Advertisment

premium: পাক সেনায় যোগ দিতে বলেন জিন্না, কী জবাব দিয়েছিলেন স্যাম বাহাদুর?

অফিসারদের কাছে পাকিস্তানি বা ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যোগদান করার বিকল্প ছিল।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Sam-Jinnah

ফিল্ড মার্শাল স্যাম মানেকশ (বাম) 1947 সালে এমএ জিন্নাহ ছাড়া অন্য কেউই পাক সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে বলেছিলেন। (ভারতীয় আর্মি আর্কাইভস, উইকিমিডিয়া কমন্স)

ভারতের প্রাক্তন সেনাপ্রধান জেনারেল স্যাম মানেকশ। দেশের এই প্রথম ফিল্ড মার্শাল পরিচিত ছিলেন স্যাম বাহাদুর নামেও। তাঁর জীবনের ওপর একটি বায়োপিক তৈরি হয়েছে। যা, ১ ডিসেম্বর সারা দেশজুড়ে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে। মানেকশ ছিলেন একজন সত্যিকারের কিংবদন্তি। জিন্নাহর প্রস্তাবে ভারতের ফিল্ড মার্শাল স্যাম মানেকশ যদি পাকিস্তান বাহিনীতে যোগ দিতেন তাহলে ইতিহাস খানিক বদলে যেতে পারত।

Advertisment

স্যাম বাহাদুর ভারতীয় সেনাবাহিনীর ইতিহাসে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নাম যাকে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগদানের প্রস্তাব দিয়েছিলেন জিন্নাহ। মানেকশই প্রথম সেনা অফিসার যিনি পাঁচতারা র‌্যাঙ্কের ফিল্ড মার্শাল পদে উন্নীত হন। মানেকশ দীর্ঘ ৪ দশক ভারতীয় সেনাবাহিনীতে একাধিক গুরুদায়িত্ব সামলেছেন। ভারতের হয়ে পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন তিনি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, ১৯৪৭ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ, ১৯৬২ সালের ভারত-চিন যুদ্ধ, ১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ এবং ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ মোট ৫টি যুদ্ধের গুরুদায়িত্ব তাঁর কাঁধে গিয়ে পড়ে।

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর প্রায় ৯৩ হাজার পাকিস্তানি সেনা ভারতীয় সেনাবাহিনীর সামনে অস্ত্র নামিয়ে রাখে। এই দিনটিকে ভারতের শৌর্যের ইতিহাসে একটি সোনালি দিন বলে মনে করা হয়। ভারতকে সেই ঐতিহাসিক জয় এনে দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন মানেকশ। ২০০৮ সালের ২৭ জুন তামিলনাড়ুর ওয়েলিংটনের সেনা হাসপাতালে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান মানেকশ।

মানেকশ জাতে ছিলেন পার্সি। জন্মেছিলেন অমৃতসরে। নৈনিতালের শেরউড কলেজে লেখাপড়া। সেখানে বেড়ে ওঠা। পঞ্জাবিতে ছিলেন সাবলীল। শিখ সৈন্যদের সঙ্গে পঞ্জাবিতে কথা বলতেন। চাকরির প্রথমদিকে তিনি শিখ ব্যাটালিয়নে যুক্ত ছিলেন। সেনাবাহিনীতে কান পাতলে শোনা যায়, তাঁর পুরনো ফ্রন্টিয়ার ফোর্স ব্যাটালিয়নের অনেক সহযোদ্ধা হামেশাই স্যামের কাছে সাহায্য চাইতেন। স্যামও অনায়াসে তাঁদের সাহায্য করতেন।

স্যামের নামের সঙ্গে ‘বাহাদুর’ শব্দটা জুড়ে গিয়েছিল। যদিও তাঁর নামের সঙ্গে বাহাদুর শব্দটা ছিল না। কিন্তু, তিনি পরিচিত হয়ে উঠেছিলেন স্যাম বাহাদুর নামে। তাঁকে এই ‘বাহাদুর’ উপাধি দিয়েছিলেন 8 গোর্খা রাইফেলসের জওয়ানরা। সাম মানেকশ ছিলেন গোর্খা রেজিমেন্টের কর্নেল। স্যামকে ফ্রন্টিয়ার ফোর্স রেজিমেন্টের একটি ব্যাটালিয়নে অফিসার হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল।

