Advertisment

Explained: যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ার মৃত্যু: র‍্যাগিংয়ের ব্যাপারে আইন কী বলছে?

কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Jadavpur University

ইউজিসি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে র‍্যাগিং প্রতিরোধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে চায়। যার মধ্যে রয়েছে র‌্যাগিং প্রতিরোধে পড়ুয়াকে প্রকাশ্যে তাঁর অভিপ্রায় ঘোষণা করতে হবে। শিক্ষার্থীদের একটি অঙ্গীকারে স্বাক্ষর করতে হবে যে তারা র‌্যাগিংয়ে জড়িত থাকবে না। (ফাইল ছবি)

গত সপ্তাহে কলকাতার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে হস্টেলের দ্বিতীয় তলা থেকে পড়ে একজন ১৮ বছর বয়সি স্নাতক ছাত্র মারা গিয়েছে। বাংলা অনার্স প্রথম বর্ষের ওই ছাত্রের পরিবারের অভিযোগ, তাঁকে ক্যাম্পাসে র‍্যাগিং করা হয়েছিল, সেই কারণেই মৃত্যু হয়েছে। নিহত ছাত্রের কাকা গণমাধ্যমে বলেছেন, 'বুধবার সন্ধ্যায় সে তাঁর মায়ের সঙ্গে কথা বলেছিল। জানিয়েছিল যে সে ভালো বোধ করছে না। মাকে বলেছিল যে সে খুব ভয় পেয়েছে। তার মা তাঁকে কী হয়েছে জিজ্ঞাসা করলে, ছেলেটি তাঁকে তাড়াতাড়ি আসতে বলেছিল। বলেছিল যে মাকে তাঁর অনেক কিছু বলার আছে। হস্টেলে তাঁকে নিজস্ব ঘর বরাদ্দ করা হয়নি। সে এক বন্ধুর ঘরে আছে।' বিশ্ববিদ্যালয় এবং পুলিশ উভয়ই বর্তমানে তাদের নিজস্ব অবস্থান থেকে তদন্ত পরিচালনা করছে। মামলায় এপর্যন্ত জেইউয়ের শিক্ষার্থী ও প্রাক্তনী-সহ অন্ততপক্ষে ১২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ক্রমশ বাড়ছে ধৃতের সংখ্যা। এবার দেখা যাক, কীভাবে র‍্যাগিং বিরোধী আইন কাজ করে। ২০০১ সালে সুপ্রিম কোর্ট বলেছিল য়ে র‍্যাগিং হল, 'দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছড়িয়ে পড়া এক হুমকি'। ঘটনায় বিশ্ব জাগৃতি মিশন কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেছে।

Advertisment

আদালতের র‍্যাগিং বিরোধিতা

আদালত বলেছে, 'বিস্তৃতভাবে বলতে গেলে র‍্যাগিংকে এভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয় যে, কথা বলা বা লিখিত কোনও উচ্ছৃঙ্খল আচরণ, অথবা এমন কোনও কাজ যা অন্য কোনও শিক্ষার্থীকে উত্যক্ত করে, আচরণ বা অভদ্রতার মাধ্যমে প্রভাব রাখা, উচ্ছৃঙ্খল বা শৃঙ্খলাহীন কার্যকলাপে লিপ্ত থাকা, বিরক্তি, কষ্ট বা মানসিক ক্ষতির কারণ হওয়া। একজন নবীন বা জুনিয়র ছাত্রের মধ্যে ভয় বা শঙ্কা জাগিয়ে তোলা, অথবা ছাত্রদের এমন কোনও কাজ করতে বা এমন কিছু করতে বলা যা এই ধরনের ছাত্র সাধারণত করে না। যা লজ্জা বা বিব্রতবোধের কারণ হতে পারে। এমন কিছু, যা একজন নবীন বা জুনিয়র ছাত্রের শরীর বা মানসিকতার ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। র‍্যাগিংয়ে লিপ্ত হওয়ার কারণ হল, দুঃখ দিয়ে আনন্দ লাভ করা বা সিনিয়রদের দ্বারা তাদের জুনিয়র বা ফ্রেশারদের উপর ক্ষমতা, কর্তৃত্ব এবং শ্রেষ্ঠত্ব প্রদর্শন।' আদালত অ্যান্টি-র‍্যাগিং-এর বিষয়ে মূল নির্দেশিকাও জারি করেছে। যার মধ্যে রয়েছে, র‍্যাগিং প্রতিরোধে প্রক্টোরাল কমিটি গঠন করা এবং র‌্যাগিংয়ের বিরুদ্ধে অভ্যন্তরীণভাবে অভিযোগের সমাধান। আদালত বলেছে, 'র‍্যাগিং যদি নিয়ন্ত্রণের অযোগ্য হয়ে যায় বা একটি বিবেচনাযোগ্য অপরাধ হয়ে ওঠে, তবে তা পুলিশকে জানানো যেতে পারে।' ২০০৯ সালে সুপ্রিম কোর্ট আরেকটি মামলায় আবার র‍্যাগিং ইস্যু নিয়ে কাজ করেছিল, যেখানে এটি প্রাক্তন সিবিআই ডিরেক্টর আরকে রাঘবনের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করেছিল। কমিটির সুপারিশগুলো পরবর্তীকালে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) সংস্কার করেছিল।

