Advertisment

বিশ্লেষণ: আলাদা হয়ে গেল জম্মু-কাশ্মীর ও লাদাখ- এর পর কী?

লেফটেন্যান্ট গভর্নররা শপথ নিলেও, পুলিশের মাথারা দায়িত্ব পালনে নেমে পড়লেও দুই কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের পুনর্গঠনের কাজ কিন্তু অনেকটাই বাকি।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

জম্মু-কাশ্মীর এবং লাদাখ, ৩১ অক্টোবর বৃহস্পতিবার থেকে দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে বিভক্ত হয়ে যাচ্ছে। ৫ অগাস্ট সংসদে এ সম্পর্কিত সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করা হয়। ৩১ অক্টোবর সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের জন্মদিনও বটে। এই দিন থেকেই আমলাতান্ত্রিক ভাবে দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল কাজ শুরু করে। গত ৫ অগাস্ট থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত জম্মু কাশ্মীর পুনর্গঠন আইন কার্যকর করার জন্য রাজ্য প্রশাসন এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক একটি ন্যূনতম আমলাতান্ত্রিক কাঠামো বজায় রেখে চলছিল।

Advertisment

৩১ অক্টোবর কী ঘটল?

ঘটনার দিক থেকে দেখলে এদিনই জম্মু কাশ্মীর হাইকোর্টে শপথগ্রহণ দুই লেফটেন্যান্ট গভর্নরের। গত সপ্তাহে সরকার গুজরাট ক্যাডারের আইএএস অফিসার গিরিশচন্দ্র মুর্মকে জম্মু কাশ্মীরের লেফটেন্যান্ট গভর্নর এবং ট্রিপুরার ক্যাজারের অবসরপ্রাপ্ত আমলা রাধাকৃষ্ণ মাথুরকে লাদাখের লেফটেন্যান্ট গভর্নর নিযোগ করেন।

আরও পড়ুন, বিশ্লেষণ: কুয়োয় পড়ে গেলে উদ্ধারকাজ কী ভাবে হয়, এ ধরনের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয় কেন?

দুই কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলেই নিজস্ব মুখ্যসচিব এবং অন্য শীর্ষ আমলারা থাকবেন, থাকবেন পুলিশ প্রধান ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ আধিকারিকরা। দিলবাগ সিং জম্মু কাশ্মীরের ডিজি হিসেবে কাজ চালিয়ে যাবেন, লাদাখে একজন আইজি পর্যায়ের আধিকারিককে নিয়োগ করা হবে। দুই বাহিনীই জম্মুকাশ্মীর ক্যাডারের অংশ হিসেবে কাজ করবে, যা পরবর্তীতে কেন্দ্র শাসিত ক্যাডারের সঙ্গে মিলিয়ে দেওয়া হবে।



দ্বিভাজন পুরোপুরি সম্পন্ন হওয়ার জন্য পুনর্গঠন আইন একবছর সময় দিয়েছে। রাজ্যের পুনর্গঠনে বেশ কয়েক বছর সময়ও লাগতে পারে। অন্ধ্রপ্রদেশ ও তেলেঙ্গানার কথাই ধরা যেতে পারে। এ দুই রাজ্য বিভক্ত হয়েছিল ২০১৩ সালে, তারা এখনও সমস্যা সমাধানের জন্য কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের দ্বারস্থ হয়।

অবিভক্ত রাজ্যে যেসব আধিকারিকরা পোস্টেড ছিলেন তাঁদের কী হবে?