দেশভাগের পর, তাঁর রেজিমেন্ট চলে যায় পাকিস্তানে। এরপর কিছু সময়ের জন্য, স্যামকে ১৬তম পঞ্জাব রেজিমেন্টে দায়িত্ব দেওয়া হয়। পরে, লেফটেন্যান্ট কর্নেল হিসেবে তাঁকে পঞ্চম গোর্খা রাইফেলসের তৃতীয় ব্যাটালিয়নের কমান্ডের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তিনি ১৯৪৮-৪৯ সালের কাশ্মীর যুদ্ধে সেনা সদর দফতরে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছিলেন। ১৯৫৩ সালে স্যাম মানেকশ চতুর্থ গোর্খা রাইফেলসের কর্নেল পদে দায়িত্ব পান।

ফিল্ড মার্শাল স্যাম মানেকশ। এটি একটি বাস্তব জীবনের চরিত্র যিনি ভারতীয় সেনাবাহিনীর ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ নাম। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের সময় পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা মহম্মদ আলী জিন্নাহ এবং অন্য একজন তাকে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে বলেছিলেন। ভারতীয় সেনাবাহিনীর আর্কাইভস থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ফিল্ড মার্শাল স্যাম বাহাদুর শুধু জিন্নাহর প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান শুধু করেননি বরং পাকিস্তানকে দু' টুকরো করতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। স্যাম বাহাদুরের বায়োপিক ১ লা ডিসেম্বর শুক্রবার প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এই নামটি এখন সবার মুখে মুখে।

মিডিয়া রিপোর্ট অনুসারে, স্যাম মানেকশ ১৯১৪ সালের ৩রা এপ্রিল পাঞ্জাবের অমৃতসরে একটি পার্সি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। স্যাম তার প্রাথমিক পড়াশোনা অমৃতসরে করেছিলেন। তিনি দেরাদুনের ইন্ডিয়ান মিলিটারি একাডেমির প্রথম ব্যাচের ছাত্র ছিলেন। স্যাম ছিলেন দেশের প্রথম ফিল্ড মার্শাল এবং ১৯৭৩ সালে ফিল্ড মার্শাল উপাধি পান। ১৯৭১ সালের যুদ্ধে পাকিস্তানকে পরাজিত করে পাকিস্তানকে ভাগ করে নতুন দেশ বাংলাদেশ সৃষ্টির কৃতিত্ব শুধু স্যামের কাছেই যায়। স্যামের সেনাবাহিনীর কর্মজীবন প্রায় ৪ দশক বিস্তৃত। তিনি ৫টি যুদ্ধে অংশ নেন।

১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ দাসত্ব থেকে স্বাধীনতা লাভের পর, ভারতীয় উপমহাদেশের স্থলভাগ ছাড়াও আরও অনেক কিছু বিভক্ত হয়েছিল। রেলওয়ে থেকে সরকারি কোষাগার, সিভিল সার্ভিস থেকে সরকারি সম্পত্তি, চেয়ার-টেবিল সবকিছুই ভাগ হয়ে গিয়েছিল দুই উদীয়মান দেশের মধ্যে। এমনকি প্রায় ৪ লাখ সৈন্য নিয়ে গঠিত ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনীও বিভক্ত হয়ে পড়ে। প্রায় ২লাখ ৬০ হাজার সেনা থাকে ভারতের হাতে বাকিরা পাকিস্তানে বদলি হন।

কান পাতলে শোনা যায়, মহম্মদ আলী জিন্নাহ নিজেই মানেকশকে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগদানের জন্য অনুরোধ করেছিলেন।
জিন্নাহর সঙ্গে একমত হলে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে দ্রুত পদোন্নতি ঘটত তাঁর সেকথা ঠিকই, কিন্তু স্যাম ভারতে থাকতে পছন্দ করেছিলেন'। ফলস্বরূপ মানেকশকে প্রথমে খুব সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য ১৬ তম পাঞ্জাব রেজিমেন্টে স্থানান্তর করা হয়েছিল। পরে লেফটেন্যান্ট কর্নেল হিসেবে পঞ্চম গোর্খা রাইফেলে বদলি হন। বহু বছর পরে, অবসর গ্রহণের পর, যখন ফিল্ড মার্শাল মানেকশকে ১৯৪৭ সালে তার সিদ্ধান্ত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, তখন তিনি মজা করে উত্তর দিয়েছিলেন, 'জিন্নাহ আমাকে ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে বলেছিলেন। আমি যদি এটা করতাম, তাহলে তারা ভারতকে পরাজিত করতে পারত'।

Sam Manekshaw
Advertisment