ইরাক-আমেরিকা যুদ্ধের সময় যে সব অস্ত্রর নাম বেশি শোনা যেত, তার অন্যতম ছিল স্কাড এবং পেট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র। ইউক্রেন-রাশিয় যুদ্ধে এবার তেমনই শোনা যাচ্ছে বেশ কিছু অস্ত্রের নাম। যার অন্যতম কামিকাজে ড্রোন। এই ড্রোনের সাহায্যে রুশ ক্ষেপণাস্ত্রকে লক্ষ্যভ্রষ্ট করে দিচ্ছে ইউক্রেন। রুশ ক্ষেপণাস্ত্রের গায়ে গুলি লাগার পর ওই সব ক্ষেপণাস্ত্র যে জায়গায় পড়ার কথা ছিল, তার বদলে অন্য জায়গায় গিয়ে পড়ছে। ফলে, আরও বড় ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে ইউক্রেন।
কী এই কামিকাজে ড্রোন
জাপানি শব্দ কামিকাজের অর্থ হল আত্মঘাতী। অর্থ থেকেই পরিষ্কার যে এই ড্রোন একবার ব্যবহার করা যায়। ক্ষেপণাস্ত্রকে গুলি করার পর নিজেই ক্ষেপণাস্ত্রের আকার নিয়ে শত্রুপক্ষের ওপর আছড়ে পড়ে এই ড্রোন। মার্কিন অন্যান্য ড্রোনগুলোর চেয়েও এর দাম কম। মানববিহীন এই ড্রোনই ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এই ড্রোনকে অনেকে সুইচব্লেড ড্রোনও বলে। দেখতে আস্ত্র বিমানের মত এই ড্রোনে বিস্ফোরক ভরা থাকে। তাই, আছড়ে পড়ার পর বিপক্ষে যুদ্ধের ট্যাংকই থাকুক বা সেনাবাহিনীর জওয়ান। নিমেষে বড়সড় বিস্ফোরণে তা ধ্বংস হয়ে যায়।
কারিগরি বিশেষত্ব
ওজন মেরেকেটে সাড়ে পাঁচ পাউন্ড। ড্রোনের মুখের সাইজটাও ছোট। সাত মাইল উঁচুতে উড়তে পারে এই ড্রোন। এর ডানাগুলো ব্লেডের মত দেখতে। এই ড্রোন তৈরি করেছে এয়ারোভায়রনমেন্ট ইংক নামে এক সংস্থা। দীর্ঘদিন ধরে মার্কিন কমান্ডোদের এই সংস্থা অস্ত্র সরবরাহ করছে। ২০১০-এ এই ড্রোনকে তালিবানের বিরুদ্ধে ব্যবহারের জন্য গোপনে আফগানিস্তানে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। মার্কিন সেনা আধিকারিকদের মতে, এই ড্রোন উড়ন্ত শটগান হিসেবেও ব্যবহার করা যায়। কোনও গাড়িতে হামলা চালালে এই ড্রোনে পাখনায় চালকের ক্ষতি হতে পারে। কিন্তু, যাত্রীদের ক্ষতির সম্ভাবনা নেই বলেই নির্মাতা সংস্থাটি জানিয়েছে।
আরও পড়ুন- ভূমিকম্পে জাপানের পরমাণু কেন্দ্রে বিপর্যয়ের আশঙ্কা
আফগানিস্তানের যুদ্ধে ব্যবহার
আফগানিস্তানে মার্কিন বাহিনী তালিবানের বিরুদ্ধে লড়াই চালানোর সময় ১০ জন সাধারণ আফগান নিহত হয়েছিল। যার মধ্যে বেশ কিছু শিশুও ছিল। তার পরই এই ড্রোনের গুরুত্ব আরও বেশি করে উপলব্ধি করেন আমেরিকার সেনাবাহিনীর জওয়ানরা। একেবারে রকেট লঞ্চারের মত এই ড্রোন ছোড়া হয়। এই ড্রোনে ক্যামেরা লাগানো আছে। যার সাহায্যে নিশানাকে চিহ্নিত করা যায়। ঘণ্টায় ৬৩টি ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংসের ক্ষমতা এই ড্রোন রাখে।
এই ড্রোন কি শুধু আমেরিকার আছে
এমন ধরনের ড্রোন কিন্তু, শুধু আমেরিকার কাছেই নেই। রাশিয়া, ইজরায়েল, চিন, ইরান এমনকী তুরস্কের কাছেও এমন উন্নত ধরনের ড্রোন আছে। যেমন অতি সম্প্রতি ইরাকের মার্কিন দূতাবাসে হামলার জন্য এমন ড্রোনেরই ব্যবহার করেছে ইরানের মদতপুষ্ট জিহাদিরা। গত বছর আজারবাইজানও তুরস্কে তৈরি এমন ড্রোন আর্মেনিয়ার সেনার বিরুদ্ধে ব্যবহার করেছিল। তারও আগে ২০১৯ সালে ইরানের মদতপুষ্ট হাউতির বিদ্রোহীরা সৌদি আরবের তেল শোধনাগারে এমন ধরনের ড্রোনের সাহায্যেই হামলা চালিয়েছিল। এমনকী, ইউক্রেনে ধারাবাহিক হামলা চালানোর আগে রাশিয়াও এমন ধরনের ড্রোনই কিয়েভের বিরুদ্ধে ব্যবহার করেছে। ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির জেলেনস্কির আবেগঘন বক্তৃতার পর এবার সেই প্রাণঘাতী ড্রোনই ইউক্রেন সেনার হাতে তুলে দিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
Read story in English