দুই কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলেই বিভিন্ন পদ বিতরণ হয়ে গিয়েছে। আমলাতান্ত্রিক কাঠামো তৈরি হলেও, রাজ্য প্রশাসনের কর্মীদের ভাগাভাগির কাজ এখনও সম্পন্ন হয়নি। সরকার সমস্ত কর্মীদের বলেছে, দুই কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মধ্যে তাঁদের পছন্দের পোস্টিংয়ের এলাকা জানিয়ে আবেদন করতে। সে প্রক্রিয়া এখনও চলছে। রাজ্য প্রশাসনের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, "আমরা দুই কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে যার যেখানে পছন্দ সেখানে পোস্টিং দিতে চাই। যাঁরা লাদাখের মানুষ তাঁরে সেখানে যেতে চাইবেন, যাঁরা কাশ্মীর ও জম্মু অঞ্চলের মানুষ, তাঁরা সেখানে থাকতে চাইবেন। একমাত্র সমস্যা হল সমস্ত পদ পূরণ করার জন্য তত বেশি লাদাখি নেই। ফলে জম্মু কাশ্মীরের কিছু মানুষকে সেখানে যেতে হবে। সে সব নিয়ে কাজ চলছে। এর জন্য কিছুটা সময় লাগবে।"

জম্মু কাশ্মীরে যেসব আইন লাগু ছিল সেগুলির কী হবে?

আইনি পুনর্গঠনের কাজ চলছে, তার অনেকটাই বাকি। রাজ্যের ১৫৩টি আইন বাতিল হয়েছে, ১৬৬টি আইন লাগু রয়েছে। যে সব আইন জম্মুকাশ্মীর ছাড়া সারা দেশে লাগু সেগুলি বাতিল করার কাজ চলছে।

আরও পড়ুন, পরবর্তী প্রধান বিচারপতি এস এ বোবদে: কে তিনি?

পুনর্গঠন আইনে উল্লিখিত সমস্ত কিছুই কার্যকর করে ফেলেছে রাজ্য প্রশাসন। কিন্তু ১০৮টি কেন্দ্রীয় যে আইন এখন দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে লাগু হবে তার কাজ বাকি।

publive-image

যেমন এতদিন জম্মুকাশ্মীরের নিজস্ব ফৌজদারি কার্যবিধি ছিল। এখন তার জায়গায় কেন্দ্রীয় ফৌজদারি কার্যবিধি লাগু হবে। কাশ্মীরের ফৌজদারি কার্যবিধি কেন্দ্রীয় ফৌজদারি কার্যবিধির চেয়ে অনেকটাই আলাদা। এক আধিকারিকের কথায়, "রাজ্যের পক্ষে উপযুক্ত কোনও পরিমার্জন প্রয়োজন কিনা তা দেখতে হবে। কিন্তু সেসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে দিল্লি থেকে।"

রাজ্য প্রশাসনের এক আধিকারিকের কথায়, "একইভাবে শিশু ও নারীর সুরক্ষার জন্য রাজ্যভিত্তিক কিছু আইন ছিল, যার জায়গা নেবে কেন্দ্রের পকসো আইন। জুভেনাইল জাস্টিস অ্যাক্টের ক্ষেত্রেও তাই। আবার রাজ্যের সংরক্ষণ আইন জারি রাখতে হবে। অর্থনৈতিক ভাবে অনগ্রসরদের জন্য সংরক্ষণের বিষয়টি ইতিমধ্যেই অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এবার কেন্দ্র আরও কিছু আইন ঢোকাতে পারে।"

কোন আইনে রাজ্যভিত্তিক বিষয় প্রবর্তনের প্রয়োজন রয়েছে?

কেন্দ্রের জুভেনাইল জাস্টিস অ্যাক্ট এবং রাজ্যের এ সম্পর্কিত আইনের মধ্যে বয়সের ফারাক রয়েছে। কেন্দ্রীয় আইনে বয়সের ঊর্ধ্বসীমা ১৬ বছর, রাজ্যে ১৮ বছর। কাশ্মীরের বিশেষ পরিস্থিতিতে যেখানে কিশোররা প্রায়শই হিংসাত্মক বিক্ষোভে শামিল হয়, সেখানে কেন্দ্রীয় আইন অনেকের ভবিষ্যৎ নষ্ট করে দিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন, কীভাবে মারা হল আই এস নেতা আল বাগদাদিকে?

