ব্রিটিশ আদালতের ছাড়পত্র পেলেই উইকিলিকস প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান আসাঞ্জেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্য়র্পণ করা হবে। বৃহস্পতিবার ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রসচিব সাজিদ জাভিদ জানিয়েছেন তিনি এ সম্পর্কিত একটি নির্দেশিকায় স্বাক্ষর করেছেন। গুপ্তচরবৃত্তি ও হ্য়াকিংয়ে অভিযুক্ত আসাঞ্জেকে আমেরিকায় প্রত্য়র্পণের জন্য় সে দেশের অনুরোধের ভিত্তিতেই এই নির্দেশিকা বলে জানিয়েছেন জাভিদ।
বিবিসি রেডিওয় কথা বলার সময়ে জাভিদ জানিয়েছেন, জুলিয়ান আসাঞ্জকে আমেরিকায় গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগের সম্মুখীন হতে হবে কি না তা স্থির করবে আদালত। আসাঞ্জের প্রত্য়র্পণ সংক্রান্ত শুনানি হওয়ার কথা আগামী শুক্রবার। এ বিষয়ক সিদ্ধান্ত ঘোষিত হতে আরও এক মাস লাগবে বলে মনে করা হচ্ছে।
২০১২ সালে থেকে লন্ডনে অবস্থিত ইকুয়েডরের দূতাবাসে ছিলেন জুলিয়ান আসাঞ্জ। সুইডেনে এক যৌন লাঞ্ছনার ঘটনায় অভিযুক্ত হওয়ার পর সে দেশ থেকে প্রত্য়র্পণ এড়িয়ে যখন তিনি পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন, সে সময়েই তাঁকে আশ্রয় দেয় ইকুয়েডর। এপ্রিল মাসে তাঁর উপর থেকে ইকুয়েডর রক্ষা কবচ তুলে নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আসাঞ্জকে গ্রেফতার করে ব্রিটিশ পুলিশ।
দু মাস আগে মূলত লেবার পার্টি ও তার সহযোগীদের মোট ৭০ জন ব্রিটিশ পার্লামেন্টেরিয়ান সাজিদ জাভিদকে চিঠি লিখে তাঁকে যৌন হেনস্থায় লাঞ্ছিতদের পাশে দাঁড়ানোর অনুরোধ করেন, এবং সুইডেনে ওঠা অভিযোগের যথাযথ তদন্ত সুনিশ্চিত করতে বলেন। তবে সুইডেনের তরফ থেকে সে দেশে আসাঞ্জের প্রত্য়র্পণের পরিকল্পনা ধাক্কা খায় সুইডেনের এক আদালত তাঁকে আটক রাখার বিরুদ্ধে নির্দেশ দেয়।
বর্তমানে উইকিলিকসের অন্য়তম প্রতিষ্ঠাতা লন্ডনের বেলমার্শ জেলে ৫০ সপ্তাহের সাজা খাটছেন। ২০১২ সালে ব্রিটেনে জামিন এড়ানোর জন্য় তাঁর এই শাস্তি।
বাকস্বাধীনতার আইকন হিসেবে আসাঞ্জের পাশে সবসময়েই থেকেছেন তাঁর সমর্থকেরা। তাঁরা মনে করেন সুপারপাওয়ারের বিভিন্ন কুকীর্তি ফাঁস করে ক্ষমতাধরদের বিপাকে ফেলেছেন তিনি। এই সমর্থকদের আশঙ্কা আমেরিকায় ফেরত পাঠানো হলে আসাঞ্জকে তাঁর কাজকর্মের জন্য় শাস্তি দেওয়া হবে।
আমেরিকা কেন আসাঞ্জকে চায়
সেনাবাহিনীর প্রাক্তন ইন্টেলিজেন্স অ্য়ানালিস্ট চেলসি ম্য়ানিং- তৎকালীন সময়ে ব্র্য়াডলি ম্য়ানিং নামে যিনি পরিচিত ছিলেন, এবং জুলিয়ান আসাঞ্জের বিরুদ্ধে অভিযোগ, ২০১০ সালে মার্কিন প্রতিরক্ষাবাহিনীর কম্পিউটারে থাকা গোপন তথ্য হাতিয়েছিলেন তাঁরা।
৭০০০০০ নথি, ভিডিও, কূটনৈতিক কেবল এবং যুদ্ধের হিসাব উইকিলিকসকে সরবরাহ করার দায়ে ২০১৩ সালে এক কোর্ট মার্শালে ম্য়ানিংয়েকে অপরাধী সাব্য়স্ত করা হয়। ইরাকে ইন্টেলিজেনস অ্য়ানালিস্ট হিসেবে কাজ করার সময়ে তিনি এ কাজ করেছিলেন।
প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ২০১৭ সালে চেলসি ম্য়ানিংয়ের ৩৫ বছরের কারাবাসের নির্দেশ মাফ করে দিয়েছিলেন, কিন্তু গ্র্য়ান্ড জুরির সামনে বয়ান দিতে অস্বীকার করায় তাঁকে জেলে পাঠানো হয়েছে। আমেরিকায় নথিবদ্ধ করা নেই এমন শত শত খুনের ঘটনার কথা ফাঁস করা হয়েছে উইকিলিকসে। বিচার করে সাজা ঘোষণা করা হলে, আসাঞ্জের পাঁচ বছর পর্যন্ত জেল হতে পারে।
সুইডেনের মামলা
২০১০ সালে দুজন সুইডিশ মহিলা আসাঞ্জের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থা ও ধর্ষণের অভিযোগ আনেন। এব্য়াপারে তদন্ত শুরু হওয়ার পর তাঁর বিরুদ্ধে ইউরোপিয় গ্রেফতারি নির্দেশ জারি করে হয়। সুইডেন তাঁকে আমেরিকায় প্রত্য়র্পণ করতে পারে, এই আশঙ্কায় লন্ডনের ইকুয়েডের দূতাবাসে আশ্রয় নেন আসাঞ্জ। ২০১৫ সালে আসাঞ্জের বিরুদ্ধে তদন্ত বন্ধ করে দেয় সুইডেন, ২০১৭ সালে তাঁর বিরুদ্ধে আনা ধর্ষণের তদন্তও কোনও অভিযোগ না এনেই বন্ধ করে দেওয়া হয়।
তবে এ বছর ১১ এপ্রিল আসাঞ্জ গ্রেফতার হওয়ার পর সুইডেনের আইনজীবীরা জানান, লাঞ্ছিতাদের আইনজীবী মামলা ফের শুরু করার দাবি জানিয়েছেন। ধর্ষণ মামলার সীমাবদ্ধতা ১০ বছর পর্যন্ত, ফলে ২০২০ সালের অগাস্ট মাস পর্যন্ত আসাঞ্জকে দোষী সাব্য়স্ত করা যাবে।
আসাঞ্জের সামনে কী অপেক্ষা করে রয়েছে?
জাভিদ যদিও আসাঞ্জের প্রত্য়র্পণের নির্দেশে স্বাক্ষর করে দিয়েছেন, তাহলেও একটি দীর্ঘ আইনি যুদ্ধের এটি একটি প্রাথমিক ধাপ মাত্র। আসাঞ্জ যদি এ মামলা এখানে হেরেও যান তাহলে সে নির্দেশকে সম্ভবত চ্য়ালেঞ্জ জানাবেন তাঁর আইনজীবীরা।