শনিবার জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদার ভারত সফরের প্রথম দিন। ক্ষমতায় আসার পর এই প্রথম তিনি ভারতে এলেন। রবিবার সকালে ফিরে যাবেন। দু'দিনের সফরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে কিশিদার বৈঠকই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি।
এই প্রসঙ্গে কিশিদা লিখেছেন, 'আজ আমি ভারত সফর করছি। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর দ্বিপাক্ষিক সফরে এটাই আমার প্রথম ভারতে আসা। স্বাধীনতা, গণতন্ত্র, মানবাধিকার, আইনের শাসনের মতো বিশ্বজনীন মূল্যবোধের দ্বারা সংযুক্ত হওয়ায় এবং তার পারস্পরিক আদান প্রদানের মাধ্যমে ভারত ও জাপান বিশেষ কৌশলগত ক্ষেত্রে এবং আন্তর্জাতিকস্তরে অংশীদার, কৌশলগত স্বার্থেরও ভাগীদার। ভারত-জাপানের কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনাবর্ষের ৭০তম বার্ষিকী উপলক্ষে আমি এই সফরের দিকে তাকিয়ে ছিলাম প্রথমত, সাড়ে চার বছরের মেয়াদে ক্ষমতায় আসা জাপানের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এবং ভারতের অসামান্য গতিময়তা অনুধাবনের জন্য।'
কোন পাঁচ কারণে কিশিদার ভারত সফর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ:
১) প্রধানমন্ত্রী পদে নতুন হলেও কিশিদা একজন অভিজ্ঞ নেতা
কিশিদা হিরোশিমার নাগরিক। ২০২১-এর ৪ অক্টোবর জাপানের প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। হিরোশিমার জনপ্রতিনিধিও। আগে জাপানের বিদেশমন্ত্রী ছিলেন। বিদেশমন্ত্রী হিসেবে ভারত সফর করেছেন। চারবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বৈঠকও করেছেন। পাশাপাশি, লিবারাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির পলিসি রিসার্চ কাউন্সিলের চেয়ারম্যান হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকও করেছেন।
২) সফরের প্রেক্ষাপট
চলতি বছরে কোনও দেশের রাষ্ট্রনেতা হিসেবে কিশিদাই প্রথম ব্যক্তি, যিনি ভারত সফরে এলেন। সাড়ে তিন বছর পর এই প্রথম জাপান এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক হচ্ছে। এমন বৈঠক শেষবার হয়েছিল ২০১৮ সালে জাপানে। ১৯৫২ সালের ২৮ এপ্রিল ভারত-জাপান দ্বিপাক্ষিক কূটনৈতিক সম্পর্কের সূচনা হয়েছিল। এবার তার ৭০ বছর।
৩) ২০২১ সালের অক্টোবরে কিশিদা জাপানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর তাঁর সঙ্গে ফোনে বৈঠক করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। উভয়পক্ষই চায় বিশেষ কৌশলগত এবং আন্তর্জাতিক অংশীদারিত্বকে আরও শক্তিশালী করতে। ভৌগোলিক-রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক অবস্থাকে আরও বিকশিত করতে। পাশাপাশি, উভয় দেশই অংশীদারিত্ব আরও গভীর করতে চায়।
৪) যেসব কৌশলগত কারণে কিশিদার সফর গুরুত্বপূর্ণ
ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে মুক্ত এবং অবাধ গতিবিধি এবং বাণিজ্যের জন্য এই বৈঠক জরুরি। আঞ্চলিক এবং প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে নিরাপত্তার জন্য জরুরি এই বৈঠক। ভারত এবং জাপান ইতিমধ্যেই সরবরাহ এবং পরিষেবা ক্ষেত্রে পরস্পরের সঙ্গে চুক্তি করেছে। এই চুক্তিকে আরও ফলপ্রসূ করতে জরুরি দুই রাষ্ট্রনেতার বৈঠক। কারণ, শেষবার দুই দেশের মন্ত্রীস্তরে বৈঠক হয়েছিল ২০১৯ সালে। তারপর করোনার কারণে বৈঠক বন্ধ ছিল।
৫) উত্তর-পূর্ব ভারতে যোগাযোগ, বন ব্যবস্থাপনা, বিপর্যয় মোকাবিলার জন্য জাপানের সাহায্য করার কথা। মেঘালয়, ত্রিপুরা এবং মিজোরামে বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য জাপানের বিনিয়োগ দরকার। ২০২১ সালের ২৭ এপ্রিল ভারত, জাপান ও অস্ট্রেলিয়া পরস্পরের সঙ্গে চুক্তি করেছিল। লক্ষ্য ছিল জোগান, বিনিয়োগ-সহ নানা ক্ষেত্রে নির্ভরশীলতা বৃদ্ধি করা। সেই চুক্তিকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওযার জন্য ভারত-জাপানের মধ্যে আরও বৈঠক জরুরি।
Read story in English