রাজ্যের সংরক্ষণ আইনে জাতিভিত্তিক কোনও সংরক্ষণ নেই। রাজ্যে এলাকাভিত্তিক সংরক্ষণ লাগু রয়েছে, যেখানে নিয়ন্ত্রণরেখা ও আন্তর্জাতিক সীমানা অঞ্চলে বসবাসকারীদের সংরক্ষণ দেওয়া হয়। রাজ্যে ৮ শতাংশ তফশিলি জাতি ও ১০ শতাংশ তফশিলি উপজাতিভুক্ত মানুষ রয়েছেন, অন্যদিকে লাদাখে কোনও তফশিলি জাতির মানুষ নেই, কিন্তু উপজাতিভুক্ত মানুষের সংখ্যা সেখানে প্রচুর।

ওই আধিকারিকের কথায়, "এ ছাড়া জমি সংক্রান্ত আইনগুলিকেও দেখতে হবে। ব্যবসা সম্পর্কিত আইনও দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের জন্য সাজাতে হবে। এ ছাড়া চাকরি সংক্রান্ত বিষয়ও রয়েছে, যেহেতু এখানে এখন যে কেউ নতুন চাকরির জন্য আবেদন জানাতে পারেন।"

সূত্র জানাচ্ছে, সমস্ত কেন্দ্রীয় আইন লাদাখেও লাগু হবে।

জম্মু কাশ্মীর বিধানসভার আসন সংখ্যা ১১৪তে বাড়ানোর বিষয়েও আইন প্রণয়নের ব্যাপারে রয়েছে। যেহেতু ওই আইনে ডিলিমিটেশনের ব্যাপার রয়েছে, সে প্রক্রিয়া এখনও শুরু হয়নি, তাতে আরও সময় লাগবে।

সম্পত্তি ভাগাভাগি হবে কীভাবে?

গত ৯ সেপ্টেম্বর সরকার প্রাক্তন প্রতিরক্ষা সচিব সঞ্জয় মিত্রের পৌরোহিত্যে এক তিন সদস্যের কমিটি তৈরি করে, যে কমিটির দায়িত্ব ছিল সমস্ত দায় ও সম্পদ দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মধ্যে ভাগাভাগি করে দেওয়ার। সে রিপোর্ট এখনও জমা পড়েনি।

আরও পড়ুন, বিশ্লেষণ: সারা দুনিয়ায় ধনী শহরগুলোতে বিদ্রোহ ঘনিয়ে উঠছে কেন?

রাজ্যভিত্তিক পুনর্গঠনের লক্ষ্যে কর্মিবর্গ, অর্থ ও প্রশাসনিক বিষয়ে আরও তিনটি কমিটি তৈরি করা হয়েছে। এই কমিটির কাজ শেষ হয়ে গিয়েছে বলে জানা গেলেও সে সম্পর্কিত প্রস্তাব এখনও প্রকাশ্যে আসেনি।

আর্থিক পুনর্গঠনের ক্ষেত্রে সম্পত্তি ভাগাভাগির কাজটি আরও জটিল। এক আধিকারিক বলেন, "সিদ্ধান্ত যেহেতু অগাস্ট মাসে গৃহীত হয়েছিল, প্রশাসন তখন ছিল বছরের মধ্যিখানে। সে পরিস্থিতিতে আর্থিক পুনর্গঠনের কাজ খুবই বড় মাপের আমলাতান্ত্রিক বিষয়।"

কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির মোট বাজেটের পরিমাণ ৭.৫০০ কোটি টাকা। এদিকে জম্মু ও কাশ্মীরের বাজেট ৯০ হাজার কোটি টাকারবেশি। এর ফলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাশ্মীর ডিভিশন চালিয়ে যাওয়া হতে পারে বলে মনে করছে সূত্র।

পড়তে ভুলবেন না, গুরুদাস দাশগুপ্ত: সংসদে নিপীড়িত মানুষের জোরালো কণ্ঠস্বর

Read the Full Story in English

jammu and kashmir Ladakh
Advertisment