ্ধৃত করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, 'বিষ্ণু (কৃষ্ণ) রাজপুত্রকে (অর্জুন) বোঝানোর চেষ্টা করছেন যে তাঁর কর্তব্য পালন করা উচিত। এবং তাঁকে (অর্জুনকে) প্রভাবিত করার জন্য তিনি (কৃষ্ণ) তাঁর বহু-অস্ত্রধারী রূপ ধারণ করেন এবং বলেন, এখন, আমি মৃত্যু, বিশ্ব ধ্বংসকারী রূপ নিয়েছি।'