সিপিআই গত শুক্রবার আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে ১৫ জন প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে। এই তালিকায় নাম নেই জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের প্রাক্তন সভাপতি কানহাইয়া কুমারের। দলের তরফে জানানো হয়েছে, বিহারে রাষ্ট্রীয় জনতা দলের সঙ্গে নির্বাচনী বোঝাপড়ার আলোচনা চলছে। সেই আলোচনার পরে কানহাইয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
অথচ, বেগুসরাই কেন্দ্রে, যেখানে সিপিআই এবং আর জে ডি-র নির্বাচনী আঁতাতের বিষয়টি এখনও ধোঁয়াশায় ঢাকা, কানহাইয়া প্রার্থী হলে সিপিআই-এর জয় একরকম নিশ্চিতই। বিহারের রাজ্য শাখার তরফে কানহাইয়ার নাম কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে পাঠানো হলেও এখনও তা অনুমোদিত হয়নি।
আরও পড়ুন: প্রসঙ্গ নীরব মোদী ও একটি ভিডিও
গত লোকসভা নির্বাচনে বেগুসরাই কেন্দ্র থেকে জিতেছিলেন বিজেপি-র ভোলা সিং, গত বছরের অক্টোবরে যাঁর মৃত্যুতে আসনটি এখন শূন্য। নওয়াদা কেন্দ্রের বিজেপি সাংসদ এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গিরিরাজ সিং-এর নাম বেগুসরাই কেন্দ্রের জন্য আলোচনায় রয়েছে। গিরিরাজ অবশ্য এই কেন্দ্রে দাঁড়ানোর ব্যাপারে এখনও কোন উৎসাহ দেখান নি। প্রাক্তন সাংবাদিক অভিরঞ্জন কুমার এবং বিজেপি নেতা রজনীশের নামও আলোচনায় রয়েছে।
বামপন্থী দলগুলি বিহারে বিরোধীদের মহাজোটে অংশ নেবে কিনা সে বিষয়েও এখনও কোন সিদ্ধান্ত হয়নি।
সিপিআই-এর বিহার শাখার সচিব সত্যনারায়ণ সিং বলেছেন, "কানহাইয়া গত চার পাঁচ মাসে বেগুসরাই কেন্দ্রের অন্তর্ভুক্ত বিধানসভা কেন্দ্রগুলিতে ঘুরেছেন। একটি ছোট সভাতেও তাঁর বক্তব্য শুনতে আট হাজার মানুষের ভিড় হয়। আর জে ডি-র সঙ্গে জোট হোক আর না-ই হোক, কানহাইয়াই ওই কেন্দ্রে আমাদের যোগ্যতম প্রার্থী। যদি জোট হয়ও, কানহাইয়া ওখানে প্রার্থী হলে বিজেপি-র হার নিশ্চিত। জোট না হলেও কানহাইয়া আরজেডি-র মুসলিম ভোট কাটবেন।"
আরও পড়ুন: সবুজায়ন মানেই বনভূমি নয়, পরিসংখ্যান যাই বলুক
বেগুসরাই এবং সংলগ্ন বালিয়া অঞ্চলকে একসময় 'লেনিনগ্রাড' বা 'মিনি মস্কো' বলা হত এলাকায় সিপিআই-এর নিরঙ্কুশ প্রভাবের কারণে। বেগুসরাইয়ের বিহাত গ্রামের উচ্চবর্ণ ভূমিহার কানহাইয়া স্বাভাবিকভাবেই এই কেন্দ্রে প্রার্থী হওয়ার দাবিদার।
এই কেন্দ্রে ভূমিহারদের সাড়ে তিন লক্ষের বেশি ভোট আছে। মুসলিম ভোট আড়াই লক্ষ। ধানুক-কূর্মীদের দু'লাখ, যাদবদের ১.৭৫ লাখ, কুশওয়াহাদের প্রায় এক লাখ। এনডিএ আশা করবে ভূমিহার ভোট বিভাজন হবে, এবং ধানুক-কূর্মী ভোট তাদের দিকে আসবে। উপেন্দ্র কুশওয়াহার নেতৃত্বাধীন আরএলএসপি মহাজোটে যোগ দেওয়ায় কুশওয়াহা ভোটও ভাগ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
সিপিআই এই কেন্দ্র থেকে মাত্র দু'বার জিতেছে, ১৯৬৭ এবং ১৯৯১-তে। কিন্তু দ্বিতীয় বা তৃতীয় স্থানে বরাবর থেকেছে। বিহারে নীতিশ কুমারের নেতৃত্বে এনডিএ-র প্রভাব বাড়ার পর থেকে এই কেন্দ্রে কংগ্রেস এবং বামেদের রাশ আলগা হয়েছে ক্রমে। জনতা দল (ইউ)-এর মোনাজির হাসান এই কেন্দ্র থেকে ২০০৯ সালে জিতলেও, 'নরেন্দ্র মোদী ঢেউয়ের' দৌলতে বিজেপির ভোলা সিং ২০১৪ সালে আসনটি ছিনিয়ে নিতে সক্ষম হন। সেবার ৩.৬৯ লক্ষ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় স্থানে ছিলেন আরজেডি-র তনভির হাসান, এবং ১.৯১ লক্ষ ভোট পেয়ে তৃতীয় স্থানে সিপিআই-এর রাজেন্দ্র সিং।
আরও পড়ুন: রাফাল নথি ও একটি বিতর্কিত আইন
যদিও কানহাইয়ার কট্টর মোদী-বিরোধী অবস্থান মুসলিমদের মধ্যে তাঁর জনপ্রিয়তা বাড়িয়েছে বলে অনেকে মনে করেন, মুঙ্গেরের গিরিরাজ সিং বহিরাগত হয়েও বিজেপি-র তরফে কঠিন লড়াইয়ের মুখে ফেলতে পারেন কানহাইয়াকে। বামেরা যদি মহাজোটে যোগ না দেয়, তাহলে আরজেডি প্রার্থী হতে পারেন তনভির হাসান। সে ক্ষেত্রে ত্রিমুখী লড়াই হবে।
এক অভিজ্ঞ বিজেপি নেতার কথায়, "এনডিএ প্রার্থী ঘোষণা করলেই কানহাইয়া নিয়ে মাতামাতি কমে যাবে। তবে আরজেডি এবং সিপিআই জোট করলে লড়াই হবে।"
আরজেডি-র এক নেতা আবার বলেছেন, কানহাইয়ার বিরুদ্ধে যেহেতু দেশদ্রোহিতার মামলা আছে, তাঁর প্রার্থী হওয়া নিয়ে দলে অস্বস্তি আছে, "আমরা জানি, এই মামলা রাজনৈতিক হিংসার ফল। কিন্তু যেভাবে সিপিআই একজন ব্যক্তিকেই তুলে ধরছে, সেটাও ঠিক নয়। আমাদের নেতা তেজস্বীর ব্যাপারে কখনও কোনও ভাল কথা বলেন নি কানহাইয়া। যাই হোক, জোট হয় কিনা সে ব্যাপারে আপাতত অপেক্ষা করা যাক।"