ইউজিসির নির্দেশিকা

২০০৯ সালে ইউজিসি অ্যান্টি-র‍্যাগিংয়ের ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য বিশদ নির্দেশিকা জারি করেছিল। নির্দেশিকাগুলোতে র‌্যাগিং কী হতে পারে তার ব্যাখ্যা আছে। যেখানে বলা হয়েছে, 'উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে র‍্যাগিংয়ের বিপদ রোধে বিধান রয়েছে: যেখানে র‍্যাগিংয়ের অর্থ হল উত্যক্ত করা, সহকর্মী শিক্ষার্থীর সঙ্গে অভদ্র আচরণ করা, শারীরিক বা মানসিক ক্ষতি করা, লজ্জার অনুভূতি সৃষ্টি করা, অন্য কোনও ছাত্র বা নবীনদের শিক্ষামূলক কার্যকলাপ, একজন ব্যক্তি বা ছাত্রদের গোষ্ঠীকে অর্পিত একাডেমিক কাজগুলো সম্পূর্ণ করার বদলে একজন নবীন বা অন্য কোনও ছাত্রকে শোষণ করা, আর্থিক চাঁদাবাজি বা জোর করে ব্যয়, সমকামী হামলা, ছিনতাই, জোর করে অশ্লীল কাজ, অঙ্গভঙ্গি, শারীরিক ক্ষতি করা।' ইউজিসি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা বিশ্ববিদ্যালয়ে র‍্যাগিং প্রতিরোধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে চায়। যার অন্যতম হল, র‍্যাগিং প্রতিরোধে পড়ুয়ার অভিপ্রায় প্রকাশ্যে ঘোষণা করা। শিক্ষার্থীদের একটি অঙ্গীকারে স্বাক্ষর করতে বলা যে তারা র‍্যাগিংয়ে জড়িত হবে না। অভিযোগ পেলে প্রতিষ্ঠানটি উপযুক্ত কমিটি গঠন করবে- যার মধ্যে কোর্স-ইনচার্জ, ছাত্র উপদেষ্টা, ওয়ার্ডেন, কিছু সিনিয়র ছাত্র সদস্য হিসেবে থাকবে। তাঁরা সক্রিয়ভাবে বিষয়টি নিরীক্ষণ, প্রচার এবং নিয়ন্ত্রণ করবেন। জুনিয়র ছাত্র এবং সিনিয়র ছাত্রদের মধ্যে সুস্থ মেলামেশার পরিবেশ গড়ে তোলার কাজ করবেন। নিয়ম অনুযায়ী, অ্যান্টি-র‍্যাগিং কমিটি দোষী সাব্যস্ত করলে, ইউজিসির নির্দেশিকা অনুযায়ী কমিটির যে কোনও সদস্যকে এফআইআর দায়ের করতে হবে, এই ধরনের তথ্য বা সুপারিশ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে। আর, অবশ্যই সেই এফআইআর হবে উপযুক্ত শাস্তিমূলক বিধানের অধীনে।

আরও পড়ুন- হিমাচলের সাম্প্রতিকতম ধস কি বড় বিপর্যয়ের ইঙ্গিত, কী বলছে ইতিহাস?

আরও পড়ুন- যাদবপুরে ছাত্র মৃত্যু: জোর চর্চায় ডান-বাম সংগঠনগুলির ‘দখলদারির রাজনীতি’

অপরাধ

যদি র‍্যাগিং একটি নির্দিষ্ট অপরাধ নয়, ভারতীয় দণ্ডবিধির কয়েকটি বিধানের অধীনে তা শাস্তিযোগ্য হতে পারে। উদাহরণ স্বরূপ, অন্যায়ভাবে বাধাদান ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৩৯ ধারায় শাস্তিযোগ্য, যাতে সাধারণত কারাদণ্ড হয়। সেই কারাদণ্ড একমাস পর্যন্ত বাড়তে পারে। অথবা, ৫০০ টাকা জরিমানা হতে পারে। অথবা উভয়ই হতে পারে। অন্যায়ভাবে বাধাদান এই কারণে অপরাধ, কারণ কোনও ব্যক্তি যে দিকে অগ্রসর হতে চান, তাঁর সেই দিকে এগিয়ে যাওয়ার অধিকার রয়েছে। ধারা ৩৪০ জোর করে বন্দিত্বকে অপরাধী ঘোষণা করেছে। এই জোর করে বন্দিত্ব হল, অন্যায়ভাবে কোনও ব্যক্তিকে আটকে রাখা যাতে সে নির্দিষ্ট সীমার বাইরে যেতে না-পারে। এটি একটি কারাদণ্ডের সঙ্গেই শাস্তিযোগ্য অপরাধ। যে কারাদণ্ডের সর্বোচ্চ সীমা একবছর পর্যন্ত বাড়ানো যেতে পারে বা এক হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে, অথবা উভয়ই হতে পারে। বেশ কয়েকটি রাজ্যে র‍্যাগিং-রোখার বিশেষ আইন আছে। কেরল প্রহিবিশন অফ র‍্যাগিং অ্যাক্ট, ১৯৯৮ অনুযায়ী র‍্যাগিংয়ের জন্য অভিযুক্ত ছাত্রকে বরখাস্ত করা যেতে পারে। কলেজ প্রশাসন এসব ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলকভাবে নিকটস্থ পুলিশ স্টেশনে অভিযোগ জানাতে বাধ্য। যদি কোনও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তা করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হবে।

Death Ragging university
Advertisment